শেষ আপডেট: 21st August 2024 13:10
সুমন বটব্যাল
কদিন আগেও যাঁকে নাকি বাউন্সার নিয়ে ঘুরতে দেখা যেত, সেই তিনি আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষর ঘাড়ের উপর মামলার পর মামলা! চিকিৎসক পড়ুয়া খুনের ঘটনায় গত ৬দিন ধরে আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে জেরা করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআইয়ের পাশাপাশি নবান্নও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সিট গঠন করেছে। পুলিশের তরফেও তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
কদিন আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরজি কর প্রসঙ্গে সরাসরি সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ এনেছিলেন। শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, সন্দীপের বাড়বাড়ন্তে নবান্নের প্রশ্রয় রয়েছে। যে কারণে অতীতে তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কোনও পদক্ষেপ করেনি। তবে সন্দীপবাবুর বিরুদ্ধে সিবিআই তৎপর হতেই রাজ্যের সিট গঠন এবং পুলিশের তরফে পুরনো মামলা দায়ের হওয়ায় কৌতূহল তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
বিরোধীদের অনেকেই এই ঘটনার সঙ্গে বীরভূমের তৃণমূলের একদা দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের মিল খুঁজে পাচ্ছেন।
কী রকম সেই মিল?
২০২২ এর ২২ অগস্ট জন্মাষ্টমীর দিন বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে সিবিআই। কাকতালীয়ভাবে তারপরেই ওই বছরের ডিসেম্বরে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে দুবরাজপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূলকর্মী শিবঠাকুর মণ্ডল। লিখিত অভিযোগ দায়ের করে পুলিশকে তিনি জানান যে, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি যোগ নিয়ে সন্দেহের বশে তাঁকে মাধধর, এমনকী গলা টিপেও খুনের চেষ্টা করেছিলেন অনুব্রত মণ্ডল!
বীরভূমের দাপুটে তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূল কর্মীর এই অভিযোগ দায়ের এবং পুলিশি তৎপরতা নিয়ে সে সময় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। গরু পাচার মামলায় অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে ইডি তৎপর হতেই রাজ্য পুলিশের এই তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। যদিও অনুব্রতকে হেফাজতে নিলেও তাঁর দিল্লি যাত্রা বেশি দিন আটকে রাখতে পারেনি রাজ্য পুলিশ। আরজিকরের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ক্ষেত্রেও পুলিশের তৎপরতার নেপথ্যে এবারও সেই অনুব্রত কাণ্ডের ছায়া দেখছেন বিরোধীরা। তাঁদের মতে, যেভাবে সন্দীপ ঘোষকে প্রতিদিন গড়ে ১২-১৩ ঘণ্টা করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পোড় খাওয়া গোয়েন্দারা জেরা শুরু করেছেন তাতে তাঁকে কিছুটা 'স্বস্তি' দিতেই এই পুলিশি তৎপরতা।
আরজি করে ছাত্রী খুনের ঘটনায় অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে প্রকৃত ঘটনা আড়ালের অভিযোগ আগেই এনেছিলেন ডাক্তারি পড়ুয়ারা এবং নির্যাতিতার পরিবার। সূত্রের খবর, তদন্তে নেমে এ ব্যাপারে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে।
প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে গত বৃহস্পতিবার হাজিরা দেননি অধ্যক্ষ। পরিবর্তে পুলিশি নিরাপত্তা চেয়ে শুক্রবার তিনি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। এরপরই রাস্তা থেকে অধ্যক্ষকে তুলে শুক্রবার দুপুরে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তদন্তকারীরা। ছাত্রীকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অধ্যক্ষ কেন বৃহস্পতিবার তদন্তকারীদের হাজিরা এড়িয়ে গেলেন তদন্তে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে নির্যাতিতার মা জানিয়েছেন, সেদিন হাসপাতালের সহকারী সুপার টেলিফোন করে মেয়ে 'সুইসাইড' করেছে বলে জানিয়েছিলেন। সিবিআই সূত্রের খবর, ওই সহকারী সুপার জেরার মুখে জানিয়েছেন, অধ্যক্ষর নির্দেশেই তিনি একথা বলতে বাধ্য হয়েছিলেন মেয়েটির পরিবারকে। সূত্রের খবর, আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে এমনই একাধিক বিস্ফোরক তথ্য উঠে এসেছে তদন্তকারীদের হাতে। সেই সূত্রেই ধারাবাহিকভাবে জেরা চলছে।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, সময় যত গড়াচ্ছে আরজি কর কাণ্ডে সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারের সম্ভাবনাও ততই জোরালো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধীদের অভিযোগ সত্যি করে সিবিআই এর আগেই সন্দীপবাবুকে লালবাজার হেফাজতে নেয় কিনা, তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে।