শেষ আপডেট: 3rd August 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাকিস্তানের জেলের চরবৃত্তির অভিযোগে বন্দি কুলভূষণ যাদবকে আইনি সাহায্য দেওয়ার সব রাস্তাই বন্ধ করে দিচ্ছে পাকিস্তান, দিনকয়েক আগেই তোপ দেগেছিল ভারত। একদিকে যেমন ভারতীয় কূটনীতিকদের ঠিকমতো কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না, অন্যদিকে কুলভূষণের জন্য আইনজীবী নিয়োগের পথেও বাধা তৈরি করা হচ্ছে। এইভাবে আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের রায় মানছে না পাকিস্তান। ভারতের অভিযোগের পাল্টা ইসলামাবাদের হাইকোর্ট এদিন জানায়, কুলভূষণের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করতে পারে ভারত। তাদের আরও একটা সুযোগ দেওয়া হোক। গত ১৬ জুলাই কুলভূষণের সঙ্গে শেষবার দেখা করতে দেওয়া হয় ভারতীয় কূটনীতিকদের। এরপরেই বিদেশ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, কুলভূষণের সঙ্গে ঠিকমতো কথা বলতে দেওয়াই হয়নি ভারতীয় কূটনীতিকদের। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি পেশের জন্য কুলভূষণের হাতে কোনও নথি তুলে দেওয়া যায়নি। এমনকি কুলভূষণের মামলা সংক্রান্ত নথি চাইলেও ভারতীয় কুটনীতিকদের তা দেয়নি ইসলামাবাদ। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, ইসলামাবাদ জানায় পাক আইনজীবী নিয়োগ করলেই তার হাতে নথি তুলে দেওয়া যাবে। সেই মতো আইনজীবী নিয়োগ করে হাইকোর্টে আর্জি পেশের চেষ্টাও করে ভারত। কিন্তু পাক আইনজীবী জানান, সরকারের অনুমতি ছাড়া হাইকোর্টে কোনও রকম আর্জি পেশ করা সম্ভব নয়। শ্রীবাস্তবের দাবি, গত এক বছরে কুলভূষণের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়ার জন্য অন্তত ১২ বার পাকিস্তানকে অনুরোধ করেছে ভারত। কিন্তু প্রতিবারই সেই আবেদন নাকচ করেছে পাকিস্তান। কূলভূষণ মামলায় নানাভাবে বাধা তৈরি করার চেষ্টা করে চলেছে তারা। গত মাসেই পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল আহমেদ ইরফান সংবাদমাধ্যমের সামনে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিলেন, চরবৃত্তির অভিযোগে পাকিস্তানের জেলে বন্দি কুলভূষণ নাকি সামরিক আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য নতুন করে আর্জি জানাতে চান না। অ্যাটর্নি জেনারেলের দাবি ছিল, গত ১৭ জুন কুলভূষণকে নাকি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য তিনি আর্জি জানাতে চান কিনা। কিন্তু তিনি তা করতে রাজি হননি। বরং পাক সরকারের কাছে তিনি প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে চান। ইসলামাবাদের এই দাবির পরেই ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, সবটাই পাকিস্তানের নতুন নাটক। বিদেশমন্ত্রকের মুখুপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, কুলভূষণ বরাবরই বলে এসেছেন তিনি নিরপরাধ। চরবৃত্তির অভিযোগে তাঁকে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। কোনও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি যদি নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করতে চান, তাহলে তিনি রিভিউ পিটিশনের আর্জি করবেন। প্রাণভিক্ষার আবেদন করা মানে তো অভিযোগ মেনে নেওয়া। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, পাকিস্তানের সেনা কারাগারে কুলভূষণের উপর চাপ দেওয়া হয়েছে। তিনি নিগ্রহের শিকার। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় অমান্য করার জন্য চাপ দিয়ে কুলভূষণকে মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি থেকে বিরত রাখা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে পাকিস্তানের জেলে বন্দি আছেন ভারতের নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার ৪৯ বছরের কুলভূষণ যাদব। ২০১৬-র মার্চে তাঁকে গ্রেফতার করে পাক নিরাপত্তাবাহিনী। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানের সেনা আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। ভারতের বক্তব্য, কুলভূষণ ব্যবসার কাজে ইরানে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানের গুপ্তচররা সেখান থেকে তাঁকে অপহরণ করে। পাকিস্তানের অভিযোগ, কুলভূষণ গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার জন্য বালুচিস্তানে ঢুকেছিলেন। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ভারত আন্তর্জাতিক ন্যায় আদালতের শরণাপন্ন হয়। তাদের অভিযোগ ছিল, ভারতীয় দূতাবাসের কোনও কর্মীর সঙ্গে কুলভূষণকে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে পাকিস্তান ভিয়েনা কনভেনশনে গৃহীত নীতি অমান্য করছে। আন্তর্জাতিক আদালতও ভারতের পক্ষে রায় দেয়। আদালতের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, ভারতীয় কনস্যুলেটের কর্মীদের সঙ্গে কুলভূষণকে দেখা করার অনুমতি দিতে হবে। বন্দি হিসাবে তাঁর কী অধিকার আছে, তাও জানাতে হবে। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ গুরুত্বের সঙ্গে পুনর্বিবেচনা করুক পাকিস্তান। যতদিন না ফের বিবেচনা করা হচ্ছে, ততদিন কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড যেন কার্যকর না হয়।