Date : 11th Jul, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
Eng vs Ind: বুমরাহর দাপটের পর ভারতকে টানছে রাহুল-পন্থ জুটিঘটকালির ছকে প্রেমের ফাঁদ! ম্যাট্রিমনি সাইটে পরিচয়, ৪৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে পগারপার পাত্রফের শহরে সিভিক ভলান্টিয়ারের 'দাদাগিরি'! ৬টি ধারায় মামলাভিন্ন ধর্মে বিয়ে, মেয়ের কুশপুতুল দাহ করলেন বাবা, চাঞ্চল্য রাজগঞ্জেস্ত্রীকে নির্যাতন, পরকীয়ার অভিযোগে পদ খোয়ালেন তৃণমূল ব্লক সভাপতিরাস্তায় যৌন হেনস্থা, ঠাটিয়ে চড় ফতিমাকে! শিউরে ওঠা ঘটনার বিবরণ দিলেন অভিনেত্রীচিকিৎসককে হুমকি, কাঞ্চনের 'অপরাধ' দেখছেন না বিজেপির রাজ্য সভাপতি! দিলেন ব্যাখ্যাওWorld Kebab Day: আজ বিশ্ব কাবাব দিবস, সপ্তাহান্তে লোভাতুর বাঙালির জন্য রইল শহরের ৫ দোকানের হদিসLocal Trains Cancel: আবার একগুচ্ছ লোকাল ট্রেন বাতিল, দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরাছিল তিন, হল চার, পুজোর ছবিতে নাটকীয় এন্ট্রি নিলেন দুঁদে গোয়েন্দা! চিন্তায় প্রযোজকরা

কলকাতায় অন্য পরিচয়ে থাকলেও ঢাকার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

দ্য ওয়াল ব্যুরো: পরিচয় বদলে এপার বাংলায় ২২ বছর ধরে লুকিয়ে থাকলেও, ঢাকায় বসবাস করা পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদ। খোঁজ নেওয়ার জন্য তার মেয়ে ও ভাইকে প্রায়ই ফোন করত মাজেদ ওরফে আলি আহমেদ। ফেব্

কলকাতায় অন্য পরিচয়ে থাকলেও ঢাকার পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

