Date : 22nd May, 2025 | Call 1800 452 567 | info@thewall.in
Md Yunus: ইউনুস কি সরছেন, নাকি উপদেষ্টাদের সরাচ্ছেন? ঢাকায় জল্পনা তুঙ্গে, তৎপর সেনাও'যেমন মোক্ষ', ওয়াকফ শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে মিশে গেল হিন্দু-মুসলমান-খ্রিস্টাননেপালে হনিমুনে গিয়ে স্ত্রী-হারা অনুভব, ঠিক সন্ধে নামার আগে ঘটল দুর্ঘটনা!জাপানে পাড়ি দিচ্ছে জৈবসারে ফলানো হুগলির কাঁচালঙ্কাবয়স বাড়লেও আর কাবু হবেন না! এই প্রোটিনের এক ডোজেই নাকি মুশকিল আসান?দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিয়ে তাঁর নতুন ছবির সাফল্য চাইলেন কাজলআত্মঘাতী হরিণঘাটার তৃণমূল কাউন্সিলর, পার্টি অফিসেই ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার দ্য অ্যাস্টরের কাবাব-এ-কিউ রেস্তরাঁর মোস্ট পপুলার প্ল্যাটার কী, জানা আছে?রাজ্যজুড়ে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস, বঙ্গোপসাগরেও নিম্নচাপের ইঙ্গিত'স্বাতীদি আমার শিক্ষিকা, আবার আমার ছবির নায়িকাও, 'নান্দীকার' দিয়েই শুরু করেছিলাম'

সংক্রমণ থেমে গেছে, মৃত্যু নেই, কোন জাদুতে করোনা-মুক্ত মধ্যপ্রদেশের জবলপুর

দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজস্থানের ভিলওয়াড়ার মতো বড়সড় কর্মসূচী নয়। কেরলের পাথানামথিট্টার মতো আয়োজনও নয়। আগ্রার ক্লাস্টার কন্টেনমেন্ট মডেল তখনও জানা ছিল না জবলপুরের। শুধুমাত্র সম্মিলিত প্রয়াস, ছোট ছোট কর্মসূচী, নিয়ম মেনে সকলে মিলেমিশেই হারিয়ে দি

সংক্রমণ থেমে গেছে, মৃত্যু নেই, কোন জাদুতে করোনা-মুক্ত মধ্যপ্রদেশের জবলপুর

শেষ আপডেট: 21 April 2020 18:30

দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাজস্থানের ভিলওয়াড়ার মতো বড়সড় কর্মসূচী নয়। কেরলের পাথানামথিট্টার মতো আয়োজনও নয়। আগ্রার ক্লাস্টার কন্টেনমেন্ট মডেল তখনও জানা ছিল না জবলপুরের। শুধুমাত্র সম্মিলিত প্রয়াস, ছোট ছোট কর্মসূচী, নিয়ম মেনে সকলে মিলেমিশেই হারিয়ে দিয়েছে মারণ ভাইরাসকে। গোটা মধ্যপ্রদেশে যখন করোনা সংক্রামিতের সংখ্যা উদ্বেগের কারণ, তখন জবলপুরে করোনা রোগী হাতে গোনা। সেই মার্চেই শেষ সংক্রামিতের খোঁজ মিলেছিল। নতুন আক্রান্ত একজনও নেই। যাঁদের রোগ ধরা পড়েছিল তাঁরাও সুস্থ হওয়ার পথে। বড় বড় জেলা, শহরের তুলনায় জবলপুরের সাফল্যের কথা কিন্তু ব্রাত্যই থেকে গেছে। ভিলওয়াড়া মডেল, কেরল ও আগ্রা মডেলের চর্চা সর্বত্র, অথচ করোনাকে হারিয়ে জবলপুর যে নজির গড়েছে সে কথা এখনও খুব একটা সামনে আসেনি। করোনা ধরা পড়েছিল সেই ২০ মার্চ। মধ্যপ্রদেশে প্রথম জবলপুরেই মিলেছিল করোনা রোগীর খোঁজ। সেই সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ে। এক থেকে সংক্রামিতের সংখ্যা দশে পৌঁছনোর পরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২০ মার্চ থেকে আজ অবধি জবলপুরে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ২০ জন। মৃত্যু একটিও নেই। সংক্রামিতদের মধ্যে আবার অনেকে সুস্থ হওয়ার পথে। এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী আজ বুধবার অবধি মধ্যপ্রদেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৫২, মৃত্যু হয়েছে ৭৬ জনের। কীভাবে করোনা লড়াইয়ে জিত হল জবলপুরের?

