শেষ আপডেট: 19th September 2024 17:19
দ্য় ওয়াল ব্যুরো, হুগলি: মাধ্যমিকে অষ্টম। উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ স্থানাধিকারী হয়েছিলেন মেধাবী দেবাশিস হালদার। একেবারে ছাপোষা পরিবার থেকে উঠে আসা সেই ছেলে বরাবরই পরিবারের গর্বের ধন। সহকর্মীকে ধর্ষণ করে খুনের প্রতিবাদে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের মুখ হয়ে এবার সেই ছেলেই মায়ের চোখে জল আনলেন। ছেলের আন্দোলনকে সমর্থন জানাতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন বলাগড়ের দেবাশিস হালদারের মা।
আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। গত একমাসের বেশি সময় ধরে চলছে আন্দোলন। সেই আন্দোলনে কিঞ্জল নন্দ, অনিকেত মাহাত, রুমেলিকা কুমারদের সঙ্গে মুখ হয়ে ওঠেন হুগলির বলাগড়ের দেবাশিস হালদার। কখনও কালীঘাটে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক আবার কখনও নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠক, এছাড়াও ধরনা মঞ্চে মাইক হাতে গলা ফাটিয়ে স্লোগান দেওয়া, সবকিছু মিলিয়ে তিনি এখন রীতিমতো পরিচিত মুখ।
ছ'মাস আগে বিয়ে করেছেন। স্ত্রীও জুনিয়র ডাক্তার। স্বামীর সঙ্গেই এই আন্দোলনে সামিল।
চিকিৎসক দেবাশিস রাজনীতির সঙ্গে কোনদিনও যুক্ত ছিলেন না। এমনটাই দাবি তাঁর পরিবারের। কিন্তু আরজি করের ঘটনার পর যে ভাবে রোদে পুড়ে জলে ভিজে আন্দোলনে রয়েছেন তা অবাক করেছে তাঁর বাবা-মাকে। আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে দেবাশিসের মা অনিমা বলেন, "ছেলে ন্যায়ের জন্য আন্দোলন করছে, এটা আমাদের খুব ভালো লাগছে। ছোট থেকে প্রতিবাদী না হলেও কখনও মিথ্যার আশ্রয় নিত না। সব সময় সত্যি কথা বলতো। বেশিরভাগ সময়টা পড়াশোনার মধ্যে দিয়েই কাটত ওর। এখন খুব একটা বেশি কথা হয় না। তরুণী চিকিৎসককে যেভাবে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছে একজন মা হিসাবে তার ন্যায্য বিচার চাই।"
দেবাশিসদের আদি বাড়ি ছিল খমারগাছির সিজা বাজারের কাছে মুক্তকেশীতলায়। তার বাবা ক্ষিতীশ হালদার চাকরি পাওয়ার পর সিজা বাস স্ট্যান্ডের কাছে আসাম লিঙ্ক রোডের পাশে বাড়ি করেন। ছোট একটি দোকান চালিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন দেবাশিসের বাবা। পরে পূর্ত দফতরে গ্রুপ ডি পদে চাকরি পান। বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত। জানালেন, কামালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করেছিলেন ছেলেকে। ২০০৯ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে অষ্টম হন। ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে একাদশ স্থান অধিকার করেন। এরপর নিটে সাফল্য। কলকাতার মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন। বর্তমানে কলকাতা মেডিকেল কলেজে অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগে কর্মরত রয়েছেন।
ক্ষিতীশবাবু বলেন, "আন্দোলন এত বড় হবে তা ভাবতে পারিনি। আজ গোটা বিশ্বে আন্দোলনের ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে। জুনিয়র ডাক্তাররা যেভাবে এই আন্দোলনটা করছে তাতে আমি গর্বিত। ধর্নামঞ্চে আমরাও গিয়েছিলাম, সাধারণ মানুষ ওদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে দেখে আমার আরও বেশি ভালো লেগেছে। ওরা মেরুদণ্ড সোজা রেখে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনকে আমি কুর্নিশ জানাই।"