শেষ আপডেট: 9th August 2024 20:13
দ্য ওয়াল ব্য়ুরো, হুগলি: নতুন শিল্পের পাশাপাশি ধুঁকতে থাকা শিল্প পুনরুজ্জীবিত হোক চেয়েছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানা তাঁর হাত ধরেই পুনরুজ্জীবন পেয়েছিল। তবে তা ছিল সাময়িক। ডানলপ কারখানার শ্রমিক পরিবারগুলি মনে রেখেছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে।
হুগলি নদীর পারে সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানায় এক সময় বহু শ্রমিক কাজ করতেন। ডানলপের জন্য এলাকার বাসিন্দাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার মানোন্নয়ন হয়েছিল। সে সময় অনেকে বেতন কাঠামো এতটাই ভালো ছিল, যে শোনা যেত স্কুল শিক্ষকের চাকরি ছেড়ে ডানলপের চাকরি নিতেন। সেই কারখানার ঝাঁপ বন্ধ হয়ে যায় ১৯৯৮ সালে।
২০০৬ সাল। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সদিচ্ছাতে রুইয়াগোষ্ঠী ডানলপ অধিগ্রহণ করে। বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের অবস্থা অনুভব করে কারখানা যাতে চালু হয় তার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। শ্রমিকরা জানান, ডানলপ মাঠে বুদ্ধবাবু সভা করেছিলেন। তাঁরা শুনতে গিয়েছিলেন। ওই সময়ে তাঁরা নতুন করে আশার আলো দেখছিলেন। পরে মোহভঙ্গ হয় তাঁদের। রুইয়াগোষ্ঠী কারখানা চালাতে পারেনি।
শ্রমিকরা বলেন, কারখানা চালাতে চায়নি কোম্পানি। ২০০৯ সালে উৎপাদন শুরু হলেও তা কখনই বাণিজ্যিকভাবে হয়ে ওঠেনি।ফলে কারখানা আবারও বন্ধ হয়। শ্রমিকদের বকেয়া কাঁচামাল সরবরাহকারীদের বকেয়া বিদ্যুৎতের বিল না মেটাতে পারায় মামলা হয়। হাইকোর্ট ডানলপ কারখানা লিকুইডেটনের নির্দেশ দেয়। সম্পত্তি বিক্রি করে বকেয়া মেটাতে বলে। সেইমত ডানলপের যন্ত্রাংশ নিলাম করা হয়। শ্রমিকদের বকেয়া কিছু কিছু করে মেটানো হয়।তবে এখনো অনেক শ্রমিক বকেয়ার আশায় রয়ে গেছেন শ্রমিক কোয়ার্টারেই। পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় অধিগ্রহণের বিল পাস করালেও ডানলপ অধিগ্রহণ হয়নি। যে সমস্ত শ্রমিকরা পে রোলে ছিলেন তাদের মাসিক ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে বর্তমান রাজ্য সরকার।
শ্রমিক পরিবারের সদস্য সমীরণ গোস্বামী বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য চেষ্টা করেছিলেন। পবন রুইয়াকে এনেছিলেন ডানলপ কারখানাটাকে খোলার জন্য। সাহাগঞ্জ বাঁশবেড়িয়া অঞ্চল পুরো অন্ধকারে চলে গেছে। বন্ধ কারখানাগুলোকে নিয়ে কিছু ভাবা উচিত সরকারের।"
ডানলপ কারখানার শ্রমিক অসীম বোস বলেন, "বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অনেক চেষ্টা করেছিলেন যাতে শিল্প বেঁচে থাকে।যে কারণে তিনি সিঙ্গুরে কারখানা করতে চেয়েছিলেন। তার আগে ডানলপ কারখানাকেও পুনরুজ্জীবিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা হয়নি। ডানলপের মতো এত বড় একটা শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়া সিঙ্গুরে নতুন শিল্প না হওয়া যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরনীয়।"
অসীমবাবুর কথায়, "একটা প্রকল্পকে বাঁচিয়ে রেখে যাতে শ্রমিকরা বেঁচে থাকে সেই চেষ্টা করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। আজকের সিঙ্গুর হলে হয়তো ডানলপও বেঁচে থাকত। কারণ আমি টায়ার ডিভিশনে কাজ করতাম আমি জানি প্রচুর টায়ার লাগত। একটা বড় শিল্প বেঁচে থাকলে তার অনুসারী শিল্প বেঁচে থাকে।উনার মতো একজন মানুষকে আমরা হারালাম জানি না উনার বিকল্প আমরা পাব কিনা।"
বেবি রায় স্বামী এক সময়ে ডানলপ কারখানার শ্রমিক ছিলেন। বেবি বলেন, "ডানলপে আর কিছু নেই সব বিক্রি হয়ে গেছে। কারখানাটা চালু থাকলে এই অবস্থা থাকত না। আমি ২৫ বছর ধরে এখানে রয়েছি। আগে খুব ভালো ছিলাম। এখন আমার স্বামী নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করে। এতে সংসার চলে না।"
স্থানীয় বাসিন্দা সোমা বাগ বলেন, "আমি দীর্ঘদিন ধরে এখানে রয়েছি। আগে যা দেখেছি আর এখন কি অবস্থা? সবই দেখছি। আয়ের জন্য স্বামীকে কলকাতা যেতে হয়। আমরা ভেবেছিলাম কারখানাটা চললে শ্রমিক পরিবারগুলো বাঁচবে। যারা অবসর নিয়েছেন তাদের খুবই সমস্যায় রয়েছেন।"
সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত বলেন, "জ্যোতি বসুর আমলে ছাবারিয়া গোষ্ঠীর সময় থেকেই ডানলপের অবস্থা খারাপ হয়।পরে বুদ্ধবাবু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চেষ্টা করেছিলেন ওনার পদক্ষেপ ভাল ছিল চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সফল হননি।"