দ্য ওয়াল ব্যুরো: শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে উড়বে ইজরায়েলের উপগ্রহ। মহাকাশবিজ্ঞানীদের বানানো হয়, এই কৃত্রিম উপগ্রহ বানিয়েছেন ইজরায়েলের স্কুল পড়ুয়ারা। ডুচিফ্যাট ৩— ন্যানো-স্যাটেলাইট পিঠে চাপিয়ে মহাকাশে পাড়ি দেবে ইসরোর রকেট।
ডুচিফ্যাট সিরিজের এটা তৃতীয় উপগ্রহ। ইজরায়েলের জাতীয় পাখির নামেই নামকরণ হয়েছে এই কৃত্রিম উপগ্রহের। এর আগেও ডুচিফ্যাট ১ এবং ডুচিফ্যাট ২ বানিয়েছিলেন ইজরায়েলের শা’র হ্যানেগেফ হাই স্কুলের পড়ুয়ারা। সেই উপগ্রহ মহাকাশে নিয়ে গিয়েছিল নাসা। এবার ইজরায়েলি পড়ুয়াদের হয়ে সেই দায়িত্ব পালন করবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র ইসরো। ডুচিফ্যাট ন্যানো-স্যাটেলাইট নিয়ে আগামীকালই ভারতে আসছেন অ্যালোন আব্রামোভিচ, মেইতাভ আসুলিন এবং স্যামুয়েল আভিভ লেভি। প্রত্যেকেরই বয়স ১৭-১৮ বছরের মধ্যে। ১১ ডিসেম্বর পড়ুয়াদের বানানো এই কৃত্রিম উপগ্রহ নিয়ে ডানা মেলবে ইসরোর পিএসএলভি সি-৪৮ রকেট।
ইজরায়েলের হার্জলিয়া সায়েন্স সেন্টার ও শা’র হ্যানেগেফ হাই স্কুলের যৌথ উদ্যোগে এই কৃত্রিম উপগ্রহ বানিয়েছেন অ্যালোন, মেইতাভ ও স্যামুয়েল। ১০*১০*৩০ সেন্টিমিটার এবং ২.৩ কিলোগ্রাম ওজনের এই কৃত্রিম উপগ্রহটি বানাতে সময় লেগেছে আড়াই বছর। অ্যালোন বলেছেন, এই উপগ্রহের কাজ মূলত ছবি তোলা। মহাকাশ থেকে পৃথিবীর ইকোসিস্টেমের দিকে নজর রাখবে ডুচিফ্যাট ৩। আবহাওয়ার খবর দেওয়ার মতো প্রযুক্তিও রয়েছে এই ন্যানো-স্যাটেলাইটের।

ইজরায়েলি স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, হাইস্কুলের পড়ুয়াদের বানানো ডুচিফ্যাট ৩ জলবায়ু বদলের খবর দেবে। পরিবেশ দূষণ রোধের গবেষণায় কাজে লাগবে এই উপগ্রহের পাঠানো তথ্য। অ্যালোন বলেছেন, “হার্জলিয়া স্পেস সেন্টারের ৫০ জন এবং আমাদের স্কুলের ১০ জন মিলে এই উপগ্রহের নকশা বানিয়েছিলাম। আমাদের উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ইসরোর উপরেই ভরসা রেখেছি আমরা। ভারতীয় মহাকাশবিজ্ঞানীদের সাফল্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাই আমাদের আবিষ্কারের সার্থকতা ইসরোর হাত ধরেই হোক সেটাই চাই। ”

২০১৭ সালে ইজরায়েলের প্রায় ৮০ জন পড়ুয়া বানিয়েছিলেন ডুচিফ্যাট ২। পড়ুয়াদের এই উৎসাহে পাশে দাঁড়িয়েছিল হার্জলিয়া সায়েন্স সেন্টার। ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল সেই উপগ্রহের। ১.৮ কিলোগ্রাম ওজনে সেই স্যাটেলাইট এখনও মহাকাশ গবেষণার কাজে লাগাচ্ছে ইজরায়েলের স্পেস এজেন্সি। কিউবি৫০ থার্মোস্ফিয়ার রিসার্চ প্রোগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই ডুচিফ্যাট ২।
[caption id="attachment_166700" align="aligncenter" width="969"]
ডুচিফ্যাট ১[/caption]
২০১৪ সালে ইজরায়েলি পড়ুয়াদের বানানো ডুচিফ্যাট ১ নিয়ে মহাকাশে ডানা মেলেছিল নাসার রকেট। পৃথিবীর কক্ষপথে এখনও পাক খাচ্ছে ডুচিফ্যাট ১।
গত ২৭ নভেম্বর পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল ‘পিএসএলভি-সি৪৭’-এর পিঠে চেপে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে ইসরোর কার্টোস্যাট ৩। এই নজরদারি উপগ্রহকে বসানো হয়েছে পৃথিবীর ৫০৯ কিলোমিটার কক্ষপথে, ৯৭.৫ ডিগ্রি কৌণিক অবস্থানে। একই সঙ্গে আমেরিকার ১৩টি কৃত্রিম উপগ্রহকে পাঠানো হয়েছে ‘সান সিনক্রোনাস অরবিট (SSO)’-এ। কার্টোস্যাট ২ মিশনের সাফল্যের পরে কার্টোস্যাট ৩ ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে বড় মাইলফলক বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এই নজরদারি উপগ্রহের কাজ যেমন আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতির হাল হকিকত জানানো, তেমনই দেশের প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া। কার্টোস্যাট ৩ উপগ্রহের কাজ হবে সীমান্তে কড়া নজরদারি রাখা। এর হাই রেজোলিউশন ক্যামেরা যেহেতু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুকেও নজরে আনতে পারে, তাই শত্রুপক্ষের সেনাঘাঁটি বা জঙ্গিদের গোপন ঘাঁটিগুলির উপর মহাকাশ থেকে নিখুঁত ভাবে নজরদারি চালাতে পারবে কার্টোস্যাট ৩। এর ক্যামেরায় ধরা পড়বে জঙ্গিদের বন্দুক, বাঙ্কারও। গাছপালার আড়ালে লুকিয়ে থাকা শত্রুদের গোপন সুড়ঙ্গও চিহ্নিত করবে এই উপগ্রহ।