শেষ আপডেট: 2nd January 2025 22:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দলের নেতা-কর্মীদের আলটপকা মন্তব্য ঠেকাতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি গড়ে দিয়েছে তৃণমূল। তারপরও অনেকে ওই ধরনের মন্তব্য করছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে অভিষেক বলেন, "মুখপাত্রদের কথা দলের কথা নয়!"
আরজি কর ইস্যুতে আন্দোলনে নেমে যারা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন, সেই শিল্পীদের যাতে কোনওভাবেই তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে জায়গা দেওয়া না হয় তা নিয়ে সওয়াল করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এমনকী এক্স হ্যান্ডেলে সরাসরি তাঁদের বয়কটের ডাকও দিয়েছিলেন। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, নাম না করে কুণালকেই বার্তা দিয়েছেন অভিষেক।
এদিন এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে, অভিষেকের পাল্টা প্রশ্ন, "পার্টির তরফে কেউ বলেছে? কোনও নোটিস দেখেছেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা আমি জেনারেল সেক্রেটারি কিছু বলেছি?"
এই ধরনের নির্দেশে তিনি যে ক্ষুব্ধ তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধার স,ম্পাদকের কথায়. "কোথায় কাকে দিয়ে গান গাওয়াবে, কখন গাওয়াবে, কে গান গাইবে, আমি জোর করে কারও মাথায় চাপাতে চাই না। আমি কোথা দিয়ে হাঁটব-চলব, সেটা আমার সিদ্ধান্ত। স্বাধীনতা সকলের আছে।"
প্রসঙ্গত, গত ৩০ ডিসেম্বর কুণাল শিল্পীদের একাংশকে বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন। কুণাল এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছিলেন, ‘যে শিল্পীরা পরিকল্পিত কুৎসা করেছেন, মুখ্যমন্ত্রী-সহ সরকার ও দলকে ঘৃণ্য ভাষায় আক্রমণ করেছেন, সরকার ফেলে দেওয়ার কথা বলেছেন, তৃণমূল সমর্থকদের কুৎসিত ভাষায় অপমান করেছেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্ররোচনা ছড়িয়েছেন, তাঁদের এই শীতের মঞ্চে তৃণমূল নেতাদের আয়োজিত জলসা বা অনুষ্ঠানে যেন কোনওভাবেই দেখা না যায়। এই শীতে এঁদের বয়কট করা হোক। কোনও তৃণমূল নেতার কোনও বিভ্রান্তি থাকলে উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে নিন। কর্মী-সমর্থকদের আবেগকে সম্মান দিন।’
তৃণমূল নেতার এমন পোস্টের পর তা ভাইরাল হতে সময় লাগেনি। বিষয়টি নজরে আসতেই শুরু হয় বিতর্ক। এমনকী কয়েকজন শিল্পীর অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা বাতিল করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই প্রসঙ্গে এদিন অভিষেক মনে করিয়ে দেন, বয়কটের তালিকাভুক্ত এক শিল্পীর অনুষ্ঠান বাতিলের পর তিনি ফোন করেছিলেন। তাঁর মধ্যস্থতায় সেই শিল্পীর অনুষ্ঠান করানোর বন্দোবস্তও করানো হয়।
অভিষেক বলেন, ‘যেহেতু ওই শিল্পী ব্যক্তিগতভাবে ফোন করেছেন, তাই আমি সঙ্গে সঙ্গে মেলা কমিটির সদস্য-সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগ করি। পরে খবর নিয়ে জানতে পেরেছি তিনি ওই অনুষ্ঠানে শো করতে পেরেছিলেন।’
তবে এদিন অভিষেকের মন্তব্যের পর সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন কুণাল। তিনি পরিষ্কার জানিয়ে দেন, 'আমার মনে হয় কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। আমি কোনও প্রতিবাদীকে বয়কটের কথা বলিনি। যাঁরা মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকারকে আক্রমণ করেছিলেন, যাঁরা তৃণমূল কর্মীদের বলেছিলেন চটিচাটা, যাঁরা বাংলাদেশ মডেলে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যছাড়া করার কথা বলেছিলেন, আমি তাঁদের বয়কট করার কথা বলেছি।'
কুণাল আরও বলেন, তিনি তাঁর অবস্থানেই অনড়। যা বলেছেন, ঠিক বলেছেন। আবার বলবেন। শুধু নেত্রী মমতা যদি বলেন, তিনি ‘ভুল’ বলেছেন, তা হলে মেনে নেবেন।
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) January 2, 2025
প্রসঙ্গত, আরজি কর আন্দোলন নিয়ে প্রথম থেকেই ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিলেন অভিষেক। ১৪ অগস্ট মহিলাদের রাত দখলের আন্দোলনকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চ থেকে সম্মান জানিয়েছিলেন অভিষেক। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, কুণালের এমন মন্তব্য যে উল্টে দলের জন্য খারাপ হতে পারে, তা আঁচ করতে পেরেই সম্ভবত অভিষেক স্পষ্ট করে দিলেন, কোনও মানুষের ব্যক্তিগত মতামত কখনওই দলের বক্তব্য বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। দল কোনওভাবেই এমন মতামতকে সমর্থন করে না।