শেষ আপডেট: 28th February 2024 15:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো, হুগলি: মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে গোটা পরিবার। আত্মীয়দের ফোনে এমন মর্মান্তিক খবর পেয়ে ছুটে গেছিলেন উত্তরপাড়ার কাউন্সিলর উৎপলাদিত্য চট্টোপাধ্যায় ও পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব। পরিবারের তিন সদস্য শ্যামলী মুখোপাধ্যায়(৭৮) তাঁর ছেলে সৌরভ(৫৫) ও মেয়ে নন্দিতাকে (৫০) দরজা ভেঙে উদ্ধার করে পাঠানো হয় হাসপাতালে। জানা যায় গৃহকর্তা গগন মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর থেকে মানসিক অবসাদে ডুবে নিজেদের স্বেচ্ছাবন্দি করে ফেলেছিল গোটা পরিবার। না খেয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছিলেন। সেই খবর জেনে স্তম্ভিত হয়েছিলেন উত্তরপাড়ার মানুষ।
সোমবার উত্তরপাড়া থানার পুলিশ তিনজনকে উদ্ধার করে উত্তরপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাদের। বুধবার ভোর রাতে মৃত্যু হল সৌরভের। তাঁর মা কিছুটা সুস্থ হলেও বোনের অবস্থা এখনও সংকটজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
পরিবারের কর্তা গগনবাবুর মৃত্যুর পর প্রায় এক মাস নিজেদের স্বেচ্ছাবন্দি করে রেখেছিলেন তাঁর স্ত্রী-পুত্র ও কন্যা। এতদিন কেউ খোঁজ নেয়নি তাঁদের। প্রতিবেশীরাও জানতে পারেননি। সৌরভ তার এক আত্মীয়কে ফোন করে শুধু জানিয়েছিলেন মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছেন তাঁরা। সেই আত্মীয় বৈষ্ণব দাস মুখোপাধ্যায় কিছু একটা হয়েছে আন্দাজ করে ৪ ফেব্রুয়ারি উত্তরপাড়ায় আসেন। বাড়ির দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল।
সেদিন বৈষ্ণববাবু জানান, গগনবাবুর মৃত্যুর পর থেকে মানসিক অবসাদে ডুবে যায় গোটা পরিবার। কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। মাসখানেক না খেয়েদেয়ে এভাবেই হয়ত পড়েছিলেন। শেষপর্যন্ত সৌরভ ডেকেছিলেন তাঁকে। কিন্তু বাড়িতে আসার পরেও দরজা খোলেনি। একঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর তারপর দরজা খুলে সৌরভ জানায়, আর দু দিন বাঁচবে। বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি সেদিন। সোমবার পরিবারের তিন সদস্যকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বুধবার সৌরভের মৃত্যুর খবর পেয়ে চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব উত্তরপাড়ার রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউতে তাঁদের বাড়িতে যান। মৃতের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, "এই ধরনের মৃত্যুতে নিজেদের অপরাধী মনে হয়। আমাদের পাড়ার মানুষ, তারা কতদিন বাড়ি থেকে বের হননি, খাননি, কোনও প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলেননি কেউ কিছু জানতেও পারেননি। কারো কাছে কোনও সাহায্য চাননি ওরা, এটা আমাদের কাছে খুব কষ্টের। সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ যে শুনবে তার কাছেই এটা খুব কষ্টের। আমরা যখন জানতে পেরেছি তারপরেই কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। গগনবাবুর স্ত্রী এবং মেয়ের চিকিৎসা চলছে। আশা করব তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন।"