শেষ আপডেট: 27th March 2025 19:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এ বছর ভারত-চিন (India-China) কূটনৈতিক সম্পর্কের (diplomatic relations) ৭৫ বছর। গত বছর থেকে পালিত হচ্ছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) চিন ভ্রমণের শতবর্ষ। কলকাতায় চিনের কনস্যুলেট (Chinese Consulate of Kolkata) গুরুত্ব দিয়ে এই দুটি ঐতিহাসিক অধ্যায় উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেজিং (Beizing) এবং নয়া দিল্লিও (New Delhi) দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫ বছর পালনে উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি সুত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই উপলক্ষে চিন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভারত সফরে আসতে পারেন চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। সম্প্রতি ভারত-চিন সম্পর্কের উন্নতি নিয়ে অনেক কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে চিনের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, দু-দেশের সম্পর্ক হাতি ও ড্রাগনের যৌথ ব্যালের মতে।
দু-দেশের সম্পর্কের ৭৫ তম বর্ষ উদযাপনে চিন ও ভারতে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন হচ্ছে। আগেই শুরু হয়েছে কবিগুরুর চিন সফরের শর্তবর্ষ উদযাপন।
কলকাতা-সহ পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে এই উপলক্ষে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করতে চলেছে কলকাতার চিনা দূতাবাস। তারমধ্যে অন্যতম হল বিশ্বভারতীতে আন্তর্জাতিক মানের আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হবে। বিশ্বভারতী এবং সেখানকার চিনা ভবন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে অনুষ্ঠিত হবে এই আলোচনাচক্র। সেখানে চিনের শিক্ষাবিদ, গবেষক, ছাত্র মিলিয়ে কুড়িজন অংশ নেবেন। কবিগুরু চিন সফর করেছিলেন ১৯২৪-এ।
এই প্রসঙ্গে কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল সু ওয়ে (XU Wei) বলেন, লেখক, চিন্তক এবং শিল্পীর প্রসঙ্গ এলে আমরা রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করি। তিনি চিন-ভারত বন্ধুত্বের প্রতীক। যখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন আমি তাঁর ‘স্ট্রে বার্ডস’ (Stray Birds) এবং ‘দ্য ক্রিসেন্ট মুন’ (The Crescent Moon) পড়েছিলাম। তাঁর রচনা জ্ঞানে ভরপুর এবং তাঁর লেখা পড়েই আমাকে ভারতের রহস্যময়তা আকৃষ্ট করেছিল।
১৯২৪ সালে কবির চিন সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ৫০ দিনের সেই সফরের সময় বিভিন্ন পেশার খ্যাতনামাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং ভাষণ দেন, যা দুই দেশের মানুষের মধ্যে আদান-প্রদান এবং বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।’
দু-দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে নাগরিকদের যাতায়াত, মেলামেশার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে কনসাল জেনালেন বলেন, এই কাজে সংস্কৃতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রসঙ্গে দোল উৎসবের কথা উল্লেখ করেন সু ওয়ে। তিনি বলেন, এ বছর কলকাতায় আমি একটি অবিস্মরণীয় রংয়ের উৎসব কাটিয়েছি। এটি সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন, দোল, হলি হল রং, প্রেম এবং একতার একটি প্রাণবন্ত উদযাপন। এই শক্তিশালী উৎসব শীতের শেষ এবং বসন্তের আগমনের ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, বিশ্বের দুটি প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে, চিন এবং ভারত উভয়েই দীর্ঘ ইতিহাস এবং দুর্দান্ত সংস্কৃতির অধিকারী। আমাদের নাগরিকেরা গান এবং নাচের কৌশলে দক্ষ। তারা সমানভাবে জ্ঞানার্জনের প্রতি নিবেদিত। আমাদের প্রতিটি উন্নয়নযাত্রা অসংখ্য লেখক, চিন্তাবিদ এবং শিল্পীর জন্ম দিয়েছে। বলা যায়, চিন এবং ভারতের মধ্যে জনগণের যাতায়াত হাজার বছর বহমান একটি নদীর মতো, যা অসংখ্য স্পর্শকাতর গল্প এবং সাংস্কৃতিক লোককাহিনির জন্ম দিয়েছে।
২০২৪-এ কবিগুরুর চিন সফরের শতবর্ষ সে দেশে কীভাবে পালিত হচ্ছে তার তুলে ধরে কনসাল জেনারেল বলেন, গত বছর এপ্রিলে, বিশিষ্টজন এবং শিল্পী কবির চিন ভ্রমণের জায়গাগুলি সফর করেছেন। তাঁরা বেইজিং, সাংহাই এবং শেনজেন শহরে স্মরণ অনুষ্ঠানগুলিতে অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, রবি ঠাকুরের কবিতা পাঠ করেন, গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন। তিনি বলেন, এরফলে চিন-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। কবির চিন ভ্রমণের শতবর্ষ উপলক্ষে সে দেশের ছয়জন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডং ইউচেনের নেতৃত্বে ভারতে এসেছিলেন। তিনি কবির সমগ্র রচনার চিনা সংস্করণের সম্পাদনা করেছেন। নব্বুই বছর বয়সি এই চিনা পণ্ডিত গত বছর দুর্গাপুজোর সময় কলকাতা ঘুরে গিয়েছেন।
কলকাতার চিনা কনসাল জেনারেল বলেন, দু-দেশের বন্ধুত্বের আর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল, চিনে ভারতীয় মেডিক্যাল মিশন। ১৯৩৮ সালে চিনের সাধারণ জনগণের সবচেয়ে কঠিন সময়ে ড. দ্বারকানাথ কোটনিস, ড. বিজয়কুমার বসু এবং আরও তিনজন চিকিৎসক ভারতীয় মেডিক্যাল মিশন গঠন করেন। একটি আন্তর্জাতিক মনোভাব এবং চিনের জনগণের প্রতি গভীর ভালোবাসা নিয়ে তাঁরা আমাদের জাতীয় মুক্তির জন্য সহায়তা করেন। তাঁরা গোলাগুলির মধ্যে সাহসিকতার সঙ্গে আহতদের উদ্ধার করেন এবং অত্যন্ত কঠিন পরিবেশে তাঁদের চমৎকার চিকিৎসা দক্ষতা দিয়ে অনেক চিনা সৈন্য এবং সাধারণ মানুষের জীবন বাঁচান।
সু ওয়ে বলেন, দু-দেশের যুবাদের মধ্যে সুন্দর বোঝাপড়া গড়ে তুলতে গত বছর জুলাইয়ে পূর্ব ভারতের একটি যুব প্রতিনিধি দলকে চিনের ইউনান প্রদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করে কলকাতার কনসাল জেনারেলের অফিস। যাতে তারা চিনের সংস্কৃতি অনুভব করতে পারে। গত অক্টোবরে উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি সঙ্গীতশিল্পী দলকেও ইউনান প্রদেশ ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়। সেই সফরে দু-দেশের শিল্পীরা নানা সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের প্রসঙ্গে কনসাল জেনারেন সিনেমার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি জানান, জানুয়ারিতে কলকাতায় চিনা শিশু চলচ্চিত্র উৎসব বিশেষ সাড়া ফেলেছিল। তিনি বলেন, আমরা কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে আনন্দিত হব। তিনি পর্যটনের উপর জোর দেন। বলেন, দু-দেশের সাধারণ নাগরিকের যাতায়াত বাড়লে পর্যটনে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে। মজবুত হবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।