শেষ আপডেট: 18th June 2021 12:19
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কানে শোনেন না তেমন। মাথা ভরা কাঁচাপাকা চুল আর এক মুখ সাদা দাড়ি নিয়ে দৃপ্ত হাতে ছড় টেনে বেহালা বাজিয়ে চলেছেন গিরিশপার্কের অদূরে ভেঙে পড়া বিবেকানন্দ ফ্লাইওভারের কাছে। নাম ভগবান মালি। বাড়ি মালদার এক গ্রামে। কিন্তু আপাতত ঠাঁই মহানগরীর ফুটপাথে। বৃষ্টি বাদলার দিনে রাস্তায় লোক কম। গোড়ালি ডোবা জল। তবু তাঁর বেহালার সুরের জাদুতে না দাঁড়িয়ে উপায় নেই। মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনছেন পথচলতি মানুষ। বাজাচ্ছেন ভগবান মালি। বৃষ্টির দিনে তাঁর ছড়ে ভর করে মল্লার। অপূর্ব মূর্ছনায় মহম্মদ রফির 'দিওয়ানা হুয়া বাদল' সুগন্ধের মত ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। আবেগে আপ্লুত হয়ে শ্রোতারা মাথা নেড়ে বলে উঠছেন ‘আহা!’ কারও চোখের কোনটা ভিজে উঠছে। মাঝারি চেহারার প্রৌঢ় বেহালাবাদক অবশ্য ভাবলেশহীন। বৃষ্টির দিনে বেহালা বাজালে কটা লোক আর শুনবে! কটা টাকা ঘরে আসবে দিনের শেষে, মনে মনে সেই হিসেবই হয়ত কষছেন। সেই গতমাসে অসুস্থ মেয়েকে দেখতে কলকাতায় এসেছিলেন। তারপর লকডাউন হয়ে যাবে কে জানত! সেই থেকে তিনি কলকাতায় আটকে। শুক্রবার দ্য ওয়াল শিল্পী ভগবান মালির মুখ থেকে শুনল তাঁর দুর্ভোগের কথা। মেয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে স্ত্রীকে নিয়ে ভগবান মালদা থেকে কলকাতায় এসেছিলেন মাসখানেক আগে। সম্প্রতি মেয়ে দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছে। নাতনি হয়েছে ভগবান মালির। কিন্তু আনন্দ করার উপায় কই! লকডাউনে রোজগার বন্ধ। কারখানার কাজ গিয়েছে জামাইয়ের। তাদের এক কামরার সংসারেই হাঁড়ি চলছে না। তার মধ্যে এসে উঠেছেন ভগবান আর তাঁর স্ত্রী। জানালেন, রাতটুকু মেয়ের বাড়ির বারান্দায় থাকেন। সকাল হলেই আবার ফুটপাথে। আপাতত শহরের বুকে বেহালা বাজিয়ে সারাদিনে যেটুকু উপার্জন হয় তা-ই তুলে দিচ্ছেন মেয়ে-জামাইয়ের হাতে। জানালেন, দিনে কোনোদিন ২০০-৩০০ টাকা রোজগার হয়। মানুষ ভালোবেসে দেন। সেই দিয়েই চাল ডাল কিনে বাড়ি ফেরেন ভগবান। লকডাউনের পর ৫টা পেট এভাবেই চলছে। ছোট্ট নাতনিকে তো আর না খাইয়ে রাখা যাবে না। দাদু হয়ে বেহালা হাতে লড়ে যাচ্ছেন মালি। হোক অনটন, কানে ভাল শোনেন না, চোখেও দেখেন না। তবু শিরদাঁড়া তাঁর সোজা। স্পষ্ট জানালেন, কাজ দরকার। মেয়ে-জামাইয়ের সংসার চলছে না মোটে। যেকোনও অনুষ্ঠানে বেহালা বাজাতে পারবেন। স্টুডিও রেকর্ডিংয়ের কাজ পেলেও করবেন। জানালেন, মালদায় বেহালা বাজিয়েই সংসার চলত তাঁর। বাবা কস্তুর মালি ছিলেন অসাধারণ বেহালা শিল্পী। তাঁর কাছেই সঙ্গীত শিক্ষা ভগবানের। সেই বেহালার জোরেই স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার করেছেন এতকাল। বাধ সাধল করোনা। রুজি রোজগার বন্ধ। পাড়ায় পাড়ায় আগের মত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আর হয় না। কবে সবকিছু ছন্দে ফিরবে তা তাঁর জানা নেই। গিরিশপার্কে বিবেকানন্দ রোডের ফ্লাই ওভারের নিচে, হরিয়ানা ভবনের সামনেই অস্থায়ী আস্তানা পেতে সারাদিন বেহালায় ছড় টানেন শিল্পী ভগবান মালি। তাঁর রোদ ঝলসানো চামড়া। ভিখিরির বেশ। অথচ এমন প্রতিভা! সেই দেখে দুঃখ প্রকাশ করলেন কলকাতা পুলিশের কমিউনিটি পুলিশিং উইংয়ের এক ইন্সপেক্টর। তিনি জানালেন, শিল্পীর যোগ্য মর্যাদা পান মানুষটা, সেই কামনাই করি। আশ্বাস দিলেন আগামী সপ্তাহ থেকে শিল্পী পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করার চেষ্টা হবে। আরও কেউ সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ: ৭৫০১০২৯৭৯৮