উমঙ্গ গালাডা (Umang Galada)। কলকাতা (Kolkata) নিবাসী ১২ বছরের এই ছোট্ট ছেলের মৃত্যুর পর দান করা লিভারে (Liver Donate) নতুন জীবন ফিরে পেল মুম্বইয়ের ৮ বছরের মেয়ে।
উমঙ্গ গালাডা
শেষ আপডেট: 22 May 2025 19:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: উমঙ্গ গালাডা (Umang Galada)। কলকাতা (Kolkata) নিবাসী ১২ বছরের এই ছোট্ট ছেলের মৃত্যুর পর সিএমআরআই হাসপাতালে দান করা লিভারে (Liver Donate) নতুন জীবন ফিরে পেল মুম্বইয়ের ৮ বছরের মেয়ে।
গালাডা পরিবার কলকাতার আলিপুরের বাসিন্দা। তাঁরা জানিয়েছেন, উমঙ্গের ছোট্টবেলাতেই কিডনির অসুখ ধরা পড়ে। ডায়ালিসিস করেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। আশার আলো ছিল একমাত্র কিডনি প্রতিস্থাপন। উমঙ্গের মা জ্যোতি গালাডা নিজের একটি কিডনি ছেলেকে দান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাতেও কোনও সুরাহা করতে পারেননি চিকিৎসকরা।
গত ২৮ মার্চ একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন জ্যোতি ও তাঁর সন্তান। সেখানে দু'জনেরই সফল অস্ত্রোপচার করা হয়। উমঙ্গ প্রাথমিকভাবে চিকিৎসায় সাড়া দিয়েছিল। কিন্তু ক'দিন পর থেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। হঠৎই মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে। অক্সিজেন পৌঁছচ্ছিল না। যদিও হৃৎপিণ্ড সচল ছিল তার। কিন্তু, ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকে উমঙ্গ। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার চিকিৎসকরা উমঙ্গের ব্রেন ডেথ হয়েছে বলে জানিয়ে দেন।
ছেলেকে আর কোনও দিনই ফেরত পাবেন না, এ কথা মেনে নিয়ে উমঙ্গের বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেন, ছেলেকে বাঁচানো না গেলেও শরীরের কোনও অঙ্গে যদি অন্য কারও প্রাণ বাঁচানো যায়, তাহলে তাই করা হোক। এর পরই ছেলের মরণোত্তর দেহদানের কথা ভাবেন তাঁরা।
গালাডা দম্পতি তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানালে রিজিয়োনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন বলে, উমঙ্গের কেবলমাত্র লিভারটা ও চোখ দুটোই ভাল রয়েছে। ছাড়া আর কোনও অঙ্গই প্রতিস্থাপনযোগ্য নয়।
সেই মতোই মুম্বইয়ে ৮ বছরের এক ছোট্ট মেয়ের শরীরে ওই লিভার প্রতিস্থাপন করার সিদ্ধান্ত হয়। গত মঙ্গলবার উমঙ্গের লিভার সংগ্রহ করে সেদিনই বিকেলে বিমানে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়। পাশাপাশি তার চোখ দুটিও দান করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তার আগে উমঙ্গকে মরণোত্তর 'গার্ড অব অনার' দেয় একবালপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতাল। ১২ বছরের এই ছোট্ট ছেলেটিই বাংলার সবচেয়ে কম বয়সি মরণোত্তর অঙ্গদানকারী (Youngest Deceased Organ Donor) হিসেবে নজির সৃষ্টি করল।
সিএমআরআই হাসপাতালের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় অঙ্গদানের ঘটনা। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশেষ দিকটি হল, এই ছেলেটিই একসময়ে অঙ্গ প্রাপক হিসেবে এসেছিল, কিন্তু মৃত্যুর পরে সে নিজেই হল অঙ্গদাতা।
হাসপাতালের ইউনিট হেড সোমব্রত রায় বলেন, 'এই বাচ্চাটির অঙ্গদান আমাদের হাসপাতালের ইতিহাসে এক অলৌকিক আলো এনে দিয়েছে। এই বীর ছেলেটি ও তার মা-বাবা মানবতার এক অনন্য নিদর্শন রেখে গেলেন। কঠিনতম দুঃসময়েও তারা সাহস ও সহানুভূতির যে দৃষ্টান্ত রাখলেন, তা আমাদের সকলকে অনুপ্রাণিত করে। অপরকে আলোকিত করতে শেখায়।'