সঞ্জয় রায়।
শেষ আপডেট: 20th January 2025 23:45
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়কে (Sanjay Roy) যাবজ্জীবন কারাবাসের শাস্তি দিয়েছে শিয়ালদহ আদালত। সোমবার দুপুরে বিচারক অনির্বাণ দাস এই রায় ঘোষণা করার পরে জনমানসে আলোচনার ঝড় উঠেছে। একাংশ মানুষ তাঁর এই রায়কে স্বাগত জানালেও, ফাঁসির সাজা না হওয়া নিয়ে হতাশ অনেকেই।
তবে এসবের মাঝে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল, মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে সঞ্জয়কে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন দুই মহিলা আইনজীবী, সেঁজুতি চক্রবর্তী এবং কবিতা সরকার। তাঁদের পেশাগত দক্ষতাও আলোচনার অবকাশ রাখে এই মামলায়।
এদিন আদালতে সঞ্জয় রাইয়ের দুই আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী ও কবিতা সরকার যথেষ্ট সাহসীভাবে সঞ্জয়ের হয়ে সওয়াল করেন। সেঁজুতি বলেন, 'এটা বিরল কোনও ঘটনা নয়। সুপ্রিম কোর্ট বিভিন্ন মামলায় আসামিকে সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার কথা বলেছে।' তিনি আরও বলেন, 'মামলার নথির উপর ন্যূনতম সন্দেহ থাকলে, কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা উচিত নয়।'
এখানেই শেষ নয়, সেঁজুতি আরও বলেন, 'ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি দিল্লির এক গবেষণায় মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আলোচনা করা হয়েছে, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য এবং পারিবারিক অবস্থাও বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আমার আবেদন, আমার মক্কেলের মৃত্যুদণ্ডের বদলে অন্য কোন সাজা দেওয়া হোক।'
সেঁজুতি একা নন, পাশাপাশি কবিতা সরকার সওয়াল করেন, 'স্যার, তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। আগামীতে কী তথ্য উঠে আসবে তা আমরা জানি না। এখনই কীভাবে এত বড় শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে?' এর উত্তরে বিচারক জানান, 'আপনারা পরস্পরবিরোধী কথা বলছেন। প্লিজ এগুলো বন্ধ করুন।'
সঞ্জয়ের হয়ে সওয়াল করা দুই আইনজীবী সেঁজুতি চক্রবর্তী এবং কবিতা সরকারের পরিচয় কী?
কবিতা সরকার হুগলির মহসিন কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন এবং তাঁর আইনি কেরিয়ার শুরু হয়েছিল আলিপুর কোর্টে। তিনি প্রথমে দেওয়ানি মামলায় যুক্ত ছিলেন, পরে ফৌজদারি আইনের মামলাতেও অংশ নিতে শুরু করেন। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিসেস অথরিটিতে যোগদান করেন। পরবর্তী কালে শিয়ালদহ আদালতে তার কেরিয়ার শুরু হয়।
অন্যদিকে, সেঁজুতি চক্রবর্তীও ওই বছরেরই জুন মাসে শিয়ালদহ আদালতে যোগ দেন। এই দুই আইনজীবীই নিজেদের দক্ষতা এবং ক্ষমতায় সঞ্জয়ের পক্ষে লড়াই চালিয়ে গেছেন।
তবে এই দুই আইনজীবীদ সওয়াল ছাড়াও, নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য সঞ্জয় রায় আদালতে বারবারই যুক্তি দিয়ে বলেছে, 'ওই সময় ওই রুমে আমার পক্ষে এই অপরাধ করা সম্ভব ছিল না। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।' তিনি আরও দাবি করেন, 'কলকাতা পুলিশ থেকে সিবিআই হেফাজতে নেওয়ার পর আমাকে অত্যাচার করা হয়েছে। আমার মেডিক্যাল পরীক্ষার সময়ে কিছু পাওয়া যায়নি।'
গত শনিবার মামলার রায়দান করে সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। এদিন সাজা ঘোষণার আগে প্রথা মাফিক সঞ্জয়ের বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। নিজেকে নির্দোষ বলে আজও দাবি করে ভাবলেশহীন ছিলেন সঞ্জয়। বলেন, ‘আমি কোনওটাই করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আগের দিনও বলেছি। আমি শুনেছি, অনেক কিছু নষ্ট করা হয়েছে। আমার গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ছিল। আমাকে মারধর করা হয়েছে। যার যা ইচ্ছা করছে। যেখানে খুশি সই করিয়ে নিচ্ছে।’
বিচারক তাকে প্রশ্ন করেন, 'আপনাকে তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল, আপনার উকিলরা আপনার হয়ে কথা বলেছেন। তারপরও আপনি দাবি করছেন, আপনি নির্দোষ। তাহলে শাস্তির বিষয়ে কী বলবেন?' সঞ্জয় তখন বলেন, 'আমার পরিবারের কথাটা ভাবুন।'
সঙ্গে সঙ্গে সিবিআইয়ের আইনজীবী জোরালো সওয়ালে বলেন, সঞ্জয় যে অপরাধ করেছে, তা বিরলতম। তার সর্বোচ্চ সাজা হওয়া উচিত। দু’পক্ষের কথা শোনার পর সাজা ঘোষণার জন্য আরও কিছুটা সময় নেন বিচারক। তার পর বিকেল পৌনে তিনটে নাগাদ তা ঘোষণা করেন।