থেরাপির পরে ছোট্ট শিশু ও ডক্টর সংযুক্তা দে।
শেষ আপডেট: 6th November 2024 10:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের সাধারণ দরিদ্র পরিবারে জন্ম। ছ'মাসের মাথায় মা লক্ষ করেন, হাত-পা নাড়াতে সমস্যা হচ্ছে তার। পা তুলতেই পারছে না প্রায়, হাতও নাড়াচ্ছে খুব ধীরে। মাথা তুলতেও সমস্যা, বসা বা হামাগুড়ি দেওয়া দূরের কথা। প্রথমে স্থানীয় শিশুরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও, চিকিৎসকের পরামর্শে কলকাতায় এসে দেখায় তার পরিবার। নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষার পরে ধরা পড়ে, স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফি-তে আক্রান্ত সে।
জিনঘটিত এই বিরল রোগের চিকিৎসা ভারতে প্রায় নেই বললেই চলে। নেই তার মূল কারণ হল, খরচ। এই অসুখের চিকিৎসায় যে জিন থেরাপি প্রয়োজন, তার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ জোলজেনসমা-র দাম ১৬ কোটি টাকা! সেই ওষুধই পেল পূর্ব মেদিনীপুরের দীন মহম্মদ। সৌজন্যে পিয়ারলেস হাসপাতাল।
প্রসঙ্গত, এই খরচবহুল জিন থেরাপি ভারতে বিনামূল্যে দেওয়া হত এতদিন। যদিও দীর্ঘ ডকুমেন্টেশনের কারণে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন রোগীই এই চিকিৎসা পেয়েছে এতদিন। সেটাও এবার বন্ধ হয়ে গেছে ৩১ জুলাই থেকে। সেই সময়ের মধ্যেই দীন মহম্মদের নাম নথিভুক্ত করা হয়েছিল চিকিৎসা পাওয়ার জন্য। শেষমেশ সম্পন্ন হল সেই থেরাপি। খাতায়-কলমে সেই শেষ রোগী হিসেবে পেল এই থেরাপি। তার বয়স এখন ১৬ মাস।
পিয়ারলেস হাসপাতাল সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে তাদের বিরল রোগের ক্লিনিকে শিশুটিকে নিয়ে আসে তার পরিবার। মা দিলওয়ারা সুলতানা জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরে প্রচুর নিয়মকানুনের পালা পার করে, বিনামূল্যে জিন থেরাপির প্রক্রিয়া শুরু হয়। সোমবারই ১৬ মাসের ওই শিশুকে এসএমএ-র জিন থেরাপি দেওয়া হয়েছে। আপাতত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রয়েছে সে।
দেখুন ভিডিও।
পিয়ারলেসের চিকিৎসক সংযুক্তা দে এই থেরাপির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। তিনি জানালেন, এখনও পর্যন্ত পূর্ব ভারতে মাত্র তিনটি শিশু এই থেরাপি পেয়েছে। তাদের মধ্যে দু’জন পিয়ারলেস থেকে এবং একজন এনআরএস থেকে। এখনও তিনটি শিশু এই থেরাপি পাওয়ার যোগ্য হিসেবে কাগজপত্র জমা দিয়েছে। তবে সরকারি ভাবে তারা আর পাবে না এই থেরাপি।
ডক্টর সংযুক্তা দে-র কথায়, 'এই থেরাপি সবচেয়ে ভাল কাজ করে দু’বছরের নীচে প্রয়োগ করলে। ৭ থেকে ১৫ মাসের তিনটি বাচ্চা এই থেরাপি পাওয়ার লাইনে রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি ওদের জন্য ক্রাউড ফান্ডিং করে টাকা জোগাড় করার।’
প্রসঙ্গত, বিদেশে জিন থেরাপি চলছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। আমেরিকার এফডিএ (ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)-র অনুমোদন পেলে তবেই এই থেরাপি করা যায়। এই অনুমোদন আর কোনও দেশেরই নেই। সেই কারণে এই এসএমএ রোগের জিন থেরাপির প্রয়োজনীয় ওষুধটি গ্লোবাল ম্যানেজড অ্যাকসেস প্রোগ্রাম (জিএমএপি)-এর মাধ্যমে বিশ্বের ৩৬টি দেশে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা নোভারটিস।
এ দেশে এই এসএমএ-র চিকিৎসার বিষয়টি যে সংস্থার হাত ধরে হয়, তা হল 'কিওর এসএমএ ফাউন্ডেশন অব ইন্ডিয়া'। সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা মৌমিতা ঘোষ বলেন, ‘এই বাচ্চাটিকে বিনামূল্যে থেরাপি দিয়ে বাঁচিয়ে তুলতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ফার্মাসি কোম্পানি থেকে পিয়ারলেস হাসপাতাল-- সকলেই এই কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে সরকার এই ওষুধের দ্রুত অনুমোদন দিলে সাধারণ পরিবারের বহু বাচ্চার প্রাণ বাঁচতে পারে। পাশাপাশি জিন থেরাপির গবেষণা নিয়েও আরও ভাবনাচিন্তা করতে হবে সরকারকে।'
পিয়ারলেস হাসপাতালের এমডি রবীন্দ্র পাই বলেন, 'এসএমএ যথেষ্ট জটিল এবং চ্যালেঞ্জিং একটি রোগ। এর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ইকোসিস্টেম রয়েছে পিয়ারলেসে। হাসপাতালের চিকিৎসকরাও এই জটিল রোগের থেরাপির জন্য যথেষ্ট কঠোর পরিশ্রম করেন এবং সর্বোত্তম চিকিৎসা পায় সংশ্লিষ্ট শিশু।'
সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বিশ্বে এখন এসএমএ অসুখ বহন করার হার প্রতি ৩৫-এ একজন। ফলে থ্যালাসেমিয়ার পরে দ্বিতীয় মারাত্মক জেনেটিক ব্যাধিতে পরিণত হতে পারে এই অসুখ৷ ফলে এই নিয়ে আলাদা ফান্ডিং পরিকল্পনা খুবই জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।