শেষ আপডেট: 20th July 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: লাদাখ সংঘাতের মধ্যেই প্রথম পাঁচটি রাফাল যুদ্ধবিমান চলে আসছে ভারতের হাতে। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, আগামী ২৯ জুলাই প্রথম দফায় পাঁচটি রাফাল ভারতে পাঠিয়ে দেবে ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশন। সেগুলি হরিয়ানার অম্বালা বায়ুসেনা ঘাঁটির ‘গোল্ডেন অ্যারো’ ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অম্বালা এয়ারবেস থেকে রাফালের প্রথম মিশনই হবে লাদাখ।
বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ফ্রান্সের ইস্টার কমিউনিকেশন থেকে পাঁচটি রাফাল উড়িয়ে আনবেন ভারতের পাইলটরা। মাঝে সাময়িক বিরতি নেবেন আবু ধাবির আল ধাফরা এয়ারবেসে। রাফাল যুদ্ধবিমানের সঙ্গে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রযুক্তিও যুক্ত করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। যে পাঁচটি রাফাল আসছে ভারতের হাতে সেগুলি থেকে মেটিওর ও স্ক্যাল্প ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া যাবে। বায়ুসেনার এক আধিকারির জানিয়েছেন, অগস্টের মধ্যেই পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে রাফাল।
৩৬টি রাফাল ফাইটার জেটের জন্য ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে ৫৯ হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছিল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরেই। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, ভারতের জন্য ১০টি রাফাল জেট তৈরি রেখেছে ফরাসি সংস্থা। তার মধ্যে পাঁচটি চলে আসবে এ বছরেই। মে মাসেই প্রথম চারটি রাফাল ভারতের হাতে আসার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এই সময় পিছিয়ে যায়।
ডবল ইঞ্জিন মল্টিরোল কমব্যাট ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট রাফাল আকাশ থেকে ভূমিতে ও সমুদ্রেও নির্ভুল নিশালা লাগাতে পারে। ৯ টনের বেশি যুদ্ধাস্ত্র বইতে পারে রাফাল। অনেক উঁচু থেকে হামলা চালানো, যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করা, মিসাইল নিক্ষেপ এমনকি পরমাণু হামলা চালানোর ক্ষমতাও রয়েছে রাফালের। রাফালকে আরও শক্তিশালী করার জন্য ‘মেটিওর’ এবং ‘স্কাল্প’ নামে দুটি মিসাইল যোগ করেছে দাসো অ্যাভিয়েশন। মেটিওর হল বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল। ১২০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও নিখুঁত টার্গেট করতে পারে। আর ‘স্কাল্প’ হল লো-অবজার্ভর ক্রুজ মিসাইল। ৬০০ কিলোমিটার পাল্লা অবধি লক্ষ্যে টার্গেট করতে পারে এই মিসাইল। এটি ব্যবহার করে ব্রিটিশ ও ফরাসি বায়ুসেনা।
পূর্ব লাদাখের গালওয়ান, দেপসাং ও গোগরা হট স্প্রিং এলাকা থেকে সেনা পিছোলেও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার অনেক এলাকাতেই এখনও চিনের সেনা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে বলে খবর। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলাতেই তাই প্রস্তুত থাকছে ভারতীয় সেনা ও বায়ুসেনা। শীতের আগে অতিরিক্ত ৩০ হাজার সেনা পাঠানো হচ্ছে লাদাখে। বায়ুসেনার শক্তি বাড়াতে ইতিমধ্যেই ২২টি অ্যাপাচে ও ১৫ টি চিনুক অ্যাটাক কপ্টার চলে এসেছে ভারতের হাতে। অ্যাপাচের এএইচ-৬৪ই মডেলের যুদ্ধবিমানগুলি এই মুহূর্তে বিশ্বের সবথেকে শক্তিশালী কমব্যাট হেলিকপ্টার। মার্কিন সেনা এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে। সেইসঙ্গে চিনুক যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয় সেনা, অস্ত্র, রসদ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। রাশিয়ার থেকে অত্যাধুনিক ২১টি মিগ-২৯ ফাইটার জেট ও ১২টি সুখোই-৩০ এমকেআই কেনার চুক্তি হয়ে গেছে। রাশিয়ার সুখোইয়ের প্রযুক্তিতে বদল ঘটিয়ে তাকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে এই যুদ্ধবিমান থেকে নোভাটর কে-১০০ মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তি যোগ করেছে ভারত। সুখোইয়ের নয়া ভ্যারিয়ান্ট ব্রাহ্মস ক্রুজ মিসাইল বয়ে নিয়ে যেতে পারে। সুখোই থেকে ব্রাহ্মস ছুড়ে আকাশ থেকে ভূমিতে টার্গেট করা যায়। অন্তত ৩০০ কিলোমিটার পাল্লায় কাজ করে এই মিসাইল।
অন্যদিকে, ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গাইনেশন (ডিআরডিও)-এর থেকে থেকে বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল কিনতে চলেছে ভারতীয় বায়ুসেনা। যে কোনও আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে কাছের বা দূরের পাল্লায় লক্ষ্যবস্তুতে টার্গেট করতে পারে অস্ত্র। একই সঙ্গে ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য কেনা হচ্ছে ১০০০ কিলোমিটার পাল্লার ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল।