শেষ আপডেট: 7th November 2024 19:56
তোতন রায় পেশায় একজন পুলকার চালক। সাঁকরাইলের বাড়ি থেকে রোজ সকালে গাড়ি নিয়ে বেরোন তিনি। পড়ুয়াদের পৌঁছে দেন স্কুলে। কিন্তু একমাত্র এটাই তাঁর পরিচয় নয়। তোতন চালকের থেকেও আরও অন্য কিছু।
খুবই ছাপোষা, সাধারণ তোতনবাবুর একটি বিশেষ গুণ রয়েছে। তিনি কবিতা লিখতে পারেন। শুধু লেখেন বললে ভুল হবে, ইতিমধ্যে তাঁর বেশ কয়েকটি কবিতার বইও বেরিয়েছে। সেগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য 'শ্রদ্ধাঞ্জলি' বইটি।
গ্রামের ডাক্তার, উকিল, সমাজসেবী থেকে শুরু করে বাড়ির উঠোনের নিম, কাঁঠাল গাছ সব নিয়েই কবিতা লিখেছেন তোতন। পেট্রোল, টোল ট্যাক্সের বিল, ট্রেনের টিকিট... সবকিছুতেই পাওয়া যাবে তাঁর কবিতার লাইন। স্থানীয়দের কথায়, তিনি ভীষণ ভাল কবিতা লেখেন। তাহলে লেখালেখি নিয়েই কেন প্রত্যক্ষভাবে কাজ করলেন না তোতন?
অল্প বয়স থেকেই সাহিত্যচর্চায় বুঁদ হয়ে থাকতেন তিনি। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার পরে অর্থের অভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি পড়াশোনা। অভাবের মধ্যে বড় হয়েছেন। তাঁর বাবা ছিলেন ভ্যানচালক। বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দু-পয়সা রোজগারের জন্য নিজেই ভ্যান চালাতে শুরু করেন তোতন। ভ্যান চালিয়ে একটু একটু করে পয়সা জমিয়ে কেনেন এই মারুতি ভ্যান। এরপরেই শুরু তাঁর পুলকার চালানো।
এই কঠিন লড়াইয়ের মধ্যেও কবিতা বা লেখালেখি ভোলেননি তোতন। গাড়ি সিগন্যালে দাঁড়ায়ে থাকা অবস্থাতেও হাতে এক টুকরো কাগজ পেলেই লিখে ফেলেন কবিতার দুই লাইন। তোতনে এই কর্মকাণ্ডে সব সময়ে পাশে থাকেন স্ত্রী মৈত্রী রায়। শত অভাবেও স্বামীর প্রতিভা মেলে ধরতে তাঁকে উৎসাহ দিয়ে যান তিনি।
তোতনের প্রথম বই 'স্বপ্ননীল'। ১০০টি কবিতার সংকলন এটি। তারপর 'বহুব্রীহি', 'শ্রদ্ধাঞ্জলি' নামে আরও দুটি বই বের করেছেন তিনি। সেগুলি থেকে বহু পুরস্কার ও সম্মানও পেয়েছেন। এখন তিনি বইমেলায় জন্য একটি বিশেষ বই লিখছেন। তবে শুধু বই লেখাই নয়, সমাজ সেবার কাজেও যুক্ত তোতন।