লকডাউন, ওয়ার রুম, সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং

গোটা দেশ লকডাউনে যাওয়ার চারদিন আগেই কার্ফু জারি করা হয়েছিল জবলপুরে। সেই ২০ মার্চ থেকেই গোটা জবলপুরকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছিল সুরক্ষা কবচে। জেলাশাসক ভারত যাদব ও পুলিশ সুপার অমিত সিংয়ের তত্ত্বাবধানে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ঠিক করে ফেলা হয়েছিল প্রাথমিক কর্মসূচী। সবচেয়ে আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল স্কুল-কলেজ। তারপর অফিস, দোকান-বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল থেকে ছোটখাটো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। গণপরিবহন থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রথম দিনেই। বাসস্টপ, রেল স্টেশনে মোতায়েন করা হয়েছিল পুলিশবাহিনী। একজনও যাতে রাস্তায় বেরিয়ে বাস বা ট্রেনে চাপতে না পারে, সে দিকে ছিল কড়া নজর। জবলপুরের স্মার্ট সিটি ইনটিগ্রেটেড কম্যান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমকে (ICCC)বানিয়ে ফেলা হয়েছিল ‘করোনা ওয়ার রুম।’ প্রশাসনের আধিকারিক, পুলিশ কর্মীদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল করোনা-টিম। ওয়ার রুমে তৎপর ছিলেন ১০০ জনের বেশি অপারেটর যাঁদের কাজ ছিল হেল্পলাইন নম্বর চারদিকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং সাধারণ মানুষকে জরুরি অবস্থা সম্পর্কে সচেতন করা। কারও মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে অথবা অসুস্থ হওয়ার খবর মিললে সঙ্গে সঙ্গেই ওই হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে যোগাযোগ করার কথা বলা হয়েছিল। পুলিশ সুপার অমিত সিং জানিয়েছেন, এই পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে সংক্রমণ সন্দেহে আসা অনেক রোগীকেই চটপট স্ক্রিনিং করে ফেলা সম্ভব হয়েছিল।

আরও পড়ুন: সংক্রমণ রোধে দেশের প্রথম ‘ক্লাস্টার মডেল’ আগ্রায়, করোনা লড়াইয়ে সাফল্যের নজির গড়ছে ঐতিহাসিক শহর

পরবর্তী পর্যায়ে ছিল সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং এর নিয়ম বোঝানো। প্রশাসনের তরফে নির্দেশিকা জারি করে সমস্ত রকম জমায়েত, মিটিং, মিছিল, অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পারিবারিক অনুষ্ঠান হোক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান সবেতেই জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা। ধর্মীয় স্থানগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।  

হটস্পট চিহ্নিত করে র‍্যাপিড স্ক্রিনিং

জবলপুরের যে যে জায়গায় করোনা রোগীর খোঁজ মিলেছিল, সেই জায়গাগুলিকে হটস্পট চিহ্নিত করে ফেলা হয়। তারপর বাড়ি বাড়ি ঘুরে শুরু হয় সার্ভে ও স্ক্রিনিং। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অনেক আগেই কন্টেনমেন্ট প্ল্যান নেওয়া হয়েছিল জবলপুরে। ছোট ছোট এলাকাকে চিহ্নিত করে সেখানে লোকজনের র‍্যাপিড টেস্ট শুরু হয়েছিল। এইভাবে কম সময়ের মধ্যে অনেকগুলি জায়গায় রোগীদের খুব দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল। জেলাশাসক ভারত যাদব বলেছেন, জবলপুরেও উপসর্গহীন রোগীর খোঁজ মিলেছিল সেই মার্চেই। তখন থেকেই কন্টেনমেন্ট প্ল্যান নিয়ে র‍্যাপিড স্ক্রিনিং শুরু করার ফলে তাঁদের চটজলদি চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। সেই কারণেই সংক্রমণ বড় আকারে ছড়াতে পারেনি জবলপুরে। একটা পর্যায়ের পরে সংক্রমণ একটা নির্দিষ্ট সংখ্যাতেই থেমে গেছে। গত দু’সপ্তাহের মধ্যে নতুন আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি বলেই জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: করোনা জয় করেছে ‘ভিলওয়াড়া মডেল’, মৃত্যু থেমেছে, সংক্রমণ নেই, নজির গড়েছে রাজস্থানের জেলা

‘ওয়ার্ক ফর্ম হোম’ ও  ‘প্রডিউস ফর্ম হোম’

জবলপুরে অনেক আগ থেকেই ওয়ার্ক ফর্ম হোম শুরু হয়ে যায়। স্কুল, কলেজের পড়াশোনা থেকে অফিসের কাজ, ব্যবসা, সবই বাড়িতে বসে করারই নির্দেশ দেওয়া হয় প্রশাসনের তরফে। প্রত্যেক পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, মুদির বাজার কী কী দরকার তার একটা তালিকাও তৈরি হয়। প্রত্যেক বাড়িতেই রেশন পৌঁছে দেওয়া শুরু হয় প্রশাসনের তরফে। কোনও কারণে ওষুধ বা অন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দরকার পড়লে সেটাও হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে জানাতে বলা হয়। বাড়ি বাড়ি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি টিমও তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: করোনা সংক্রমণ রুখে দিয়েছে পাথানামথিট্টা, আশার আলো দেখাচ্ছে কেরল মডেল

মাস্ক বানানো শুরু হয় শহরের জামাকাপড়ের দোকান, ফ্যাশন হাউসগুলোতে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য মাস্ক, পিপিই বানানোর কাজও শুরু হয়। ‘প্রডিউস ফর্ম হোম’ পলিসির কর্মসূচী ঠিক করার জন্য সেল্ফ-হেল্প গ্রুপ তৈরি হয়। ন্যাশনাল রুরাল লাইভলিহুড মিশন (NRLm)নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যেরা ৭০ হাজার মাস্ক তৈরি করে হাসপাতাল-নার্সিংহোমগুলিতে পাঠিয়ে দেন। জেলাশাসক বলেছেন, শহরের বেশিরভাগ মাস্ক, পিপিই ও সুরক্ষার সরঞ্জাম এখানকার লোকজনেরই বানানো। বাইরে থেকে আমদানি খুবই কম করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আজ অবধি জবলপুরে সংক্রমণের আর কোনও খবর মেলেনি। আগামীদিনে গোটা জবলপুরকেই ভাইরাস-মুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে।

ভিডিও স্টোরি