শেষ আপডেট: 13th June 2023 07:35
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতে কৃষক আন্দোলনের ধাক্কা সামলাতে বেসামাল হয়ে গিয়েছিল কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই সময়ে বেশ কিছু টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার জন্য মোদী সরকার চাপ দিয়েছিল বলে দাবি করলেন এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের প্রাক্তন সিইও জ্যাক ডরসি।
জ্যাকের অভিযোগ, ওই সব অ্যাকাউন্ট বন্ধ না করলে টুইটার বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল ভারত। এমনকি টুইটারের কর্মচারীদের বাড়িতে হানা ও তল্লাশির হুমকিও দেওয়া হয়েছিল বলে তাঁর দাবি।
একটি ইউটিউব চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডরসি। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন তিনি। ওই সাক্ষাৎকারে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, টুইটারকে কি কখনও কোন দেশ বা রাজনৈতিক শক্তির চাপের মুখে পড়তে হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ডরসি বলেন, “ভারতের কথাই ধরা যাক। ভারতে কৃষক আন্দোলন চলার সময় সরকারের থেকে অনেক অনুরোধ এসেছিল, কিছু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে হবে। বিশেষ করে কিছু সাংবাদিকদের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলেছিল যাঁরা সরকারের সমালোচনা করছিলেন।” এখানেই না থেমে খোঁচা দিয়ে জ্যাক বলেছেন, “এটাই আসলে গণতান্ত্রিক ভারত”।
জ্যাকের এই অভিযোগকে সামনে রেখে সরকারকে চেপে ধরতে নেমে পড়েছে কংগ্রেস সহ ঘরোয়া রাজনীতির বিরোধীরা। আবার কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রাজীব চন্দ্রশেখর দাবি করেছেন, ডাহা মিথ্যা কথা বলছেন জ্যাক ডরসি। লাগাতার ভারতীয় আইন লঙ্ঘন করছিল টুইটার।
জ্যাক ডরসির সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় অমিত মালব্য বলেন, টুইটারের প্রাক্তন কর্তার মন্তব্য অপ্রত্যাশিত নয়। ডরসির সময় টুইটার একটি অত্যন্ত নীচ প্রকৃতির সংস্থায় পরিণত হয়েছিল যারা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি বিন্দুমাত্র সম্মান প্রদর্শন করত না, বাক্স্বাধীনতার অপব্যবহার, এবং বহু ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কণ্ঠস্বর প্রচার করার কাজে নিয়োজিত ছিল। এরকম ভাবার কোনও কারণ নেই যে টুইটার সবসময়ই সঠিক এবং অন্যান্য দেশের সরকার এমনকী সংস্থার নিজের দেশ আমেরিকা বেঠিক।
মালব্য আরও লেখেন, সত্যি কথা হল টুইটার ২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে একের পর এক আইন ভেঙেছে, কিন্তু তারপরেও টুইটারকে কোনও জায়গায় বন্ধ করা হয়নি, বা তাদের কোনও কর্মীকে জেলে পোড়া হয়নি। বরং ডরসি এবং তাঁর সহকর্মীরা এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যা ভারত সরকারের আইন বিরুদ্ধ। ভারতের মতো বিশাল বাজারে তারা যদি ব্যবসা চালাতে চায় তাহলে ভারত সরকারের আইন মেনেই তা করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে বিরোধীদের সমালোচনা করে মালব্য তাঁর টুইটে লিখেন, প্রশ্ন হল কংগ্রেস সহ বিরোধীরা মেরুদণ্ডহীন মিথ্যেবাদীর সত্যের অপলাপ নিয়ে এত উত্তেজিত হয়ে উঠল কেন? যারা ভারত বিরোধী কথা বলে তাদের প্রতি এদের এত দায়বদ্ধতা কীসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত একটি সরকারকে অপদস্থ করার কারণ কি বিদেশি মুদ্রার আকাঙ্ক্ষা?
জ্যাকের এই সাক্ষাৎকারের ভিডিও ফুটেজ নিয়ে সরব হয়েছে কংগ্রেস। নিজেদের টুইটার অ্যাকাউন্টে সেই সাক্ষাৎকার পোস্ট করেছে তারা। অন্যান্য মহলেও এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে।
২০২০ সালে মোদী সরকার সংসদে তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন পাশ করেছিল। তার তীব্র বিরোধিতায় নেমে পড়েছিল কৃষক সংগঠনগুলি। অবশেষে চাপের মুখে পড়ে বিতর্কিত ওই তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় মোদী সরকার।