শেষ আপডেট: 14th March 2022 13:03
সোমা লাহিড়ী
প্রচেতদা প্রচেতদা ....
তারস্বরে চিৎকার করতে করতে দুই তরুণী বই হাতে রীতিমতো দৌড়চ্ছে একজন দোহারা চেহারার মানুষের পেছনে। তিনি যেন শুনেও শুনছেন না (kolkata book fair)। আমি প্রচেতর নাম শুনে কান খাড়া করলাম। তাকিয়ে দেখি সেই দোহারা মানুষটি পেছন ফিরে তাকিয়েছেন। মেয়ে দু'টি কলম আর বই বাড়িয়ে দিয়েছে অটোগ্রাফের জন্য। আমি একটু দূর থেকে দাঁড়িয়ে মজা দেখছি।
' আমাকে দেখে কি প্রচেত গুপ্ত মনে হচ্ছে ?'
' মজা করবেন না প্রচেতদা । দিন না একটা অটোগ্রাফ। প্লিজজ...' মেয়েটির আবেগময় আর্জি উপচে পড়ছে।
ছেলেটি গম্ভীর। একটু বিরক্তি নিয়েই বললেন,
'আপনি ভুল করছেন। আমি প্রচেত গুপ্ত নই'।
মেয়েদু'টি নাছোড়বান্দা। 'আমরা শুনেছি আপনি খুব মজার মানুষ। মজা করছেন বুঝতে পারছি।'
আবার কলম বাড়িয়ে দিল ছেলেটির দিকে।
এবার আর না পেরে তিনি বললেন, 'বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা, আশ্চর্য তো। বইটা খুলুন। পেছনের কভারের ভেতরে লেখকের ছবি আছে, মিলিয়ে দেখুন।'
মেয়ে দু'টি বই খুলে ছবি দেখে অপ্রস্তুত। আরও অপ্রস্তুত ওই ছেলেটি আমাকে সামনে দেখে। মিটিমিটি হেসে বলল, 'কী কাণ্ড বলুন তো '।
ছেলেটি আর কেউ নয় দে'জ পাবলিশিংয়ের এ প্রজন্মের কর্মকর্তা ওয়ান আন্ড ওনলি অপু (অপূর্ব দে)।
জিজ্ঞেস করলাম,' এমন অভিজ্ঞতা কি আগে হয়েছে?তোমার সঙ্গে তো প্রচেতর কোনও মিল নেই। তাহলে ?'
অপু বলল, ভিড়ে অনেকে ভুল করে। কিন্তু এইরকম নাছোড়বান্দা বিশ্বাসী আগে ফেস করিনি।'
ঘটনাটা প্রচেতকে বললাম। শুনে হাসতে হাসতে বলল,'অপুর উচিত ছিল অটোগ্রাফটা দিয়ে দেওয়া। আমার দুই সুন্দরী পাঠিকার মনে কতটা দাগা লাগল বলতো'।
প্রচেতর এই বক্তব্য শুনে আমার আর এক বন্ধু সাহিত্যিক বলল, ' আরে অপু ঠিক করেছে। দু'জনেই বেঁচে গেছে'।
' বেঁচে গেছে ! মানেটা কী?'
'অটোগ্রাফের পরের স্টেপ কী বলতো ? সাহিত্যিকের সঙ্গে সেলফি। তার পরের স্টেপ ফেসবুক পোস্ট। ভেবে দ্যাখ কী হতো? প্রকাশকই সাহিত্যিক? নাকি সাহিত্যিকই ... আর ভাবতে পারছি না।'
ধন্দ সেদিন বইমেলার (kolkata book fair) সর্বত্র।
দে'জ পাবলিশিংয়ের বাইরে চেয়ার টেবিল পেতে বসেছেন দুই স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব। একজন সাহিত্যিক শংকর, অন্য জন অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
দু'জনেরই সই-বই বিকোচ্ছে তরতর করে। উপচে পড়া ভিড়ের মাঝে একজন মহিলা সাহিত্যিক শংকরকে দেখিয়ে তাঁর কাছের মানুষটিকে প্রশ্ন করলেন, 'ওনাকে যেন কোন সিনেমায় দেখেছি? দু'জনেই কি টনিকে ছিলেন?'
ভদ্রলোক চাপা স্বরে ধমক দিলেন,' আহ, বোকা বোকা কথা লোকসমাজে বলো না। উনি ফিল্ম স্টার নন, খুব বড় সাহিত্যিক -শংকর।'
এবার ঋতুপর্ণার জন্মদিন লন্ডনে, সারপ্রাইজ দিলেন সঞ্জয়
আমি চোখ রাখছিলাম ভদ্রমহিলার দিকে। জিভ কেটে আস্তে আস্তে বললেন,'আসলে পাশাপাশি টেবিলে বসেছেন তো তাই ভুল হয়ে গেছে।' কী সরল স্বীকারোক্তি।
তিন নম্বর এক্সিট গেট (kolkata book fair) দিয়ে বেরতে যাব, দেখি চার পাঁচ বছরের ছোট্ট একটা ছেলে খুব রেগে গেছে তার বাবার ওপর। হাত পা ছুঁড়ে কিছু একটা বলতে চাইছে।
'আমি বাড়ি যাব না কিছুতেই যাব না। তুমি তো বলেছিলে দেখা করিয়ে দেবে। দিলে না তো।'
শিশুটির মা খুব আদর করে কিছু বোঝাতে চাইছেন, কিন্তু ভবি ভোলবার নয়।
কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম ,' তুমি কার সঙ্গে দেখা করতে চাও?'
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলল, 'বাঁটুল, বাঁটুল দি গ্রেট। বাবা বলেছিল বইমেলায় (kolkata book fair) বাঁটুলের সঙ্গে দেখা হবে। নন্টে ফন্টের সঙ্গে দেখা হবে। কিচ্ছু হল না। এখন বলছে বাড়ি ফিরে যেতে।'
ভদ্রলোক অপ্রস্তুত। বললেন,'ছেলেকে মজা করে বলেছিলাম বইমেলায় (kolkata book fair) চল, বাঁটুল নন্টে ফন্টের সঙ্গে দেখা হবে। বাঁটুল সমগ্র কিনে দিলাম। তাও শান্ত করতে পারছি না।'
হঠাৎ দেখি পণ্ডিতমশাই টাইপের কার্টুন ক্যারেক্টর (মোটু পাতলু ??) সেজে হাজির একজন। হাত বাড়াতেই মুড পাল্টে গেল ছোট্টটির। তার হাত ধরে বেশ পোজ দিয়ে বলল,' বাবা জাস্ট আ ক্লিক'। তাহলে কি বাঁটুলের সঙ্গে পোজ দিয়ে ছবি তোলার বাসনাতেই কান্না জুড়েছিল পুঁচকেটা?