শেষ আপডেট: 6th March 2025 19:11
গত শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে (Jadavpur Univeristy) শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে (Bratya Basu) ঘিরে যে ঘটনা ঘটেছিল, তার রেশ এখনও কাটেনি। শাসকদলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya) মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে একাধিক ছবি এবং ভিডিও দেখিয়ে দাবি করেছিলেন, ব্রাত্যের গাড়ির তলায় আড়াআড়ি ভাবে পড়ে থাকা এক ছাত্রের ছবি দেখিয়ে বামেরা যে প্রচার করছে, তা সর্বৈব অসত্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করেছিল এসএফআই-ও (SFI)।
সাক্ষাৎকারটি দেখুন
ঘটনার দিন দফায় দফায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। ওয়েবকুপা-এসএফআই ধস্তাধস্তি, ব্রাত্যর গাড়ি ভাঙচুর, ছাত্রদের পিষে দেওয়া থেকে শুরু করে জল গড়িয়েছিল রাত অবধি। বাম ছাত্র সংগঠনের তরফে প্রতিবাদে যেমন থানার রাস্তা দখল হয়েছিল, তেমনই পাল্টা তৃণমূলের অরূপ বিশ্বাস, সায়নী ঘোষরা উপস্থিত হয়েছিল কার্যত সম্মুখ সমরে।
এর পরপরই কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করে রাজ্য-রাজনীতিতে। প্রথমত যে কথা বলা হচ্ছিল বা এখনও হচ্ছে তা হল, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তৃণমূলের সংগঠন দুর্বল, সেখানেই কেন ওয়েবকুপার বৈঠক ডাকা হল? হলেও শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগেই কেন তৃণমূল শিক্ষা সংগঠনের সদস্যরা বেরিয়ে এলেন! দ্বিতীয়ত, যেখানে ছাত্রদের ওপর 'হামলা'র প্রতিবাদে ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছেন, সেখানে তৃণমূলকে 'শক্তি প্রদর্শন' করতে রাজ্যের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদদের মাঠে নামাতে হল?
এহেন যাবতীয় প্রশ্নই দেবাংশু ভট্টাচার্যের কাছে রাখা হয়েছিল। দ্য ওয়ালকে তৃণমূলের তরুণ নেতা এক এক করে বলেন, "হ্যাঁ ঠিক, শিক্ষামন্ত্রী যতক্ষণ সেখানে ছিলেন, ততক্ষণ সকলের থাকা উচিত ছিল, এটা ঠিকই। তবে এটা নিয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কিন্তু, আমি মনে করি নেতৃত্বের ভরসায় বাকিরা আসেন। বাকিদের ভরসায় নেতৃত্বরা যান না। ব্রাত্য বসু ওয়েবকুপার চেয়ারম্যান, তিনি ডেকেছেন বলে মিটিংটা ওখানে হচ্ছে। যাঁরা এসেছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে এসেছিলেন। আর দ্বিতীয়ত, যেখানে সংগঠন দুর্বল সেখানে আমরা মিটিং করতে পারব না, এটা তো কোনও কথা নয়। তাহলে তো এগজিস্টিং জায়গায়তেই আমাদের থেকে যেতে হবে। নতুন জায়গা এক্সপ্লোর করতে পারব না। তাহলে তো বামেরা বাংলায় শূন্য, এই লজিক ধরে নিলে তো সিপিএম-এর বাংলা থেকেই উঠে যাওয়া উচিত।"
দেবাংশু জানান, "রইল বাকি কেন রাস্তায় নেতা, মন্ত্রীদের নামানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। আমি মুখপাত্র হিসেবে তো নিজের কোনও বক্তব্য রাখতে পারি না। তবে দলের নীতি-নির্ধারক কমিটি মনে করেছে সেখানে মন্ত্রী, সাংসদদের নামানো উচিত তাই নামিয়েছে। আমার মন হয় দল এটা ভেবেছে, সেখানে ছাত্রদের বিরুদ্ধে যদি ছাত্র-যুবদেরই নামানো হত, তাহলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারত। অল্পবয়স মানেই রক্ত গরম, উত্তেজিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।"
তবে পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন, শনিবারের বারবেলায় যাদবপুর ক্যাম্পাসের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ির ধাক্কায় ছাত্রের আহত হওয়ার ঘটনা যথেষ্ট ভ্রূকুঞ্চিত করেছে শাসক দলের। যদিও তাতে কান পাততে নারাজ দেবাংশু। স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, "গাড়ির সামনে আড়াআড়ি ইন্দ্রানুজ (আহত ছাত্র) শুয়ে, সেটা ফেক ছবি। ওরা বলছে ব্রাত্য বসুর গাড়ি তাঁকে পিষে দিয়ে চলে গেছে। পিষে দেওয়া শব্দটা ভয়ঙ্কর শব্দ। পিষে দিলে কখনও শুধু চোখে আর পাশে সেলাই পড়ে না। শিক্ষামন্ত্রীর গাড়িতে হামলা চলছিল সেই সময়। কুড়ি-পঁচিশজন ঘিরে রেখেছিল তাঁর গাড়ি। তখন যদি ব্রাত্য বসু ছাত্রদের বাবু রে, আমি নামব, সরে যা বললে তারা সরে যেত? এটা বিশ্বাস করা যায়? আর কোনও অপশন ছিল না। আমি আবারও বলছি, দায়িত্ব নিয়ে বলছি, উনি যা করেছেন সঠিক কাজ করেছেন।"