শেষ আপডেট: 12th October 2023 14:23
দ্য ওয়াল ব্যুরো, ঝাড়গ্রাম: রাজার বড় প্রিয় হাতি। সেই হাতিই হারিয়ে গিয়েছিল গুপ্তপথের গোলকধাঁধায়। আসলে নিজের রাজ্যকে রক্ষার জন্য রাজপ্রাসাদ থেকে বেশ কিছু গুপ্ত রাস্তা বানিয়েছিলেন ঝাড়গ্রামের রাজা রূপনারায়ণ মল্লদেব। তারমধ্যে অন্যতম ছিল সুকনিবাসার গুপ্ত রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে একদিন রাজার প্রিয় হাতি জঙ্গলে হারিয়ে যায়। রাজা খবর পেয়ে দলবল নিয়ে তাঁর প্রিয় হাতির খোঁজ শুরু করেন। বর্তমান মন্দিরের কাছে গিয়ে দেখেন সেখানে গভীর অরণ্যের মাঝে লতাপাতা দিয়ে বাঁধা আছে হাতি। কিন্তু রাজা শত চেষ্টা করেও ফেরাতে পারলেন না হাতিটিকে। যে হাতি রাজার কথা শুনত, সেই হাতি রাজাকে চিনতেই পারল না।
বিষণ্ণ মনে রাজা শেষমেষ রাজপ্রাসাদে ফিরে আসেন। সেই রাতে রাজা স্বপ্নাদেশ পান। দেবী তাকে জানালেন গুপ্ত পথের পাশেই রয়েছেন তিনি। এখানে তাঁকে সেবা করেন সুকনিবাসার বাসিন্দা শবর পরিবারের নন্দ ভক্তা। নন্দর সঙ্গে কথা বলে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করতে বলেন দেবী। জানালেন, তাহলেই ফিরে পাওয়া যাবে হাতি। পরের দিনই রাজা সুকনিবাসা গিয়ে পৌঁছন। নন্দ ভক্তাকে সব কথা খুলে বলতেই নন্দ জঙ্গলে এসে তুলসী বেলপাতা জল দিয়ে দেবীর পুজো করেন। কথিত, এরপরেই রাজা রূপনারায়ণ মল্লদেব ফিরে পান তাঁর প্রিয় হাতিকে। রাজপ্রাসাদে ফিরিয়ে আসেন তিনি।
এরপরেই দেবীর নির্দেশমতো মন্দির তৈরি শুরু হয় সুকনিবাসায়। যেহেতু গুপ্ত জায়গায় তৈরি, ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর খেমাশুলি ও লোধাশুলির মাঝে দেবীর অধিষ্ঠান গুপ্তমণিদেবী রূপেই। কথিত আছে, এই মন্দিরে পুজোর খরচও নাকি দেবীই জোগাড়ের বন্দোবস্ত করেন। সেই সাড়ে সাতশো বছর আগেই। এ পথে যিনিই যান, দেবীকে প্রণামী দিয়ে গেলে পূর্ণ হয় মনষ্কামনা। এই বিশ্বাসে পাশের রাস্তা ধরে ছুটে চলা সমস্ত গাড়ি থেকে মন্দির লক্ষ্য করে প্রণামী দিয়ে যান ভক্তরা।
এই মন্দিরে পুজোর জন্য কোনও পুরোহিত নেই। তৎকালীন শবর পরিবারের নন্দ ভক্তা যেভাবে পুজো করতেন ঠিক একই রকমভাবে এখনও শবররাই পুজো করে আসছেন। দুর্গাপূজোর সময় এখানে ঘট বসিয়ে পূজা হয় এবং যে মূর্তি এখানে আবির্ভাব হয়েছিল সেই মূর্তিকেই পুজো করেন শবররা। এই মন্দির আজও সন্ধে নামলে ডুবে যায় অন্ধকারে। মন্দিরের ভিতরে আলো জ্বালানো হয় না। কারও কিছু হারিয়ে গেলে এখানে থাকা হাতি ঘোড়ার মাটির মূর্তিতে সুতো বেঁধে দিয়ে যান মানুষ। তাহলেই নাকি তা ফিরে পাওয়া যায়। কলকাতা থেকে মুম্বইগামী ছ-নম্বর জাতীয় সড়কের পাশেই অবস্থিত গুপ্তমণি মন্দির ঝাড়গ্রাম থেকে মাত্র ২৭ কিলোমিটার দূরে। খড়গপুর থেকে এই মন্দিরের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার।