শেষ আপডেট: 11th June 2024 13:43
দ্য ওয়াল ব্যুরো: একে বাইরে বেরলেই দরদর করে ঘেমে একসা। তার উপর জামাইষষ্ঠীর বাজারে যেন কামারশালার আগুন জ্বলছে। হাপরের মতো নিঃশ্বাসবায়ু ওঠানামা করছে বাবাজীবনের খিদমত পূরণ করতে গিয়ে। মেয়ে, জামাই, সঙ্গে নাতি-নাতনি জুড়লে লজ্জা নিবারণ করতেই শ্বশুরের লজ্জাবস্ত্র খুলে যাওয়ার জোগাড়। তার উপর গিন্নির বায়না রাখতে বাজারে ঢুকলেই ছেঁকা খেতে হচ্ছে হাতে। জামাইষষ্ঠীতে সাতরাজার ধন মানিককে বাতাস করার হাতপাখাও বিকোচ্ছে ন্যূনতম ২৫ টাকা। সঙ্গে লাল ঝালর দেওয়া থাকলে ১২০-১৫০ টাকা।
বিয়ের পর থেকে নাকি জামাইবাবাজির নিজের মায়ের হাতের রান্নার থেকে শাশুড়িমায়ের রান্নাই ভালো লাগে। অতএব সংক্রান্তি শিরে নয়, একেবারে শিরোশ্ছেদ হওয়ার জোগাড়। সারাবছর বাটা মাছ আর চারা পোনা, তেলাপিয়া খাওয়া জামাইয়ের রসনা তৃপ্তিতে আনতে হবে নানাবিধ মাছ, ফল, মিষ্টি।
কিন্তু, কী কিনবেন? সরু চালের ভাত বা বাসমতী চালের প্যাকেট ১২০ টাকা থেকে ১৭০ পর্যন্ত দৌড়চ্ছে। ইলিশ মাছ এক কেজি থেকে বারোশো ওজনের হলে ১৭০০-২০০০ টাকা কেজিদর। বাগদা এক বিঘত সাইজের হলে ১২০০-১৫০০ টাকা। গলদা হাজার রানের গন্ডি পেরিয়ে গিয়েছে। পারশে ৭৫০, ভেটকি প্রমাণ সাইজের হলে ওই দাম, একটি ছোট হলে ৬৫০। ভেটকি ফিলে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা কেজি। চাপড়া চিংড়ি একটু বড় হলে ৪৫০ টাকা।
জামাইষষ্ঠীতে কি দ্বিপদী পাখির মাংস খাওয়ানো যায়! লজ্জায় মাথা কাটা যাবে না? কাটা খাসি সার সার ঝুলছে মাংসের দোকানে। যা দেখে নিজেকেই যেন দেখতে পাচ্ছেন বৃদ্ধ অপারগ শ্বশুরমশাই। কোলস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, ইউরিক অ্যাসিডের আক্রমণে বহুদিন রেডমিট পেটে পড়েনি। তাই...৮৪০ টাকা কোথাও, কোথাও ৮৫০ টাকা কেজি।
১০ টাকার মিষ্টি অনেকদিন আগেই বিলুপ্তপ্রায়। ১৫ টাকায় গুলির মতো সাইজের মিষ্টি কোনও কোনও স্থানীয় দোকানে পাওয়া যায়। কিন্তু, বাবাজীবনের আবার আম সন্দেশ, শেষ পাতে মিষ্টি দই না হলে দুপুরে এসি চালিয়ে ঘুমটা ভালো আসে না। মুখশুদ্ধি হিসেবে ২৫ টাকা দামের তবকে মোড়া একটা মিষ্টি পান মুখে দিয়ে দিবানিদ্রা সেরে শাশুড়িমায়ের গুছিয়ে দেওয়া রাতের পিন্ডি নিয়ে তবে বাড়ি যাওয়া।
দরজাটা বন্ধ করার সময় তাই মুখ থেকে স্বাভাবিক প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় বেরিয়ে আসবে জামাইবাবা বাড়ি যা। আর এইমাত্র যিনি বেরলেন, তাঁর হাসিতেই প্রত্যুত্তর ছিল, আসছে বছর আবার হবে!