বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও সঞ্জয় রায়।
শেষ আপডেট: 20th January 2025 17:21
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ঘটে যাওয়া নৃশংস ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় সাড়ে ৫ মাস পরে প্রধান ও একমাত্র অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই রায়ের পরে প্রতিক্রিয়া জানালেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য (Bikash Ranjan Bhattacharyay)। তাঁর মতে, 'মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে বিচারক যথাযথ সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।'
এদিন রায় ঘোষণার আগে নির্যাতিতার বাবা-মাকে হাতজোড় করে বসতে বলেছিলেন বিচারক। তারপর সব পক্ষ তাদের শেষ বক্তব্য আদালতে পেশ করার পরে রায় ঘোষণা করেন বিচারক। অপরাধীর আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেন তিনি। জরিমানা অনাদায়ে আরও পাঁচ মাসের জেল কাটতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, 'আমৃত্যু কারাদণ্ড যথেষ্ট কঠোর শাস্তি। মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে বিচারক সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োজন নেই। বিচারক সমস্ত তথ্য-প্রমাণ খতিয়ে দেখে এই রায় দিয়েছেন, যা স্বাভাবিক ও যথাযথ।'
গত শনিবার মামলার রায়দান করে সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। এদিন সাজা ঘোষণার আগে প্রথা মাফিক সঞ্জয়ের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। নিজেকে নির্দোষ বলে আজও দাবি করে ভাবলেশহীন সঞ্জয়। বলেন, ‘আমি কোনওটাই করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আগের দিনও বলেছি। আমি শুনেছি, অনেক কিছু নষ্ট করা হয়েছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিল। আমাকে মারধর করা হয়েছে। যার যা ইচ্ছা করছে। যেখানে খুশি সই করিয়ে নিচ্ছে।’
সঙ্গে সঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী জোরালো সওয়ালে বলেন, সঞ্জয় যে অপরাধ করেছে, তা বিরলতম। তার সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত। দু’পক্ষের কথা শোনার পর সাজা ঘোষণার জন্য আরও কিছুটা সময় নেন বিচারক। তার পর বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ তা ঘোষণা করেন।
অপরদিকে, নির্যাতিতার পরিবার ও নাগরিক সমাজের একাংশ অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে সরব হয়েছিলেন। এমনকি বিভিন্ন স্থানে প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চও গড়ে তোলা হয়েছিল। তবে বিচারপতি অনির্বাণ দাস দোষীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন, যা আইনত যথোপযুক্ত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অপরাধীর আইনজীবীরা আদালতে যুক্তি দিয়েছিলেন, মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে রাষ্ট্রপক্ষ ও নির্যাতিতার পরিবার অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরে কঠোরতম সাজার আবেদন জানিয়েছিল।
সব মিলিয়ে, এই রায়কে অনেকে স্বাগত জানালেও, নাগরিক সমাজের একাংশ কিছুটা হলেও হতাশ। তবু আশা এটাই, যে এই রায় সমাজে দৃষ্টান্তমূলক বার্তা দেবে এবং ভবিষ্যতে এমন অপরাধ করার আগে দু'বার ভাবতে হবে।