মুস্তাকিন সর্দার
শেষ আপডেট: 24th January 2025 20:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদের আগুন যখন মধ্যগগনে, দুর্গাপুজো যখন কড়া নাড়ছে দরজায়, উৎসব বয়কট করে বিক্ষোভে সামিল হওয়ার ডাক যখন ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের নানা প্রান্তে, তখনই ক্ষোভের বারুদে অগ্নিস্ফূলিঙ্গ স্পর্শ করেছিল জয়নগরের ঘটনায়।
জয়নগরে নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় দোষী মুস্তাকিন সর্দারকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল বারুইপুর পকসো আদালত। ৬১ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা হয়েছিল সেই ঘটনার। এবার সেই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হল ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত মুস্তাকিন। তার দাবি, তাড়াহুড়ো করে বিচারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছিল। গুরুত্ব দিয়ে তার বক্তব্য শোনা হয়নি।
তারিখটা ৪ অক্টোবর। বারুইপুর পুলিশ জেলার জয়নগর থানার মহিষমারি এলাকায় দশ বছরের এক নাবালিকার মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। অভিযোগ ওঠে, মেয়েটির প্রতিবেশী, ১৯ বছরের যুবক মোস্তাকিন সর্দার নির্জন জায়গায় নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে, গলা টিপে খুন করেছে তাকে।
সেই ঘটনারই তদন্ত শুরু হয় যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। ৫ অক্টোবর গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। সিট গঠন করে তদন্তও শুরু হয় ৭ তারিখ থেকে। নেতৃত্বে বারুইপুর পুলিশ জেলার এস.পি পলাশ ঢালী।
এর পরে চার্জশিট জমা পড়ে ঘটনার ২৫ দিনের মাথায়, ৩০ অক্টোবর। এতটুকু সময় নষ্ট না করে, বিচার শুরু হয় ৫ নভেম্বর। মাত্র ২১ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয় বিচারপ্রক্রিয়া।
৬ ডিসেম্বর, সেই ঘটনার ঠিক ৬২ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা হয় অপরাধীর। ফাঁসির আদেশ দেন বারুইপুর জেলা এবং দায়রা আদালতের অধীন পকসো কোর্টের মাননীয় অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট জাজ সুব্রত চট্টোপাধ্যায়।
এর আগে সারা দেশেই এই ধরনের বহু মামলার দীর্ঘসূত্রিতা বারবার সমালোচনার মুখে পড়েছে। এমনকি গোটা দেশকে নাড়িয়ে দেওয়া নির্ভয়া কাণ্ডের সময়েও ‘তারিখ পে তারিখ’ ঘোষণার ক্ষোভ মানুষের মুখে মুখে ঘুরত। কিন্তু এই ঘটনা ব্যাতিক্রম ছিল।
ওই রায়ে যারপরনাই স্বস্তিতে ছিল রাজ্য পুলিশও। সোশ্যাল মিডিয়ার পেজে তারা লিখেছিল, ‘এই রায় নজিরবিহীন। নাবালিকাকে ধর্ষণ-খুনের মামলায় ঘটনার মাত্র ৬২ দিনের মধ্যে অভিযুক্তের ফাঁসির আদেশ এর আগে পশ্চিমবঙ্গে কখনও ঘটেনি। এই মামলার তদন্তে আমাদের একটাই উদ্দেশ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব নির্যাতিতা এবং তার পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়া। মেয়েটি আর ফিরবে না, কিন্ত অভূতপূর্ব দ্রুততায় যে তাকে এবং তার পরিবারকে আমরা 'জাস্টিস' দিতে পেরেছি, দীর্ঘদিন বিচারহীন থাকতে হয়নি, এটুকুই আমাদের সান্ত্বনা, আমাদের প্রাপ্তি।’
তবে এবার সেই রায় ও সাজা ঘোষণার নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ মুস্তাকিন। আগামী সোমবার তার আবেদনের শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।