Advertisement
কুণাল-সোমেন (গ্রাফিক্স- শুভম সেনগুপ্ত)
Advertisement
শেষ আপডেট: 20 April 2025 10:18
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে বেজে ৩৭ মিনিটে কুণাল ঘোষই প্রথমে ব্রেক করেছিলেন, শুক্রবার দিলীপ ঘোষের বিয়ে (dilip ghosh marriage)। কুণালের আগে বাংলার কোনও অগ্রগণ্য সংবাদমাধ্যম সেই খবর প্রকাশ করতে পারেনি। অনেকেই হয়তো জানেন না, বিয়ের খবর ব্রেক করায় কুণালের এহেন ক্যারিশ্মা এই প্রথম বার নয়। ১৯৯৮ সালের কথা। তখন প্যারিসে বিশ্বকাপ ফুটবল চলছে। কুণাল তখন একটি বাংলা দৈনিকে সাংবাদিকতা করেন। তিনিই প্রথম এ খবর ব্রেক করেছিলেন যে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র (Somen Mitra) বিয়ে করতে চলেছেন। এবং বিয়ের আগেই সোমেন দত্তক নিয়ে নিয়েছেন শিখা সাহার (মিত্র) নাবালক ছেলেকে।
দিলীপ ঘোষকে নিয়ে যেমন অনেকের ধারণা ছিল যে, ঘোষবাবু চিরকুমার থেকে যাবেন, সোমেন মিত্র তথা ‘ছোড়দাকে’ নিয়েও ধারণা ছিল তেমনই। তাই, বৃহস্পতিবার কুণালের (Kunal Ghosh) ট্যুইট যেমন বিস্ময় ও কৌতূহলের ঝড় বইয়ে দিয়েছিল, ২৭ বছর আগে তাঁর লেখা প্রতিবেদনও তেমনই হইচই ফেলে দিয়েছিল বাংলা জুড়ে। তবে এখানেই শেষ নয়। সোমেনের বিয়ে ছিল রহস্যের চাদরে মোড়া। আসল কিস্সা সেটাই। সোমেন মিত্র যে বিয়ে করেছেন, সেই খবর কুণালও জানতে পেরেছিলেন রেজিস্ট্রি ম্যারেজের এক বছর পর।
কী সেই কিস্সা, সেটাই এই প্রতিবেদনের আসল গল্প। ১৯৭২ সালে প্রথমবার শিয়ালদহ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ভোটে জিতেছিলেন সোমেন মিত্র। তাঁর সেই বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যেই কংগ্রেসের এক মাতব্বর নেতা ছিলেন। তাঁর বাড়িতে যাতায়াত ছিল সোমেনের। সোমেনের স্ত্রী শিখা ছিলেন সেই নেতারই মেয়ে। সোমেনের সঙ্গে যখন শিখার আলাপ, ততদিনে তিনি (শিখা) বিবাহিত।
এহেন শিখার সঙ্গে সোমেন মিত্র রেজিস্ট্রি বিয়ে করেছিলেন ১৯৯৭ সালে। বাংলার অন্যতম সিভিল কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান সেনবোর কর্ণধার ছিলেন কাজল সেনগুপ্ত। সোমেন-শিখার রেজিস্ট্রি অতিশয় গোপনীয়তা রক্ষা করে তাঁর বাড়িতেই হয়েছিল। ‘ছোড়দা’ তা পাঁচকান করেননি। এমনকি সোমেন মিত্রর শিষ্য বলে পরিচিত মধ্য কলকাতার কংগ্রেস নেতা বাদল ভট্টাচার্য বা অগ্রজ নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যকেও সে কথা জানাননি সোমেন।
ব্যাপারটা ঢাকা চাপাই ছিল। শিখাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিলেও সোমেন মিত্র কিন্তু তখনও তাঁকে আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়িতে নিয়ে যাননি। কাউকে জানানওনি। শিখা হয়তো এতেই বিপন্ন বোধ করছিলেন। গোল বাঁধল ১৯৯৮ সালে। সোমেন মিত্র তখন বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে প্যারিসে গিয়েছেন। একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই হোটেলে তাঁর সহযাত্রীর ঘরে ঢুকে সোমেন বলেন, তোমার কাছে সিগারেট আছে? সেই সহযাত্রী ছিলেন সোমেন মিত্রর তুলনায় বয়সে অনেক ছোট। ‘ছোড়দা’-কে দেখেই রাজনীতি শিখেছেন। সোমেন মিত্র তাঁর কাছে সিগারেট চাইছেন দেখে তিনি শুরুতে ঘাবড়ে যান। তার পর প্যাকেটটা তাঁর দিকে এগিয়ে দেন। সেই প্যাকেট থেকে একটার পর একটা সিগারেট বের করে ফুঁকতে থাকেন সোমেন। মুখে শুধু একটাই কথা বলেন, ‘বাড়িতে বিদ্রোহ ঘটে গেছে’।
আসলে সেই সময়েই শিখা মিত্র সাংবাদিক কুণাল ঘোষকে ডেকে জানিয়ে দেন, সোমেন মিত্রকে তিনি বিয়ে করতে চলেছেন। তাঁর ছেলেকে দত্তকও নিয়ে নিয়েছেন সোমেন। তবে তার আগে যে কাজল সেনগুপ্তর বাড়িতে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে, সেটা সম্ভবত কুণালকে বলেননি শিখা।
সংবাদপত্রে সেই খবর পড়েই তেলেবেগুনে চটে যান সোমেন মিত্রর বাবা। তাঁর তখন ৮৫ বছর বয়স। বাদল ভট্টাচার্যকে ডেকে পারলে তাঁকে দু-ঘা দেন। কারণ, সোমেনের বাবা মনে করেছিলেন, বাদল ভট্টাচার্য সবটা জানতেন।
ওদিকে সোমেন মিত্র তখন বেমালুম বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। প্রদীপ ভট্টাচার্য-বাদল ভট্টাচার্যদের বলেন, বিয়ে টিয়ের কোনও ব্যাপার নেই। আবার শিখা মিত্রর সঙ্গে যখন রেজিস্ট্রি করে ফেলেছেন, ছাড়বার প্রশ্নও নেই। এমন অবস্থায় সোমেন বোঝানোর চেষ্টা করেন, শিখার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক রয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিয়েটা করবেন না। কিন্তু প্রদীপ ভট্টাচার্যরা তাঁকে বলেন, না না সম্পর্ক যখন তৈরি হয়েছে বিয়েটা করে ফেলতে হবে। সোমেন মিত্রর বাবাকে বোঝাতে যান ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তা পল্টু দাস। তাঁরাই ৯৯ সালে তাঁরা একটি দিন স্থির করেন বিয়ের জন্য।
কিন্তু এক পাত্র-পাত্রীর মধ্যে ক’বার বিয়ে হবে! তাই কাজল সেনগুপ্তর বাড়িতে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হিসাবে যে মহিলাকে ডেকে আনা হয়েছিল, তাঁর খোঁজ পড়ে। তাঁকে বোঝানো হয়, আপনাকে একটু নাটক করতে হবে। প্রদীপ-বাদল যে সময়ে পৌঁছবে তাঁর আগেই আপনাকে পৌঁছতে হবে সোমেনের বাড়িতে। তার পর প্রদীপ-বাদল ঢুকলে বলা হবে, শুভ মুহূর্ত ডেকে রেজিস্ট্রি বিয়েটা কিছুক্ষণ আগেই হয়ে গেছে। এবার তিনি (রেজিস্ট্রার) বেরিয়ে যাচ্ছেন। সেই গুগলিটা নাকি বাদল ভট্টাচার্যরা ধরতেই পারেননি।
তবে এর পরেও শিখা মিত্রকে আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়িতে তোলেননি সোমেন মিত্র। শিখা তখনও শিয়ালদহে ‘এ কে পয়েন্ট’ নামে আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। পরে ২০০১ সালের জানুয়ারি মাসে হৃদরোগে আক্রান্ত হন সোমেন মিত্র। দিল্লিতে ফর্টিস হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ নরেশ ত্রেহানের অধীনে এক মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় ফিরে আর আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়িতে যাননি সোমেন মিত্র। সোজা গিয়ে ওঠেন ‘এ কে পয়েন্টে’ শিখার ফ্ল্যাটে। সেই থেকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে থাকা শুরু করেন সোমেন-শিখা। বাকিটা অনেকেরই জানা।
Advertisement
Advertisement