শেষ আপডেট: 8th March 2025 23:14
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কেমো চলছিল, তাই গত বছর পরীক্ষা দিতে পারেননি। এ বছর ক্যানসারের (Cancer) যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেই হাসপাতালে বসে উচ্চ মাধ্যমিক (HS Exam) পরীক্ষা দিচ্ছেন চন্দননগরের (Chandannagar) সুজলি পাত্র।
সুজলির যখন বয়স ১১ দিন, সেই সময় তাঁর মা মারা যান। তারপর থেকেই চন্দননগর কেএমডিএ পার্কের পাশে মামার বাড়িতে বড় হওয়া। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে আলাদা সংসারে থাকেন। মাঝে মধ্যে এসে খোঁজ নেন। তবে একদা জুটমিল শ্রমিক মামা সত্যজিৎ রায়ই তাঁকে বড় করেছেন।
সুজলী চন্দননগর লালবাগান বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। ইলেভেনে পড়ার সময় তাঁর ওভারিতে ক্যানসার ধরা পড়ে। শুরু হয় কেমো থেরাপি। মাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশন নিয়ে পাশ করেছিলেন সুজলি। অসুস্থতার কারণে গতবছর উচ্চমাধ্যমিক দিতে পারেননি।
সুজলি একপ্রকার জেদ নিয়ে ফেলেছিলেন, যেমন করে হোক এবছর পরীক্ষা দেবেন তিনি। সেই মতো চলছিল প্রস্তুতি। চন্দননগর কৃষ্ণভাবিনী নারী শিক্ষা মন্দিরে পরীক্ষার সিট পড়ে তাঁর। প্রথম দিন বাংলা পরীক্ষা দেওয়ার পরই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। সারারাত পেটের যন্ত্রণায় ঘুমোতেও পারেননি।
ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা অর্পিতা মণ্ডল জানান, ফোন করে শরীর খারাপের কথা জানান সুজলি। আর পরীক্ষায় বসতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এদিকে স্থানীয় চিকিৎসক দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।
দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষা স্কুলেই দেন সুজলি। প্রধান শিক্ষিকা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের হুগলি জেলা যুগ্ম আহ্বায়ক শুভেন্দু গড়াইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে কলকাতার নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন। ছাত্রী জানান তিনি হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক। সেই মতোই সব ব্যবস্থা করা হয়।
প্রধান শিক্ষিকার কথায়, "অসম্ভব মনের জোর সুজলির। শারীরিক অসুস্থতা নিয়েও সে স্কুলে আসত। কাল পরীক্ষার পর কথা হল, বলল খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। তাও পরীক্ষা শেষ করেছে। বড় হয়ে শিক্ষিকা হতে চায় সুজলি। আমরা চাই ও বড় হোক।"
হুগলি জেলা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার যুগ্ম আহ্বায়ক শুভেন্দু গড়াই বলেন, "গত বছর ওই ছাত্রী পরীক্ষায় বসতে পারেনি। তখন কেমো থেরাপি চলছিল। এ বছরে পরীক্ষায় বসেছে। যে স্কুলে সিট পড়েছিল সেখানে সিক রুমে দু'টি পরীক্ষা দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। তাকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে হয়। আমি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যকে বিষয়টি জানাই। তিনিই অনুমতি দেন। তারপর সব ব্যবস্থা করে এই হাসপাতাল থেকেই পরীক্ষা দেয় সুজলি। ওর মনের জোর আছে, আমরা ওর সাফল্য কামনা করি।"