দ্য ওয়াল ব্যুরো: টিকটিকির না হয় লেজ গজায় মানা গেল, তা বলে কুমিরেরও। দেওয়ালের গায়ে এঁকে বেঁকে চলা ছোট্ট একটা টিকটিকির কয়েক ইঞ্চি লম্বা লেজ খসে গেলে তা আবার গজিয়ে ওঠে ঠিকই, কিন্তু নধরকান্তি একটা কুমিরের মোটাসোটা লেজ আবার গজিয়ে উঠল এটা ভাবতেই তো চমক লাগে! তা একপ্রকার চমকেই গিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কুমিরের লেজেরও যে পুনঃসৃষ্টি হতে পারে সেটাই নতুন বিষয় জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে।
টিকটিকি, গিরগিটি বা স্যালামান্ডার জাতীয় সরীসৃপদের লেজের পুনঃসৃষ্টি বা ‘রিজেনারেশন’ হতে পারে। খসে পরা অংশ থেকে ফের পেশির বিন্যাস হয়ে নতুন লেজ তৈরি হতে পারে। কিন্তু কুমিরেরও যে লেজের পুনঃসৃষ্টি হয় সেটা এতদিন জানা যায়নি। ধারণাতেও আসেনি। প্রথম এই বিষয়ে গবেষণা করেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানীরা।
https://twitter.com/xucindy/status/1329482392956899328?ref_src=twsrc%5Etfw%7Ctwcamp%5Etweetembed%7Ctwterm%5E1329482392956899328%7Ctwgr%5E%7Ctwcon%5Es1_&ref_url=https%3A%2F%2Fwww.sciencealert.com%2Fit-s-not-just-little-lizards-young-alligators-can-regrow-their-tails-too
খাঁজকাটা লেজ গজায় আপনা থেকেই
টিকটিকির লেজ গজানোর মতো নয় মোটেও। কিছুটা আলাদা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিকটিকিরা লেজ খসে নানা কারণে। আঘাত লাগলে লেজ ছিঁড়ে পড়ে যায়। তাছাড়া টিকটিকিরা নিজেরাও লেজ খসাতে পারে। শিকারি প্রাণির থেকে আক্রমণের সম্ভাবনা থাকলে বা স্বজাতির মধ্যেই বিরোধ বাঁধলে, সাধের লেজ খসিয়ে দ্রুত পালাতে পারে টিকটিকিরা। পরে সময় মতো আবার লেজ তৈরি করে নেয়। পেশি, স্নায়ুর ক্রিয়ায় ৩০ দিনের মধ্যে লেজ রিজেনারেশন হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রেডিয়াল গ্লিয়া নামে এক ধরনের স্টেম কোষ কাজ করে। লেজ খসে গেলে এই কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং পেশি, স্নায়ুর পুনর্বিন্যাস ঘটিয়ে নতুন লেজ তৈরি করে।

এ তো গেল টিকটিকির কথা। কুমিরদের ব্যাপারটা কিছু আলাদা। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানীরা বলছেন, পুর্নবয়স্ক কুমিরের যে লেজ গজাবে এমনটা এখনও দেখা যায়নি। বরং বাচ্চা কুমিরদের লেজ গজানোর ব্যাপারটাই আগে চোখে পড়েছে। আমেরিকান অ্যালিগেটর অর্থাৎ অ্যালিগেটর মিসিসিপিয়েনসিসরা তাদের লেগ ‘Regrow’ করতে পারে। দেহের দৈর্ঘ্যের ১৮ শতাংশ অবধি বাড়াতে পারে তারা। কম করেও ৯ ইঞ্চি লেজ নতুন করে তৈরি করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে তারও বেশি। সেটা নির্ভর করে কুমিরের দৈর্ঘ্যের ওপরে।
লেজটা গজায় কীভাবে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, পেশির বিন্যাস করে না কুমিররা। নতুন লেজে শক্ত হাড়ও থাকে না। বরং নরম অস্থি বা তরুণাস্থি দিয়ে লেজের পুনঃসৃষ্টি হয়। যোজক কলা (Connective Tissue)বিশেষ ভূমিকা নেয়। এই যোজক কলার কাজই হল যোগাযোগ তৈরি করা। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বা কলার মধ্যে যোগসূত্র তৈরি করে। এই যোজক কোষের মূল কাজই হল শরীরের কাঠামো তৈরি করা। বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দেওয়া, বাইরে থেকে শরীরে ঢোকে জীবাণু প্রতিরোধ করা, দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি।
[caption id="" align="aligncenter" width="588"]
আমেরিকান অ্যালিগেটর[/caption]
এই যোজক কলার মূল উপাদান হল কোলাজেন। তাছাড়া ফাইব্রোব্লাস্ট, এডিপোসাইট, ম্যাক্রোফেজ, লিউকোসাইড, মাস্ট কোষ নিয়ে তৈরি। যোজক কলায় যেমন কোলাজেন ফাইবার থাকে, তেমনি ইলাস্টিক ফাইবার ও রেটিকুলার ফাইবারও থাকে। কুমিরের লেজ তৈরি করতে বিশেষ ভূমিকা নেয় এই কলাই। তরুণাস্থি, স্নায়ু ও রক্তজালকের সুর্নিদিষ্ট বিন্যাস করে নতুন লেজ তৈরি করে যোজক কলা। আঁশের মতো এবং খাঁজকাটা দেখতেও হয় নতুন লেজ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিকটিকির মতো এত কমদিনে লেজ গজাতে পারে না কুমিরের। কম করেও ১২-১৮ মাস সময় লাগে। বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, কয়েক কোটি বছর আগে কুমিরদের পূর্বপূরুষ নন-অ্যাভিয়ান ডাইনোসরদের মধ্যেও এমন বৈশিষ্ট্য ছিল।
মানুষের লাভটা কোথায়?
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কুমিরের এই লেজ গজানো নিয়ে মানুষের লাভটা কোথায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন লাভ আছে। কীভাবে কুমির তার ক্ষতস্থান থেকে ঠিক একই রকম লেজ তৈরি করে ফেলছে সেই পদ্ধতি সঠিকভাবে জানতে পারলে যে কোনও ক্ষতস্থান দ্রুত মেরামত করা যাবে। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও বিশেষ সুবিধা হবে। তরুণাস্থি, স্নায়ু, রক্তজালকের বিন্যাস করে কীভাবে নতুন অঙ্গ তৈরি করছে কুমির সেটা জানতে পারলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় তৈরি হবে।
ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা কলেজ অব মেডিসিন-ফোনিক্সের গবেষক রেবেকা ফিশার বলছেন, টিস্যু রিজেনারেশনের পদ্ধতি এখনও অবধি কিছু সীমিত সরীসৃপেরই জানা আছে। মানুষের এই ক্ষমতা নেই। সরীসৃপদের মধ্যে বড়সড় প্রাণি হল কুমির, ওজনেও ভারী। তাই কুমির যখন তার অঙ্গের ক্ষত সারিয়ে নতুন অঙ্গ তৈরি করেছে সেটি শুধুমাত্র কিছু পেশি দিয়ে তৈরি হচ্ছে না, বরং তাতে নরম হাড়, রক্ত, কোষ-কলা সবই থাকছে। স্নায়ুর স্পন্দনও থাকছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই পদ্ধতিকেই নতুন থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।