শেষ আপডেট: 20th July 2023 06:42
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০ জুলাই ১৯৬৯ (International Moon Day 2023)। সফল হল নাসার চন্দ্রাভিযান। ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটের পিঠে চেপে চাঁদে পৌঁছল ‘অ্যাপোলো ১১।’ প্রথম চাঁদের মাটিতে পা দিলেন কম্যান্ডার নীল আর্মস্ট্রং এবং বাজ অলড্রিন। চন্দ্র পৃষ্ঠের রুক্ষ পাথুরে ভূমিতে উড়ল মার্কিন পতাকা। মানবসভ্যতার ইতিহাসে শুরু হল এক নতুন অধ্যায়।
ক্যালেন্ডারের পাতায় ২০ জুলাই দিনটাকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। ‘বিশ্বের প্রথম দুই মানুষ’ হিসেবে সেই দিনই ইতিহাসের পাতায় ঢুকে পড়লেন ওই দুই মার্কিন মহাকাশচারী। বিশ্বজোড়া অভিনন্দনে ভেসে গেলেন তাঁরা। তার পরে কেটে গিয়েছে ৫৪টা বছর। আরও অজস্র মহাকাশযান পাড়ি দিয়েছে চাঁদে। স্মরণীয় হয়েছেন আরও অনেক মহাকাশচারী। তবে ইতিহাসের সেই শুরুর দিনটা আজও সযত্নে ধরা আছে স্মৃতির পাতায়।
প্রথম চন্দ্রাভিযানের ৫৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সে দিনের জার্নির স্মৃতিচারণ করছে নাসা (International Moon Day 2023)। অ্যাপোলো ১১-এর উৎক্ষেপণের অ্যানিমেশন ভিডিও বানিয়ে তিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং, এডুইন (বাজ) অলড্রিন এবং মাইকেল কলিনসকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছে গুগল।
১৬ জুলাই ফ্লোরিডার মেরিট আইল্যান্ডের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটের পিঠে চেপে চাঁদের রওনা দেয় অ্যাপোলো লুনার মডেল ‘ঈগল।’ চার দিন পরে ২০ জুলাই চাঁদের কক্ষপথে পৌঁছয় মহাকাশযান অ্যাপোলো। ৬ ঘণ্টা ৩৯ মিনিট পরে প্রথম চাঁদে পা রাখেন মার্কিন মহাকাশচারী নীল আর্মস্ট্রং। তার ঠিক ১৯ মিনিট পরে নামেন এডুইন অলড্রিন। সব শেষে নামেন পাইলট মাইকেল কলিনস। চাঁদে মানুষের প্রথম পদার্পনের খবর সম্প্রচারিত হয় বিশ্বজুড়ে। যদিও ‘অ্যাপোলো-১১’-এর সেই চন্দ্রাভিযানের ছবি এবং ভিডিও বেশ কিছুদিন পরে সামনে এনেছিল নাসা।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা স্পেসক্রাফ্টের বাইরে চন্দ্র-সফর করেছিলেন আর্মস্ট্রং ও অলড্রিন। চাঁদের পিঠ থেকে কুড়িয়ে এনেছিলেন ৪৭.৫ পাউন্ড (২১.৫ কেজি) নমুনা বা ‘লুনার মেটিরিয়াল।’
পৃথিবী থেকে উৎক্ষেপণ এবং ফের পৃথিবীতে অবতরণ— এই মিশনটা সম্পূর্ণ হতে মোট সময় লেগেছিল ৮ দিন ৩ ঘণ্টা এবং ১৮ মিনিট। ফিরে এসে তিন মহাকাশচারীই জানিয়েছিলেন, নমুনা সংগ্রহ চাঁদের ‘ট্র্যানকুইলিটি বেস’-এ তাঁরা পৃথিবীর সময়ের মোট ২১ ঘণ্টা ৩১ মিনিট সময় কাটিয়েছিলেন। পৃথিবীতে ফিরে এসেছিলেন ২৪ জুলাই।
