অ্যান্টার্কটিকায় আটকে আছেন বেশ কিছু অভিযাত্রী! লকডাউনে থমকে গেছে ভারতের মেরু-গবেষণাও
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা আতঙ্কের কারণে বিশ্বের বড় অংশে লকডাউন জারি হওয়ায় মাঝপথেই বন্ধ হয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মেরু অভিযানও। ভারতের ৩৯তম বৈজ্ঞানিক অভিযানের কথা ছিল দক্ষিণ মেরু অর্থাৎ অ্যান্টার্কটিকায়। সেখানকার জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য
শেষ আপডেট: 5 May 2020 13:05
দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা আতঙ্কের কারণে বিশ্বের বড় অংশে লকডাউন জারি হওয়ায় মাঝপথেই বন্ধ হয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের মেরু অভিযানও। ভারতের ৩৯তম বৈজ্ঞানিক অভিযানের কথা ছিল দক্ষিণ মেরু অর্থাৎ অ্যান্টার্কটিকায়। সেখানকার জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য বিষয়ের উপর গবেষণা করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভেস্তে গেল সব। এই অবস্থায় ফিরতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে ২৮ জন বিজ্ঞানী আটকা পড়ে আছে। ফেরার কোনও উপায় নেই তাঁদের।
জানা গেছে, এই গোটা অভিযান দলের একটা অংশ পৌঁছে গেছিলেন অ্যান্টার্কটিকা। বাকিরা প্রথম দফার কাজ সেরে কেপটাউন ফিরেছিলেন। কিন্তু এমন অবস্থায় লকডাউন হয়ে যায় সর্বত্র। ফলে যাঁরা ইতিমধ্যে মেরুপ্রদেশে রয়ে গেছেন তাঁদের কীভাবে খাদ্য ও জ্বালানি পৌঁছে দেওয়া হবে সেটাও একটা চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।

'ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশিয়ান রিসার্চ'-এর প্রধান এন রবিচন্দ্রন জানান, চেষ্টা চালানো হচ্ছে কেপটাউনের ২৮ জন ভারতীয় অভিযাত্রীকে আগে বাড়ি ফেরানোর। ১২ই এপ্রিল থেকে তাঁরা কেপটাউনের একটি হোটেলে বন্দি। তাঁদের দ্রুত ভারতে ফিরিয়ে আনার জন্য বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে জানান রবিচন্দ্রন। তিনি বলেন, আশা করা যাচ্ছে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে তাঁদের ফিরিয়ে আনা যাবে ভারতে।
প্রতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৮/১০ টি দল নিয়ে আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক অভিযানে যায় 'ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশিয়ান রিসার্চ'। বায়ুমণ্ডল, জলবায়ু সংক্রান্ত নানা গবেষণা মূলক তথ্য সংগ্রহ করা হয় সেই অভিযান থেকে। দু'টি মেরু অঞ্চলেই যে গবেষণা করা হয়, তা মূলত জলবায়ু পরিবর্তনকে বোঝার তাগিদেই। মেরু অঞ্চলের পরিবর্তন কীভাবে অন্য দেশের জলবায়ুকেও প্রভাবিত করে সেটিও এই গবেষণার অঙ্গ। এই বছর করোনার কারণে সমস্ত রকম অভিযান বাতিল করা হয়েছে হঠাৎই। গবেষকরা আশাবাদী, এ সব কিছু মিটে গেলে পরের বছর আবার নতুন করে গবেষণার কাজ শুরু করা যাবে।

তবে এই আচমকা লকডাউনে যে সমস্ত গবেষণারই বেশ ক্ষতি হয়ে গেল, তা বলাই বাহুল্য। গবেষণার অগ্রগতিও খানিক পিছিয়ে গেল। ক্ষতি হল গবেষকদের। এই অবস্থায় চিন্তা বাড়িয়েছে, দক্ষিণ মেরুতে আটকা পড়ে যাওয়া ভারতীয় গবেষক দলটি। সেখানে খাদ্য-পানীয়-জ্বালানির কোনও উৎস নেই। সবই বাইরে থেকে যায়। এই লকডাউনে তাঁদের কাছে কীভাবে সেসব পৌঁছে দেওয়া যায় সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলেই। 'ন্যাশনাল সেন্টার ফর পোলার অ্যান্ড ওশিয়ান রিসার্চ' অবশ্য আশ্বস্ত করেছে, তারা দায়িত্ব নেবে।
শ্বেতশুভ্র মহাদেশ নামে পরিচিত অ্যান্টার্কটিকা পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ। ১৪ মিলিয়ন বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ঘন বরফের চাদরে আচ্ছাদিত। পৃথিবীর মিষ্টি জলের একটি বড় অংশের জোগান হয় এখান থেকে। অ্যান্টার্কটিকায় ভারতের দু'টি গবেষণা কেন্দ্র আছে। ১৯৮৮ সালে নির্মিত মৈত্রী ও ২০১২ সালে নির্মিত ভারতী।

প্রতি বছরই জাহাজে বা বিমানে অ্যান্টার্কটিকার এই বৈজ্ঞানিক অভিযান শুরু হয়। অভিযানের সদস্যরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে অ্যান্টার্কটিকায় যান। সাধারণত গোয়া থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সেখান থেকে কেপ টাউন হয়ে অ্যান্টার্কটিকা যাওয়া হয়। এবারেও সেই হিসেব মতো ১০০ সদস্যের একটি দল পাঠানো হয়েছিল ভারত থেকে। যার মধ্যে ৪০ শতাংশ ছিলেন বিভিন্ন বিষয়ক সহায়ক আর বাকিরা গবেষক। সমস্ত পরিকল্পনাই ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে যোগাযোগও। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় না আসা পর্যন্ত মেরু অঞ্চলে মোতায়েন করা স্যাটেলাইটের ওপরেই নির্ভর করতে হবে বলে জানান রবিচন্দ্রন।
এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত একজন গবেষক মহেশ বদনাল জানান, তাঁরা মেরু অঞ্চলের কিছু নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত লকডাউনের আগে ফিরে আসতে পেরেছেন। কিন্তু বাকি অনেকেই আটকা পড়ে গেছে। এখন সকলেই ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন।