শেষ আপডেট: 11th November 2023 16:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তখন ক্লাস ইলেভেন। অন্য মেয়েরা মগ্ন নিজের জীবনটাকে সুন্দর করে সাজানোর স্বপ্নে। সেই সময় ছবিলার দু’চোখ জুড়ে শুধুই এক মায়াময় স্বপ্নপুরী। সংসারে ব্রাত্য মহিলাদের সমাদরের ঠাঁই তৈরির ইচ্ছেটা বড় হতে হতেও জিইয়ে রেখেছিলেন। সিউড়ি থানার সাইবার ক্রাইম বিভাগের কর্মী ছবিলা খাতুনের সেই স্বপ্নপুরী এখন ২২ জন মায়ের নিশ্চিন্ত আশ্রয়।
রাস্তাটা কিন্তু মসৃণ ছিল না মোটেই। ছবিলার কথায়, “ছোট থেকে যে স্বপ্নটা দেখতাম, পুলিশে চাকরি করতে এসে সেটা আরও জোরদার হয়। থানার ডিউটি করতে গিয়েই দেখেছি সমাজ-সংসারের জাঁতাকলে পড়ে এক-একজন মহিলার কী দুঃসহ পরিস্থিতি। আমার অনেক ভাগ্য যে তাঁদের জন্য একটা আশ্রয় গড়তে পেরেছি আমি।”
কাজটা কিন্তু সহজ ছিল না মোটেই। একার উদ্যোগে এমন কিছু গড়তে গিয়ে বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে। তবু দমে যাননি। এর থেকে তার থেকে ধার করে দাঁড় করিয়েছেন তাঁর স্বপ্নপুরী। একে একে এসেছেন নিরাশ্রয় মহিলারা। সমাজ-সংসারে যাঁদের দাঁড়ানোর এতটুকু জায়গা ছিল না। বাড়তে বাড়তে এখন ২২ জন মা স্বপ্নপুরীর বাসিন্দা। মাথার উপর এক টুকরো ছাদ আর দু-বেলা দু’মুঠো খাবারের নিশ্চিন্ত আশ্বাস তাঁদের দিতে পেরে খুশি ছবিলাও। জিপিএফ থেকে আট লাখ টাকা লোন নিয়ে এখন অনেকটাই মিটিয়ে ফেলেছেন ধারদেনা।
রোজ ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে ওঠেন ছবিলা। নিজের ছোট্ট ঘরকন্না সামলে একেবারে তৈরি হয়ে চলে আসেন আশ্রমে। একেবারে রোজের বাজার নিয়ে। প্রতিটা আবাসিকের দেখভাল করে তারপর যান সিউড়ি থানায়। নিজের কর্মস্থলে। পেশা আর নেশা দুটোর প্রতিই সমান দায়িত্বশীল ছবিলা। তাঁর আশ্রয়ে মায়েরা ভাল থাকুক এই স্বপ্নটা সফল হয়েছে। এখন স্বপ্নপুরী লাগোয়া আদিবাসী গ্রামের ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে ভাবনা ছবিলার। রবিবার করে তাদের জন্য নাচ-গান-ছবি আঁকা শেখার ব্যবস্থা করতে চলেছেন। যাতে হতদরিদ্র পরিবারগুলিতে লালিত সাদা-কালো শৈশবে একটু রং লাগে।