শেষ আপডেট: 3rd September 2024 16:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আর জি কর কাণ্ডের জেরে উত্তাল বঙ্গ রাজনীতি থেকে সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়ার আবেগ মেশানো মানবিক মূল্যবোধের কথা তুলে ধরে জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ঘটনায় দোষীর ফাঁসি বা প্রাণদণ্ডের দাবিতে সিলমোহর দিয়ে বিরোধীদের মুখে কুলুপ এঁটে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় ধর্ষণ বিরোধী বিলের পক্ষে মমতাও বলেন, আমরাও চাই দোষীদের ফাঁসি হোক। কিন্তু আমি সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধর্ষণ মানবতার বিরুদ্ধে অভিশাপ। নির্যাতিতার প্রতি শোকজ্ঞাপন করে এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠনের গুরুত্বের উপর জোর দেন। বিজেপিকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, আপনাদের কাছ থেকে জ্ঞান নেব না। আন্দোলন প্রসঙ্গে তাঁর মত, প্রতিবাদ করার গণতান্ত্রিক অধিকার সকলের আছে।
মমতা বলেন, এই বিল মেয়েদের অধিকার রক্ষার লড়াই। কামদুনিতেও আমরা ফাঁসির সাজা চেয়েছিলাম। ধর্ষণের ঘটনা তা সে দেশের যে প্রান্তেই ঘটুক না কেন, তা জাতীয় লজ্জায় পরিণত হয়েছে। দলমতনির্বিশেষে তিনি ডাক দেন, এর জন্য সমাজ সংস্কারের প্রয়োজন আছে। আসুন আমরা সকলে মিলে সমাজ সংস্কার করি। এই বাংলা থেকেই একসময় সতীদাহ-বাল্যবিবাহ রোধে সমাজ সংস্কার করেছিলেন রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগর।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সমস্ত যুক্তি খণ্ডন করে মুখ্যমন্ত্রী এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের মহিলা নিরাপত্তায় গলদ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বিলকিস বানো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষকদের কীভাবে গলায় মালা পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় তা নিয়েও বিজেপিকে বেঁধেন তিনি। একইসঙ্গে উন্নাও, হাথরস, ঝাঁসি, অযোধ্যা, বদলাপুর সহ একাধিক ধর্ষণ ও নাবালিকা নির্যাতনের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বিজেপি শিবিরকে পেড়ে ফেলেন মমতা।
কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে অলিম্পিয়ান ভিনেশ ফোগতের লড়াইয়ের কারণে তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন মমতা। তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের সাজার দৃষ্টান্ত কম। তাঁর দাবি, গড়ে ৭৬ শতাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ চার্জশিট জমা দিতে পারে। আর ২.৫৬ শতাংশের শাস্তি হয়। কিন্তু, আমরা চাই দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে সাজা ঘোষণা করা হোক। বিচারের বাণী যেন নীরবে নিভৃতে না কাঁদে। জেনে রাখবেন, কলকাতা সবথেকে নিরাপদ শহর। ভাষণের একেবারে শেষে এসে বিরোধী শিবিরকে প্যাঁচে ফেলে দিয়ে স্বভাবসিদ্ধ কণ্ঠে মমতা বলেন, আর জি করের দোষীদের ফাঁসি হোক।
মঙ্গলবার বিধানসভায় অপরাজিতা মহিলা ও শিশু (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধন) বিলটি পেশ করেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এ কারণে দুদিনের বিশেষ অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বিল পেশের পর আলোচনা শেষে বিরোধীরা সমর্থন করায় সর্বসম্মতিক্রমে তা পাশ হয়ে যায়। কী আছে এই খসড়া বিলে? মূল কয়েকটি তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শাস্তি আরও কঠোরতর করতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ধারাগুলিকে সংশোধন করা হয়েছে বলে দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।