শেষ আপডেট: 19 April 2020 09:57

দ্য ওয়াল ব্যুরো: পরিচয় বদলে এপার বাংলায় ২২ বছর ধরে লুকিয়ে থাকলেও, ঢাকায় বসবাস করা পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুল মাজেদ। খোঁজ নেওয়ার জন্য তার মেয়ে ও ভাইকে প্রায়ই ফোন করত মাজেদ ওরফে আলি আহমেদ। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সে নিখোঁজ হওয়ার পরে, এই ফোনের সূত্র ধরেই বাংলাদেশের গোয়েন্দারা মাজেদের অবস্থান নির্ণয় করে। তার পরে মীরপুর থেকে গ্রেফতার করে ফাঁসি দেওয়া হয় তাকে। তবে সবকিছুর পরে সকলের মধ্যে একটা খটকা এখনও থেকেই গেছে। কলকাতা থেকে মাজেদ কীভাবে ঢাকায় এল। অনেকে মনে করছেন, বাংলাদেশের গোয়েন্দারাই ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করে, তাকে টোপ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠায়। সেখানেই আগে থেকে ওঁৎ পেতে রাখা পুলিশ গ্রেফতার করে মাজেদকে। ৭ এপ্রিল মাজেদকে গ্রেফতার করার পরে বাংলাদেশের পুলিশ জানিয়েছিল, ৬ এপ্রিল রাতে মাজেদকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে রিকশায় দেখা যায় সন্দেহজনক ভাবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়। আলি আহমেদ বলে নিজের পরিচয় জানালেও, বাকি সূত্র মিলছিল না। নিশ্চিত হওয়ার পরে, ৭ তারিখে মাজেদকে মীরপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরেই ১২ এপ্রিল রাত ১২টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এর পর থেকে অবশ্য আর মাজেদের পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। ঢাকার গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, চার মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে মাজেদের পরিবার রয়েছে ঢাকায়। তাঁদের মধ্যে দুই মেয়ে ও এক ছেলে বিদেশে থাকেন। মাজেদের স্ত্রী সালেহা বেগম এবং দুই মেয়ে ফাতেমা সিদ্দিকা ও মাসুমা সিদ্দিকা ঢাকায় থাকেন। তাঁর তিন জনই পেশায় চিকিৎসক। এই ফাতেমার সঙ্গেই মাজেদ নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। মাজেদের ভাই শাহজাহান চৌধুরী থাকেন চট্টগ্রামে, তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল মাজেদের। গ্রেফতার হওয়ার পরে গোয়েন্দাদের এই তথ্য নিজেই দিয়েছে মাজেদ। সেই সঙ্গে জানিয়েছে, দীর্ঘ ২২ বছর আলি আহমেদ পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় লুকিয়ে ছিল সে। ঘর বেঁধেছিলেন কলকাতার পার্কস্ট্রিটে। শুধু তাই নয়, তাঁর ভারতীয় পাসপোর্টও ছিল। তৈরি করেছিলেন আধার কার্ডও। সেইসঙ্গে ৩৩ বছরের ছোট জরিনা বিবিকে বিয়ে করে রীতিমতো ‘সুখে’ সংসার করছিল মাজেদ। তার ছ’বছরের কন্যাসন্তানও রয়েছে। সুদের ব্যবসা ও টিউশনি করে বেশ কাটাচ্ছিল জীবন। সব দিক থেকে অন্য মানুষ হিসেবে নিজের আসল পরিচয় মুছে ফেলেছিল সে। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট শেখ মুজিবর রহমানকে বাড়ির ভিতরে ঢুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও মেরে ফেলা হয়। বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের গবেষক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ডঃ কুন্তল মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘বাংলার ধনুক’ বইতে লিখেছিলেন, গান্ধীজিকে হত্যার পর মুজিবের হত্যাই একুশ শতক পর্যন্ত ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে নৃশংস রাজনৈতিক হত্যা। জিয়াউর রহমানের আমলে তাঁর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করে সরকারি চাকরিতে উচ্চ পদে বসানো হয়েছিল সেই খুনিদেরই। আবদুল মাজেদ তার ব্যতিক্রম ছিল না। ক্যাপ্টেন মাজেদ হয়ে সেনাবাহিনীর পদস্থ কর্তা হিসেবে যোগ দেয় সে। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামি লিগ ক্ষমতায় ফেরার পরে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। বিপদ বুঝে সে সময় গা ঢাকা দেয় একদা সেনাবাহিনীর কর্তা আবদুল মাজেদ। তার পরে ঠিক কবে থেকে তার এপার বাংলায় বসবাস শুরু, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। আশ্চর্যের বিষয় হল, এপার বাংলায় ১০ বছর ধরে বিবাহিত স্ত্রী জরিনাও টের পাননি এসবের বিন্দুবিসর্গ। দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, তাঁর ৭৩ বছরের বৃদ্ধ স্বামী আদতে আত্মগোপন করে থাকা এক খুনি! ফেব্রুয়ারি মাসের ২১ তারিখে পার্কস্ট্রিটের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় আলি আহমেদ। ওষুধ কিনতে বেরিয়ে আর ফেরেনি। ফোনও সুইচড অফ। জরিনা কিছু বুঝতে না পেরে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরিও করান। একেবারেই সাধারণ ও স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যা করা উচিত।

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদের সঙ্গে কলকাতায় ১০ বছর ধরে সংসার করেছেন উলুবেড়িয়ার তরুণী জরিনা! টের পাননি কিছু

