শেষ আপডেট: 19th September 2024 20:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এই ঘটনা যে কোনও হিন্দি সিনেমার মেলো ড্রামাকে হার মানাতে পারে। মা-মরা ছোট্ট ছেলে। বাবার দ্বিতীয় বিয়ে। সৎ মায়ের অত্যারচার সবই আছে এই গল্পে। অবশেষে ৫২ বছর পরে বাড়ি ফিরছেন বাবার হাতে বিক্রি হয়ে যাওয়া সেই ছেলে। পুলিশ প্রশাসন ও হ্যাম রেডিওর সাহায্যে ৬২ বছরের রাজকুমার ফিরে পেলেন নিজের অধিকার।
সালটা ১৯৭২। সুন্দরগড়ের রাজকুমার ভুঁইয়ার বয়স তখন ১০। মা মারা গিয়েছিলেন অনেক আগে। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মা রাজকুমারকে পছন্দ করতেন না। তাই অত্যাচার চলত ছোটো ছেলের উপর। দুষ্টু স্বভাবের রাজকুমার সেসব সহ্য করেই বাবা, সৎ মা ভাইয়ের সঙ্গে থাকত। রাজকুমারকে নিয়ে প্রায় অশান্তি লেগেই থাকত সংসারে। ছেলের দুষ্টুমি কমাতে রাগে আছাড় মেরে কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন বাবা। এর পরেই ৮ বছরের ছেলের পিঠে পর পর কোপ মেরেছিলেন সৎ মা। এতেও ছেলের দুষ্টুমি কমেনি। এই ঘটনার মাসখানেক পর রাজকুমারকে দিল্লিতে বিক্রি করে দেন তাঁর বাবা। তিনবার বিক্রি করা হয় তাঁকে। প্রতিবারই তাঁর দুষ্টুমিতে অতিষ্ঠ হয়ে নিস্তার পেতে চাইতেন মালিকরা। শেষ মালিক তাঁকে রাস্তায় ছেড়ে দেন। দু-চারদিন দিল্লি অলিগলিতে ঘোরাঘুরির পর দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রাজকুমার। ঠাঁই হয় দিল্লির একটি সরকারি হোমে।
এভাবে হোমেই কেটে গেছে ৬২ বছরের রাজকুমারের জীবন। হোমে থেকে অপরাধীদের কাছ থেকে বাংলা শিখেছেন। ১৫ আগে দিল্লির হোম থেকে হাওড়ার একটি হোমে পাঠানো হয় তাঁকে। তখন থেকে এখানেই থাকেন রাজকুমার। এভাবেই দিন কাটছিল তার। সপ্তাহখানেক আগে হাওড়ার হোম কর্তৃপক্ষ রাজকুমারের পরিবারের খোঁজ পেতে হ্যাম রেডিওর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসকে ফোন করেন। সমস্ত বিষয়টি জানান। অম্বরীশবাবুরা তাঁদের যোগাযোগ থেকে রাজকুমারের পরিবারকে খুঁজে বের করেন।
অম্বরীশবাবুরা জানিয়েছে, হোমে গিয়ে তাঁরা রাজকুমারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। বাংলা ভাষায় কথা বললেও কথায় ওড়িয়া ভাষার টান ছিল রাজকুমারের। তখনই তাঁরা ওড়িশায় খোঁজখবর শুরু করেন। স্থানীয় ইউটিউবার এক মহিলা বিশেষ উদ্যোগী হন। সুন্দরগড়ের সেই গ্রামে বর্তমানে থাকেন রাজকুমারের ভাই সুরঞ্জন ভুঁইয়া। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে কিছুতেই দাদা বেঁচে আছে বলে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সুরঞ্জন। অবশেষে ভিডিও কলে রাজকুমারের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। সেখানে রাজকুমারের জামা খুলিয়ে পিঠের দাগ দেখানো হয় সুরঞ্জনকে। বাঁকা কোমর ও পিঠের কাস্তের কোপের দাগ দেখে দাদাকে অবশেষে চিনতে পেরে যান সুরঞ্জন। আবছা মনে থাকা ভাইয়ের মুখ দেখে চিনতে পারেন রাজকুমারও। তবে দাদা বাড়ি ফেরাতে চাননি সুরঞ্জন। কারণ সম্পত্তির ভাগ।
অম্বরীশবাবুরা জানিয়েছেন, সুরঞ্জন দাদাকে খোঁজাখুঁজি করেছিলেন। পরে রাজকুমারের ডেথ সার্টিফিকেটও বের করেন। সেই সার্টিফিকেট দেখিয়ে বাবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও ১০০ বিঘা চাষের জমির দখল নিয়েছেন। তাই দাদাকে নিতে অস্বীকার করছিলেন। অবশেষে রাজকুমারের অধিকার ফেরাতে সুন্দরগড়ের জেলা শাসক হিমগের থানার ওসির দ্বারস্থ হন। বিডিওকে জানালেন তিনি সুরঞ্জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। শেষে ভুল বুঝতে পারেন সুরঞ্জন রাজকুমারকে বাড়ি নিয়ে যাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। অম্বরীশবাবু বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশিদিন পর হারানো ব্যক্তিকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার রেকর্ড এটি।’