প্রয়াত কলকাতার বাসিন্দা বিতান অধিকারী।
শেষ আপডেট: 23 April 2025 00:02
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পহেলগামে জঙ্গি হামলার (Pahalgam Terror Attack) ঘটনায় কলকাতার এক ব্যক্তি নিহত বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। পরিবার নিয়ে কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন বিতান অধিকারী নামে ওই ব্যক্তি। জঙ্গিদের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে বিতানের। তাঁর স্ত্রী ও সন্তান ঠিক আছেন। স্ত্রী সোহিনীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সূত্রের খবর, বিতান অধিকারী কলকাতার বৈষ্ণবঘাটা রোডে থাকতেন। ঘটনার খবর পেয়ে তাঁর বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে কাশ্মীরের পহেলগামের বৈসারণ উপত্যকায় জঙ্গিদের গুলিতে প্রথমে গুরুতর জখম হয়েছিলেন বিতান। তাঁকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
জঙ্গি হামলায় নিহত ও আহতের তালিকা
স্ত্রী সোহিনী অধিকারী এবং তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে সপরিবারে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছিলেন বিতান। এ দিন অনন্তনাগের বৈসরণ উপত্যকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন তাঁরা। বেলা আড়াইটে নাগাদ, একেবারে সাধারণ পোশাকে ওই এলাকায় এসে পর্যটকদের উপর গুলি ছুড়তে শুরু করেছিল জঙ্গিরা। স্ত্রী ও ছেলে কোনওভাবে প্রাণে বাঁচলেও, বিতান নিহত হন এই হামলায়।
এই নারকীয় জঙ্গিহানায় এখনও পর্যন্ত ২৭ জন পর্যটকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। মঙ্গলবার দুপুরে সশস্ত্র জঙ্গিরা হোটেলে ঢুকে বেছে বেছে পর্যটকদের উপর হামলা চালায়। হতাহতদের মধ্যে বেশিরভাগই উত্তর ভারতের পর্যটক বলে জানা গেছিল। কিন্তু পরে জানা যায়, বাঙালি পর্যটকরাও সেখানে ছিলেন। বিতান তাঁদেরই একজন।
এই মর্মান্তিক ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বর্তমানে সৌদি আরব সফরে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক টুইটে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী টুইটে লিখেছেন, “পহেলগামে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা করছি। যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি সমবেদনা রইল। আহতরা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেই প্রার্থনা করি। ক্ষতিগ্রস্তদের সবরকম সাহায্য করা হচ্ছে।”
প্রধানমন্ত্রী আরও লিখেছেন, “এই জঘন্য ঘটনার পিছনে যারা আছে, তারা কোনওভাবেই ছাড় পাবে না। আমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই অটুট এবং আরও দৃঢ় হবে।”
সূত্রের খবর, জঙ্গিরা সেনাবাহিনীর পোশাক পরে বৈসারণ উপত্যকায় ঢোকে এবং হঠাৎ করেই পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। ওই এলাকা কেবলমাত্র হেঁটে বা ঘোড়ার পিঠে করেই পৌঁছনো যায়। জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার স্থানীয় শাখা ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
হামলার পর দ্রুত সেখানে পৌঁছায় নিরাপত্তা বাহিনী। আহতদের উদ্ধার করে নিচে নামানো হয়, স্থানীয়রা ঘোড়ায় চাপিয়ে অনেককে নামাতে সাহায্য করেন। পরবর্তীতে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে আহতদের সরানো হয়।
এই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন। বৈঠকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব, গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তারা এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন। অমিত শাহ জানিয়েছেন, তিনি শিগগিরই শ্রীনগর যাচ্ছেন এবং সেখানেই একটি জরুরি নিরাপত্তা পর্যালোচনা বৈঠক করবেন।
এক টুইটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেখেন, “পাহালগামে পর্যটকদের উপর জঙ্গি হামলার ঘটনায় অত্যন্ত মর্মাহত। নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা এই কাপুরুষোচিত হামলা চালিয়েছে, তাদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানিয়েছি এবং সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছি।”
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই জানান, ঘটনাস্থলে চরম আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। একজন মহিলা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর স্বামীকে বাঁচানোর জন্য সাহায্য চান। আরেকজন বলেন, এক বন্দুকবাজ তাঁকে বলে, “তুমি মুসলিম নও,” এবং গুলি চালায় তাঁর স্বামীর দিকে। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, জঙ্গিদের খুঁজে বের করার কাজ শুরু হয়েছে। গোটা অঞ্চল জুড়ে তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী।