মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জুনিয়র ডাক্তার
শেষ আপডেট: 21st October 2024 20:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: নরমে-গরমে শেষ হল জুনিয়র ডাক্তার-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক। কখনও জুনিয়র ডাক্তারদের 'বাবু', কখনও 'বাবা' সম্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সব দাবি যে মানা সম্ভব নয় তাও আজ বৈঠকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
কী কী হল নবান্নের বৈঠকে?
দেবাশিস, অনিকেত, কিঞ্জলরা নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তাঁদের দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। প্রসঙ্গ আসে ডায়মন্ড হারবারে এদিনের ঘটনার কথাও। ডায়মন্ড হারবার প্রসঙ্গ উঠতেই মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমি টিভিতে দেখেছি সেখানে একজনকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে। এটা কি 'থ্রেট কালচার' নয়? এখানেই থামেননি মমতা। আর্জি কর থেকে কেন ৪৭ জনকে সাসপেন্ড করা হল সেই প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। এরপর অনিকেত মাহাতো মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, 'যাঁদের চিহ্নিত করে সাসপেন্ড করা হয়েছে তাঁরা 'নটরিয়াস ক্রিমিনাল'। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, 'সরকারকে না জানিয়ে এভাবে কি কাউকে সাসপেন্ড করা যায়?' বৈঠকে উপস্থিত জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, 'কলেজ কাউন্সিল রয়েছে। সেই কাউন্সিল তদন্ত করে তাঁদের সাসপেন্ড করেছে'। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, 'কলেজ কাউন্সিল সরকারকে না জানিয়ে এসব করতে পারে না। পরক্ষণেই আরজি করের প্রিন্সিপাল কিছু বলতে চান। মমতা তাঁকে থামিয়ে দেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে এও বলেন, 'শেষ তিন বছরে যাঁরা পাশ করে গেছেন, তাঁদের খাতা খতিয়ে দেখা হোক।' পাল্টা জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, 'এই ৪৭ জনের মধ্যে অনেক অভিযুক্তের খাতা খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, অনেকেই ১০ নম্বরও পাননি, অথচ পদক পেয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। হাউস স্টাফও হয়েছেন।'
এদিনের আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। তিনি জানান, 'কোর্টে ওই মহিলা আইনজীবী দাবি করেছেন রাজ্যের হাসাপাতালে তুলোও পাওয়া যায় না।' তখনই তিনি নবান্ন সভাঘরে উপস্থিত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষদের প্রশ্ন করেন, 'এটা কি ঠিক? এতে রাজ্যের মুখ পুড়ল।'
এর পরই জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন তোলার আবেদন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার কথা তুলে তিনি বলেন, 'পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সরকার কাজ করবে কী করে?' পাল্টা জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, 'স্টেট টাস্ক ফোর্সের মতো কলেজেও কমিটি গড়তে হবে'। মমতাকে প্রশ্ন করেন, 'কলেজস্তরে র্যাগিংয়ের অভিযোগ এলে কে খতিয়ে দেখবে? অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি নাকি টাস্ক ফোর্স?'
ততক্ষণে বৈঠক প্রায় দু'ঘণ্টার কাছাকাছি পৌঁছেছে। যদিও নবান্নের তরফে ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়ে যে মেল করা হয়েছিল তাতে বৈঠকের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ৪৫ মিনিট।
নির্ধারিত সময় অনেকটা পেরনোর পর মুখ্যমন্ত্রী জানান, 'আমার কাছে একটি পরিবারের (জয়নগর কাণ্ড) আসার কথা। তাঁদেরও মেয়ে মারা গিয়েছে। আমায় যেতে হবে। আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে।'
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'নিজেরা নিজেদের ইগো নিয়ে থেকে গেলে কিন্তু সলিউশন আসবে না। পরিস্থিতি এবার স্বাভাবিক করুন।' পাল্টা আন্দোলনকারী এক মহিলা ডাক্তার জানান, 'আন্দোলন আপনার থেকেই শিখেছি।’ উত্তরে মমতা বলেন, 'মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে ২১ দিন ধর্না করেছিলাম। সিঙ্গুর নিয়ে ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ব্যক্তিগত ভাবে আমায় ভালবাসতেন বলে এসেছিলেন।'
এরপরই জুনিয়র ডাক্তারদের তিনি বলেন, 'তোমাদের ভালবাসি। আলোচনায় ফাঁক রাখা হয়নি। মন খুলে কথা বলেছ।'