শেষ আপডেট: 13th April 2025 00:07
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এককথায় বলতে গেলে, জীবনের প্রতি অসম্ভব টান আর অদম্য মানসিক শক্তির এক নজির হয়ে থাকবেন হুগলির পাণ্ডুয়ার বৈঁচীগ্রাম দক্ষিণপাড়ার বছর ৮৫-র শোভারানি বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার দুপুরে কপিকল দিয়ে জল তুলতে গিয়ে গভীর পাতকুয়ায় পড়ে যান তিনি। কয়েক ঘণ্টা কেউ তাঁকে উদ্ধার করতে পারেননি। এতটা সময় তিনি কিন্তু জলে ভেসে ছিলেন কপিকলের দড়ি আঁকড়ে। শেষে দমকল কর্মীদের তৎপরতায় উদ্ধার হন বৃদ্ধা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে হাসপাতালে সিস্টারদের কাছে দাবি করেন—'চা খাবো!'
শোভারানিদেবী বাড়িতে একাই থাকেন। তাঁর ছেলে সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার নিয়ে থাকেন কলকাতায়। প্রতিবেশী বর্ণালী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নিয়মিত দেখাশোনা করেন। শনিবার দুপুরেও বর্ণালীদেবী তাঁকে ভাত খাইয়ে নিজের বাড়িতে খেতে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে দেখেন, বাড়িতে নেই দিদিমা। খোঁজাখুঁজির পরে কুয়োর মধ্যে উঁকি মেরে দেখা যায়, শোভারানি কুয়োয় পড়ে গেছেন, তবে প্রাণপণে দড়ি ধরে ভেসে আছেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীদের ডেকে খবর দেওয়া হয় বৈঁচীগ্রাম পুলিশ ফাঁড়িতে।
খবর পেয়ে আসে দমকল বাহিনী। পাণ্ডুয়া থেকে এসে মই নামিয়ে দড়ি বেঁধে কুয়োয় নামেন দমকল কর্মীরা। বুদ্ধিদীপ্তভাবে দড়ি ধরে রাখা বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। সেখানে শুয়েই তিনি সোজা বলেন, 'চা খেতে ইচ্ছে করছে!' — আশপাশে থাকা নার্স ও চিকিৎসকদের মধ্যে তখন হাসির রোল।
ছেলে সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামের লোকের কাছ থেকে খবর পেয়েই কলকাতা থেকে সোজা হাসপাতালে চলে যান। মাকে সুস্থ দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। বলেন, 'মা বাড়িতে একাই থাকেন। তাঁকে দেখাশোনার জন্য লোক আছে। পাতকুয়ায় পড়েছে শুনেই ছুটে এসেছি। এখন ওঁকে সুস্থ দেখে অনেকটা নিশ্চিন্ত।'
পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি নিছক দুর্ঘটনা। সতর্ক না থাকলে বিপদ আরও বড় হতে পারত। তবে বৃদ্ধার উপস্থিত বুদ্ধির জেরে আজ জীবন ফিরে পেলেন তিনি।