বহুল ব্যবহৃত ‘নান্দনিক’, ‘দৃষ্টিনন্দন’, ‘অসাধারণ’ বাংলা শব্দগুলি সম্প্রতি জেন এক্সদের কাছে বড়ই ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে গেছে। তাদের চটকদারি বাংলা লৌকিক শব্দগুলি বেশি আকর্ষণ করছে।
নিজস্ব চিত্র।
শেষ আপডেট: 4 July 2025 18:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বহুল ব্যবহৃত ‘নান্দনিক’, ‘দৃষ্টিনন্দন’, ‘অসাধারণ’ বাংলা শব্দগুলি সম্প্রতি জেন এক্সদের কাছে বড়ই ম্যাড়ম্যাড়ে হয়ে গেছে। তাদের চটকদারি বাংলা লৌকিক শব্দগুলি বেশি আকর্ষণ করছে। ফলে তাদের মুখে মুখে ফিরছে ‘বাওয়াল’, ‘চল হ্যাট’, ‘চুলবুলি’, ‘বগাস’, ‘ঝাক্কাস’, ‘ফটাক’, ‘ফাটাফাটি’, ‘চুদুরবুদুর’, ‘ফুল্টুস’, ‘লুল্লুরি’, ‘নিজস্বী’, ‘খাপ’, ‘ছাপড়ি’-র মতো হালফিলের শব্দ। এর জন্যে কি বাংলা ভাষার শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে নাকি অতীত ঐতিহ্য থেকে বাংলা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে?
এই সব প্রশ্নের উত্তর উঠে এসেছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের (Kalyani University) বাংলা বিভাগ (Bengali Department ) আয়োজিত ‘প্রয়োগের বাংলা ব্যবহারের বাংলা’ নিয়ে পাঁচ দিনের কর্মশালায়। শুক্রবার কর্মশালার শেষ দিনে উপাচার্য ৮৪ জন গবেষক ও ছাত্রছাত্রীদের হাতে শংসাপত্র তুলে দেন। তিনি জানান, “ভাষা নদীর মতোই বহমান। প্রয়োগের পার্থক্যের জন্যই বাংলা ভাষার এত সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষায় এই ভিন্নতা খুঁজে বের করার মধ্যেই রয়েছে এই কর্মশালার সার্থকতা।’
কর্মশালায় পদার্থবিজ্ঞানী ও ভাষাবিদ পলাশ বরণ পাল সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবের কথা বলতে গিয়ে জানান, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষ নিজের মনের কথা অকপটে তুলে ধরছে। ফলে ভালো-মন্দ মিশিয়ে ভাষার প্রয়োগের সবটাই পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। কিছুদিন আগেও শব্দের বানান, উচ্চারণ, প্রয়োগ ইত্যাদি পরিশুদ্ধ করে উপস্থাপন করা হত। একটা সেন্সরের জায়গা ছিল, এখন নেই।’
এই কর্মশালাতেই বক্তারা মুখের ভাষাকে প্রয়োগের ভাষা করে তোলার সপক্ষে সওয়াল করেন। তাঁরা বলেন, ধীরে ধীরে এই শব্দেরা ঢুকে পড়বে সাহিত্যে। ক্রমশ সেটাই মূল ধারার লেখার অংশ হয়ে উঠবে। ‘কেনকি’-র মতো শব্দই এখনকার প্রজন্মের মনের ভাব ফুটিয়ে তুলবে।’
আলোচনায় উঠে আসে কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তার প্রসঙ্গে। আইএসআই কলকাতা লিঙ্গুইস্টিক রিসার্চ ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক নীলাদ্রী শেখর দাশ আধুনিক বলেন, ‘নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী ভাষা প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রজন্মের বিদ্যার্থীকে সুযোগ্য করে তুলতে হবে।’
কর্মশালায় গবেষক ছাত্রের প্রশ্নে এক বক্তা তুলেল ধরেন, ‘জ’ আর ‘জ়’-এর প্রয়োগগত পার্থক্যের দিকটি। কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে সংবাদপত্রে ‘চুদুরবুদুর’ ও ‘নিজস্বী’ শব্দ ব্যবহারের কথা। বক্তারা বলেন, ‘হয়তো এখনকার বিভিন্ন শব্দ সাহিত্যে ফিরে আসবে। অতীতে নবারুণ ভট্টাচার্যের রচনায় এসেছে।
রেডিওতে ব্যবহৃত এখনকার বাংলাকে দূষিত বলে মত প্রকাশ করেন সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘এফএমের বাংলায় আমার সমর্থন নেই। আমার মতে এর ফলেই বাংলা ভাষা দূষিত হচ্ছে। নিকেশ, রোমিও, ধামাকা ইত্যাদি শব্দের অযাচিত প্রয়োগ হচ্ছে।’ ভাষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, বাংলাকে যেন বাংলার মতো সুন্দর করে বলা হয়। প্রয়োগের ক্ষেত্রে অহংবোধের জায়গাটা যেন বাংলা ভাষাতে না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যা আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক সুখেন বিশ্বাস জানালেন, ‘প্রতিনিয়ত নতুন শব্দ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ব্যবহার ও প্রয়োগ হচ্ছে। ইতিমধ্যেই আমরা ওইসব শব্দ নিয়ে অভিধান তৈরির কাজ শুরু করেছি। লক্ষ রাখছি, বাংলা ভাষা কীভাবে বাঁক নিচ্ছে।’