নাসার ‘অ্যাপোলো প্রোগ্রাম’নিয়ে চর্চা বিস্তর হয়েছে। নিল আর্মস্ট্রং, বাজ অলড্রিনরা সত্যিই চাঁদের মাটিতে নেমেছিলেন কি না, সেই নিয়ে নানা সময়ে তর্ক-বিতর্ক চলেছে (International Moon Day 2023)। মানবসভ্যতার সেই ‘প্রথম চন্দ্র-বিজয়’-এর যাবতীয় ছবি ও ভিডিয়ো যা নাসা সামনে এনেছিল, সেটা আদতে সত্যি ছিল না ধাপ্পা, সেই নিয়ে চর্চা এখনও রয়েছে। এমনকি খোদ আমেরিকাও প্রথম চন্দ্রাভিযানের সত্যতাকে নস্যাৎ করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেছে নেওয়া তাঁর বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উপদেষ্টা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ডেভিড গেলার্নটার এক সময়ে ঘোষণা করেছিলেন চাঁদের মাটিতে নাকি পাই রাখেননি নীল আর্মস্ট্রং। শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের নানা দেশের বিজ্ঞানীমহলে এ বিষয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। প্রমাণ হিসেবে বলা হয়েছিল, চাঁদের মাটিতে পোঁতা মার্কিন পতাকা দেখে মনে হয়েছে সেটি যেন হাওয়ায় নড়ছে। অথচ বায়ুমণ্ডল নেই, তাই বাতাস-হীন চাঁদের মাটিতে পতাকা উড়ছে কী ভাবে?
দ্বিতীয়ত, চাঁদে আলোর উৎস একটাই। সূর্য। কিন্তু, নাসার প্রকাশিত ছবিতে বিভিন্ন বস্তুর বিভিন্ন রকমের ছায়া দেখা গিয়েছে। যা একমাত্র সম্ভব আলোর একাধিক উৎস থাকলে। নাসার দাবি ছিল, চাঁদের বুকে সূর্যের আলো পাহাড়ে প্রতিফলিত হয়ে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল।
তৃতীয়ত, চন্দ্রাভিযানের ছবি প্রকাশের পর আরও একটি প্রশ্ন ওঠে। চন্দ্রাভিযানের যে ছবি নাসা প্রকাশ করেছিল, তাতে দেখা গিয়েছিল মহাকাশচারীর হেলমেটের কাচে একটি অস্পষ্ট ছবি ধরা পড়েছে। যেখানে দড়ি বা তারে ঝুলছে কোনও একটি বস্তু। এমন দৃশ্য নাকি ফিল্ম স্টুডিওয় দেখা যায় বলে দাবি করেছিল বিজ্ঞানীদের একাংশ। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি আরও ছিল। বিজ্ঞানীদের প্রশ্নের সপক্ষে নানা প্রমাণও পেশ করেছিল নাসা।
১৬ জুলাই, ১৯৬৯ পৃথিবীর মাটি ছেড়েছিল ‘অ্যাপোলো ১১।’ ঘটনাচক্রে চার দিন আগে ১৫ জুলাই চন্দ্রাভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিল ভারত। তবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে থমকে যায় ‘চন্দ্রযান ১’-এর উৎক্ষেপণ। ‘অ্যাপোলো ৫০: গো ফর দ্য মুন’-এর আবহেই ফের চাঁদে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর চন্দ্রযান-৩। তৃতীয় চন্দ্রযান পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের মায়া কাটিয়ে চাঁদের পথ ধরে নিয়েছে। চন্দ্রযান-২ পুরোপুরি সফল হয়নি। সেই ব্যর্থতার গ্লানি কাটিয়ে ভারত কি পারবে চাঁদের মাটিতে নিজেদের বিজয় পতাকা ওড়াতে! সেই প্রতীক্ষারই প্রহর গুনছেন কোটি কোটি ভারতবাসী।