২১ ফেব্রুয়ারি পার্কস্ট্রিটের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পরে, ডায়েরি পেয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। সিসিটিভি-তে দেখা যায়, বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে বাসে উঠে পড়েছে মাজেদ। সঙ্গে ছিল আরও চার জন। অনুসরণকারী চার জনকে মাজেদের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায়। এর পরে মৌলালির দিক থেকে আসা সল্টলেক-সাঁতরাগাছি রুটের একটি বাসে চড়ে বসে মাজেদ ও ওই চার জন। আর কোনও ফুটেজ নেই মাজেদের গতিবিধির। এর পরে ভরসা মাজেদের মোবাইল ফোনের লোকেশন টাওয়ার। মালদহ জেলায় পাওয়া যায় টাওয়ারের লোকেশন। অনেকেই মনে করছেন, মাজেদকে এভাবেই নানা জায়গায় ঘুরিয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে ধরিয়ে দিয়েছেন ওই চার জনই। মাজেদ এপার বাংলায় ভালই ছিল একরকম। সম্পূর্ণ ভাবে বদলে ফেলেছিল পরিচিতি। ২০০৭ সালে একটি পাসপোর্ট বানায় সে। বানায় আধার কার্ডও। তার পরে ঠিক তথ্য দিয়ে আরও একটি পাসপোর্ট বানায় ২০১৭ সালে। সবেতেই নাম-পরিচয় আহমেদ আলির। দুটো পাসপোর্টেই অবশ্য স্ত্রীর নাম রয়েছে সালেহা বেগমের, যিনি ১৯৪৭ সালে জন্মেছেন বলে লেখা রয়েছে। তবে এত কিছু করেও শেষরক্ষা হল না। গ্রেফতারির পরে মাজেদের ব্যাগে এক মহিলা ও তিন শিশুর ছবি পাওয়া যায়। পুলিশের ধারণা, ওই মহিলাই সম্ভবত মাজেদের বাংলাদেশের স্ত্রী সালেহা বেগম। এসব ব্যাপারে অবশ্য কলকাতার স্ত্রী জরিনা কিছুই জানতেন না। জরিনা বলেন, “ও খুব চুপচাপ থাকত। একেবারেই বেশি কথা বলত না। বিয়ের পরে আমি কয়েক বার ওর গ্রামের কথা জানতে চেয়েছিলাম, জানতে চেয়েছিলাম বাড়িতে কে কে আছেন। ও রেগে যেত। আর বেশি কিছু কখনও বলিনি আমি। বিয়ের আগে বাড়িতে জেনেছিল, ও ধর্মীয় মানুষ এবং ভালই রোজগার করে। আর কোনও খোঁজ না নিয়েই আমার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় সাততাড়াতাড়ি। আমি বিয়ের পর থেকেই দেখছি, নিয়ম করে পাঁচ বার নমাজ পড়ত ও। সমস্ত ধর্মীয় আচার পালন করত মন দিয়ে। কথা বলত না বিশেষ।” জরিনা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, আলি আহমেদের যখন ৬৪ বছর বয়স, তখন সে বিয়ে করেছিল জরিনাকে। জরিনার বয়স তখন ৩১। উলুবেড়িয়ার গ্রামের মেয়ে তিনি। বছর কয়েক আগে প্রথম বিয়ে হলেও, বিধবা হন অল্প সময়ে। কোলে তখন ছোট সন্তান। ফিরে আসেন বাপের বাড়িতে। গরিব পরিবারে কোনও রকমে দিন গুজরান। প্রতিবেশীর সূত্রে সম্বন্ধ আসে আলি আহমেদের। বাড়ির লোকজন দেরি করেননি। জরিনাকে তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দেন ৬৪ বছরের আলি আহমেদের সঙ্গেই। ভাল করে খোঁজখবর নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি কেউ। কিন্তু মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজিদের গ্রেফতারির খবর পেয়ে। কারণ সে খবরের সঙ্গে যে ছবি ছাপা হয়েছে, তা তো তাঁর ঘরের মানুষের! আলি আহমেদ বলে যাঁর সঙ্গে ১০ বছর ধরে বিবাহিত জীবন কাটাচ্ছেন তিনি! এই মানুষটারই ফাঁসি হবে! সমস্ত ঘটনা জানার পরে কার্যত বাকরুদ্ধ হয়ে যান তিনি। অসুস্থও হয়ে পড়েন। জ্ঞান হারাতে থাকেন বারবার।

ভিডিও স্টোরি