ভাস্কর গুপ্ত। ফাইল চিত্র।
শেষ আপডেট: 5th March 2025 12:44
দ্য ওয়াল ব্যুরো: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভাস্কর গুপ্তকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার থেকেই তিনি অসুস্থ অনুভব করছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁর রক্তচাপ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়, যা ১৭০-৯০ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। চিকিৎসকদের আশঙ্কা, এতে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় তাঁকে বাইপাসের ধারের এক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আজই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা তাঁর সঙ্গে আলোচনার জন্য বিকেল ৪টা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল। তাঁরা জানিয়েছিলেন, যদি উপাচার্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁদের সঙ্গে কথা না বলেন, তবে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। কিন্তু এরই মাঝে উপাচার্যের অসুস্থতার খবরে নতুন মোড় নিল পরিস্থিতি।
সোমবারই ভাস্কর গুপ্তের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস (Dr. Arindam Biswas) দ্য ওয়াল-কে জানান, 'ভাস্করবাবুর একটা বুক ধড়ফড়ের ব্যাপার হচ্ছিল। বোঝাই যায় একটা চিন্তার মধ্যে উনি ছিলেন। ওঁর যে রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা মজার বিষয় নয়, কারণ এর থেকে চার-পাঁচ বছর আগে ওঁর একটা স্ট্রোক হয়। যাকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় থ্যালামিক হেমারেজ, অর্থাৎ যে ধমনিগুলো থ্যালামাসে রক্ত সাপ্লাই করছ, সেগুলো ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোয় এবং ব্রেইন হেমারেজ হয়। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছেন ভাস্করবাবু। এই অবস্থায় রোগীর আরও খারাপ হতে পারত। তবে তিনি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু যাদবপুরের এখন যা পরিস্থিতি শুধু সেই ঘটনা নয়, বেশ কয়েকদিন ধরেই তাঁর চিন্তা ভাবনা বেড়েছিল, যে কারণে রক্তচাপ বৃদ্ধি হয়েছে। যেটা ওঁর জন্য ভাল নয়। এটা নিয়ন্ত্রন করা সময় সাপেক্ষ। আচমকা কিছু করা যায় না এক্ষেত্রে, না হলে আবারও একটা স্ট্রোক হতে পারে। সেই জন্যে আমি স্পষ্ট করে বলেছি দশ দিনের বিশ্রাম প্রয়োজন তাঁর। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। হয় তো রক্ত চাপ স্বাভাবিক থাকবে, কিন্তু পরে আবার তা বেড়ে যেতে পারে। যে কারণে এই বিশ্রামের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দরকারে বুধবার একটা চেকআপ হবে। এবং সবথেকে বড় কথা উত্তেজিত হয়ে পড়েন এমন কোনও ঘটনা ঘটলে তা থেকে ভাস্করবাবুকে বিরত থাকতে হবে।'
চিকিৎসক আরও জানান, 'অনেক ব্যঙ্গ, কুমন্তব্য আসছে। কোনও নেতা, কোনও ছাত্র নেতা তাঁরা যা পারছেন ওঁর সম্পর্কে বলছেন। আমি ভাস্করবাবুকে বলেছি কানে তুলো দিয়ে থাকুন, আর টিভি দেখতে বারণ করে দিয়েছি। আগে রক্তচাপ স্বাভাবিক হোক, নিজে খানিকটা মনে জোর পান, তারপর স্বাভাবিক কাজে ফিরুন, সেই পরামর্শ দিয়েছি।'
এর পরে আজ, বুধবার, তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে উপাচার্যের চিকিৎসক জানান, তাঁক রক্তচাপ ওঠানামা করছিল এবং ওষুধেও তা নিয়ন্ত্রণে আসছিল না। কয়েক বছর আগে একবার তিনি সেরিব্রাল অ্যাটাকের শিকার হয়েছিলেন, তাই আমরা দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন।
অন্যদিকে, উপাচার্যের অসুস্থতার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন জারি রয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের সামনে পড়ুয়ারা অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। শনিবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হওয়ার সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত। অভিযোগ, সেই সময়ে উপাচার্য আহত হন এবং দুই ছাত্রও গুরুতর চোট পান। এক পড়ুয়ার অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি তাঁকে চাপা দিয়েছে, অন্য পড়ুয়ার পায়ের উপর দিয়ে গাড়ির চাকা চলে গিয়েছে।
এরপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার মধ্যে পড়েন উপাচার্যও। অভিযোগ, তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় তাঁর পাঞ্জাবিও ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করছিলেন।