শেষ আপডেট: 4th December 2023 13:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তৃণমূলের বৃদ্ধতন্ত্র নিয়ে তরুণদের মধ্যে যে একটা অসন্তোষ রয়েছে তা গত কয়েক বছর ধরে বারবার ভিসুভিয়াসের মতো বেরিয়ে এসেছে। লোকসভা ভোটের আগে সেই বিতর্ক নতুন করে মাথা তুলেছে। এমনকী এই ধারণাও তৈরি হয়েছে যে এ ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে তীব্র মতান্তরের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
সোমবার এ ব্যাপারে মুখ খুললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক বয়সে তরুণ হলেও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। অতীতে তৃণমূলের আর কেউ এত কম বয়সে এই সুযোগ পাননি। এদিন অভিষেক বোঝাতে চান, শুধু তাঁকে নয়, দলের অন্য তরুণ নেতাদেরও সুযোগ দিতে হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অভিষেক এদিন বলেন, “দিদির সঙ্গে কোনও মতান্তর নেই। আমি নেই কে বলছে, আমি তো আছি। শুধু একটা সভাতে ছিলাম না। সেখানে আমার ছবি না থাকায় কোনও সমস্যা নেই, দলনেত্রীর ছবি তো ছিল।”
কিন্তু এর পরই অভিষেক বলেন, “তবে আমি মনে করি সব পেশায়, সর্বত্র যেমন একটা বয়সের উর্ধ্বসীমা থাকে, তেমনই রাজনৈতিক দলেও থাকা উচিত। কারণ, বয়স বাড়লে মানুষের প্রোডাক্টিভিটি কমে যায়। তিরিশ চল্লিশ বছর বয়সে একটা মানুষ যতটা দৌড়ে কাজ করতে পারেন, সত্তর বছরে পৌঁছে তা করা যায় না।”
এর আগে ঠিক একই কথা বলে দলীয় ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, “দেহত্যাগ না করলে পদত্যাগ নয়, এ কেমন কথা।” কুণাল এখানেও থামেননি তিনি বলেছিলেন, “দলে এক শ্রেণির নেতা রয়েছেন যাঁদের মনোভাব হল, আমিই আমৃত্যু সাংসদ বা বিধায়ক থেকে যাব, আর কিছু কর্মী রয়েছেন যাঁরা সারাজীবন ধরে আমার জন্য দেওয়াল লিখে যাবে।”
এদিন অভিষেক বলেন, তৃণমূলে ব্যক্তিগত মতের সুযোগ রয়েছে। কারণ, তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র রয়েছে।
অর্থাৎ কুণালের মন্তব্যকে কোনও ভাবে এড়িয়ে যাননি অভিষেক। বরং সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন, কুণাল সঠিক প্রশ্নই তুলছেন।
এ ব্যাপারে এদিন রাজস্থানের উদাহরণ দিয়েছেন অভিষেক। রাজস্থানে নবীন নেতা শচীন পাইলটের সঙ্গে প্রবীণ নেতা অশোক গেহলটের বিরোধ গত তিন বছর ধরে চলছে। অশোক গেহলট কোনও ভাবেই শচীনকে মুখ্যমন্ত্রী পদ ছেড়ে দিতে রাজি ছিলেন না।
অভিষেক এদিন বলেন, “রাজস্থানে কংগ্রেস মাত্র ২ শতাংশ ভোটে বিজেপির কাছে হেরেছে। কংগ্রেসের এই প্রবণতা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে চান কেউ কেউ। এই ভুল যদি ৬ মাস বা এক বছর আগে সংশোধন করা যেত তাহলে এই ভরাডুবি হত না”। তাঁর কথায়, “প্রতিভাকে কখনওই গায়ের জোরে বা ষড়যন্ত্র করে চেপে রাখা যায় না। তার স্ফুরণ ঘটবেই। তা সে সিপিএম হোক বা বিজেপি হোক বা কংগ্রেস হোক— যে কোনও পার্টিই হোক না কেন!”
তৃণমূল সূত্রের মতে, লোকসভা ভোটে দলে প্রার্থী বাছাই নিয়েই সম্ভবত এই মতান্তরের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অভিষেক অবশ্য বলেন, প্রার্থী কাদের করা হবে তা দলনেত্রীই স্থির করবেন। কিন্তু এও বলেন, যে অনেকে নতুন তৃণমূলের কথা বলছেন। কিন্তু নতুন তৃণমূল মানে এই নয় যে সব কুড়ি বছর বয়সি নেতাদের নিয়ে দল চলবে। প্রবীণরা থাকবেন, তাঁদের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু নবীনদেরও প্রতিভা ও মেধা অনুযায়ী সুযোগ করে দিতে হবে।