শেষ আপডেট: 1st October 2024 11:53
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সোমবার সুপ্রিম কোর্ট কী হলে সেদিকেই তাকিয়ে ছিলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। শনিবার যে জিবি করা হয়েছিল, তারপর থেকেই মোটমাট একটা হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন তাঁরা। বলেই দিয়েছিলেন রাজ্যের সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করবেন তাঁরা। হলও তাই।
সোমবার আট ঘণ্টা জিবি করে জুনিয়র ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন তাঁরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। মোট দশ দফা দাবি রেখেছেন চিকিৎসকরা। এবার সেই দাবি যতক্ষণ না পূরণ হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে বলে জানিয়ে দেওয়া হল।
দাবিগুলি কী কী?
১। স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত নির্যাতিতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
২। স্বাস্থ্য দফতরকে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে। পাশাপাশি নারায়ণস্বরূপ নিগমকে স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে অপসারণ করা।
৩। প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে রোগীকে অন্যজায়গায় স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চালু করা।
৪। প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে ফাঁকা বেডের সংখ্যা জানতে একটি করে ডিজিটাল মনিটর রাখা।
৫। প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কলেজভিত্তিক টাস্কফোর্স গঠন করা। সেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবেন। সিসিটিভি, ডাক্তারদের জন্য অন কল রুম, শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর, প্যানিক বটন চালু করা।
৬। হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে পুলিশকর্মীদের দায়িত্বে রাখতে হবে। রাখতে হবে মহিলা পুলিশকর্মীও।
৭। হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
৮। প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে থ্রেট কালচারের সঙ্গে জড়িত যাঁরা, তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে কেন্দ্রীয় স্তরে অনুসন্ধান কমিটি গঠন।
৯। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। যেখান থেকে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। তার জন্য কলেজ কাউন্সিলের বৈঠক ডাকতে মেডিক্যাল কলেজগুলিকে নির্দেশ দেওয়া।
১০। পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগগুলির দ্রুত তদন্ত শুরু করা।
ঘটনার সূত্রপাত, শুক্রবার রাতে সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজে রোগীর পরিজনদের হাতে প্রহৃত হন জুনিয়র চিকিৎসক-সহ কয়েকজন স্বাস্থ্য কর্মী। অভিযোগ, শুধু মারধর করা নয়, 'আরজি কর করে দেওয়ার' হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় কর্তব্যরত এক জুনিয়র মহিলা ডাক্তারকে।
ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার রাত থেকেই সাগর দত্তে কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন সেখানকার জুনিয়র চিকিৎসকরা। শনিবার হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম-সহ দফতরের পদস্থ কর্তারা। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। উপস্থিত ছিলেন জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদস্যরা। পরে বাইরে এসে নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রশাসনকে চূড়ান্ত ডেডলাইন বেঁধে দেন তাঁরা।
প্রশাসনিক বৈঠকের পর জুনিয়র চিকিৎসকরা জানান, সোমবার বিকেলের মধ্যে রাজ্যের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রশাসন নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না করতে পারলে ফের পূর্ণ কর্মবিরতিতে নামবেন তাঁরা।
সোমবার অর্থাৎ ৩০ সেপ্টেম্বর আরজি কর মামলার শুনানি হয় সুপ্রিমকোর্টে। জুনিয়র চিকিৎসকদের নজর ছিল সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজগুলিতে নিরাপত্তার প্রশ্নে আদালতে রাজ্য কী রিপোর্ট পেশ করে সেদিকে। নিরাপত্তা সুনিশ্চিত না হলে ফের ওই দিন বিকেল থেকেই রাজ্যজুড়ে পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তাঁরা।