মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শেষ আপডেট: 29 June 2024 12:33
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিচারব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার সওয়াল করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল তথা বিজেপি ক্রমাগত বিচারব্যবস্থার উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছে। শনিবার ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে তেমন কোনও অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী করলেন না ঠিকই। তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সহ বিচারপতিদের ওই সম্মেলনে স্পষ্ট ভাবেই তাঁর আগ্রহের কথা জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিচারপতিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার কথাটা অন্যভাবে নেবেন না। আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমার স্বনির্বন্ধ অনুরোধ, বিচারব্যবস্থা যেন রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট না হয়। যেন খাঁটি থাকে। পুরোপুরি খাঁটি, সৎ এবং পবিত্র।”
বিচারপতিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে বাংলাতেও সাম্প্রতিক কালে বারবার বিতর্ক হয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে লোকসভা ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিজেপির টিকিটে তমলুক লোকসভা আসনে জিতেছেন প্রাক্তন বিচারপতি। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের আরও এক বিচারপতি অবসরের দিনে নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি অতীতে আরএসএসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আগামী দিনেও আরএসএসের হয়ে কাজ করতে চান।
বিচারপতিদের একাংশের এহেন রাজনৈতিক যোগ নিয়ে আগেই প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। এমনকি তিনি কটাক্ষ করে বলেছিলেন, বিজেপির বিচারালয়। এদিন উপযুক্ত স্থানেই সেই বৃহত্তর সমস্যার প্রসঙ্গ তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিচারপতিদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমি আপনাদের পরিবারেরই সদস্য। আইন পাশ করেছি। তিন-চারটে মামলাও লড়েছি। আমারও আইনজীবীর গাউন রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী যখন একথা বলছিলেন, তখন বেশ আমোদিতই দেখাচ্ছিল প্রধান বিচারপতিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগামী দিনেও আমার ফের মামলা লড়ার ইচ্ছা রয়েছে। নিজের জন্য নয়, মানুষের জন্য। কথা দিচ্ছি কোনও পারিশ্রমিক নেব না।
শনিবার ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমির একই মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী, দেশের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ছাড়া ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে বলছি না, কাউকে আঘাতও করতে চাই না। তবে এটা বলতে চাই, বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থাকলে মানুষ কোথায় যাবে?"
তাঁর কথায়, “বিচারব্যবস্থা আমাদের কাছে মন্দিরের মতো। সাংবিধানিক অধিকারের জন্য শেষ আশ্রয়। বিচারব্যবস্থা যদি আমাদের সাহায্য না করে কোথায় যাব। আমি আমাকে সাহায্য করার কথা বলছি না, মানুষকে সাহায্য করার কথা বলছি”।
পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কেন্দ্রে মোদী জমানায় গত দশ বছরে বিচারব্যবস্থার উপর রাজনৈতিক প্রভাবের কথা বারবার তুলেছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, স্বৈরাচারী শাসক বিচারব্যবস্থাকেও কুক্ষিগত করতে চাইছে। কিন্তু লোকসভা ভোটে ক্ষমতার পুনর্বিন্যাসের পর বিরোধী শিবিরের মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়েছে যে আগের পরিস্থিতি থাকবে না। বরং শুধরোনোর সম্ভাবনা রয়েছে। মমতার কথার মধ্যেও এদিন সেই ইঙ্গিতটাই পরিষ্কার।