বিতান ও সোহিনী।
শেষ আপডেট: 22 April 2025 23:51
কাশ্মীরে (Kashmir) বেড়াতে গিয়ে একটানা তরতাজা যুবকের যদি প্রাণ যায় তাঁর পরিবারের কী অবস্থা হতে পারে! মঙ্গলবার রাতে বৈষ্ণবঘাটায় বিতান অধিকারীর (Bitan Adhikary) বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল সেই ছবি। বাড়ির সামনে চেয়ার পেতে বসে শোকে কাতর তাঁর মামাতো দাদা। সংবাদমাধ্যমের সামনে নাগাড়ে বলে যাচ্ছেন ভাইয়ের কথা।
ফ্লোরিডায় কর্মরত ছিলেন বিতান। কদিন দেশে ফিরেছিলেন স্ত্রী সোহিনী ও সাড়ে তিন বছরের ছেলেকে নিয়ে ছুটি কাটাতে। মঙ্গলবার সন্ধেয় মৃত্যুর খবর পেতেই ভেঙে পড়েন অধিকারী পরিবার। বিতানের দাদা বলেন, 'ওরা একটা ব্যাপার নিয়ে নাজেহাল ছিল। এ জন্য ওঁর স্ত্রীর একটু মানসিক সমস্যা হয়ে গেছিল। ভাই বলল ওঁর মানসিক অবস্থা ভাল না, ওকে একটু কাশ্মীর থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।'
এমন শোকের সময়ে যা হয়। সব স্মৃতি ভিড় করে আসে চোখের সামনে। বিতানের দাদা বলেন, 'এর আগে আমি ভাই, ওঁর স্ত্রী সবাই মিলে রাজবাড়ি গিয়েছিলাম। বলল, পয়লা বৈশাখে কেন ঘরে খাব! আমরা রাজবাড়ি গিয়ে খাব। তার আগের দিন আমরা নৈহাটিতে বড় মা-র কাছে গেছিলাম। তার পর ১৭ এপ্রিল কাশ্মীরে বেড়াতে গেল।'
বিতান নাকি মামাতো দাদার খুব কাছের ছিল। এদিন তাঁর দাদা বলেন, 'ওঁর ইচ্ছা ছিল, আমাকেও নিয়ে যাওয়ার। আমি যাইনি। ভাবলাম ওঁরা তিন জনই ঘুরে আসুক। বললাম, তোরা যা, তোরা স্বামী-স্ত্রী মিলে আনন্দ কর। শুধু পইপই করে বলেছিলাম, ভাই ঘোড়ায় চড়িস না। শুনল না আমার কথা। সেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে উপরে উঠেছে।'
ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে এপ্রিলের ৮ তারিখ ফ্লোরিডা থেকে দেশে ফিরেছিলেন বিতান। এদিন তাঁর দাদা বলেন, 'আমি এয়ারপোর্ট থেকে ওদের নিয়ে এলাম। এখন ভেবে পাচ্ছি না, কীভাবে কী হবে! আজ সকালেও ওদের সঙ্গে কথা হল। দুপুরেও কথা হল।'
কথার মধ্যেই এদিন কান্নায় বারবার ভেঙে পড়েন বিতানের দাদা। বলেন, 'গত দু’বছর ধরে ওদের ল্যাজেগোবরে অবস্থা। আর্থিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। ওর বৃদ্ধ বাবা মা। ৮৫ বছর বয়স। ওই বাবা-মার জন্য টাকা পাঠায়। তাতেই চলে। আমি ওর মামার ছেলে হলেও ওর পরিবারকে আমি দেখি। এখন কী হবে এই মানুষ দুটোর।'
বিতানদের কাশ্মীর থেকে কলকাতায় ফেরার কথা ছিল ২৪ এপ্রিল। তার মাত্র ২ দিন আগে ঘটে গেল এই দুর্বিষহ ঘটনা। বৈষ্ণবঘাটা পাটুলির মধ্যবিত্ত পাড়া। পড়শিরা একে অপরকে চেনেন। বিতানের মৃত্যুর ঘটনায় গোটা এলাকায় যেন শোকের ছায়া। থমথমে পরিবেশ।
মঙ্গলবার দুপুরে কাশ্মীরের পহেলগামের (Pahalgam Terror Attack) বৈসারণ উপত্যকায় জঙ্গিরা হামলা চালায়। এখনও পর্যন্ত ২৭ জন পর্যটকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহতের সংখ্যা আরও বেশি।
জানা গেছে, পর্যটকদের উপর এলোপাথাড়ি হামলা চালায় জঙ্গিরা। প্রথমে জানা যায় হতাহতদের মধ্যে অধিকাংশই কর্নাটক, ওড়িশা ও উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। জানা যায়, বাঙালি পর্যটকরাও সেখানে ছিলেন। তাঁদের মধ্যেই প্রাণ গেল বিতান অধিকারীর। ভূস্বর্গ নিয়ে যা ফের উদ্বেগ তৈরি করে দিল বাঙালি জনমানসে।