আবার যদি বাঘ আসে!
শেষ আপডেট: 7th February 2025 09:19
বর্ষশেষে টানা ১০দিন জিনাতের লম্ফঝম্প দেখেছিল জঙ্গলমহল। শীতেও তিরতির ঘাম ঝরছিল বনকর্তাদের।
১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। উচ্চ মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হবে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। সেই পরীক্ষা শুরু হবে ৩ মার্চ । এই সময়ে জিনাতের সঙ্গীরা যদি আবার চলে আসে!
হালুম! চিন্তার ব্যাপার নয়?
বর্ষশেষের অভিজ্ঞতা ছিল নজিরবিহীন। লাস্যময়ী জিনাত যেন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে। তার উপর নজর রাখতে সরকারের কোষাগার থেকে গলে গেছে ৩৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু ন্যাড়া তো বেলতলায় একবারই যায়। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার জঙ্গলমহলের বন্যপ্রাণ প্রভাবিত এলাকায় বন দফতর তাই কোমর কষছে। ঘন জঙ্গল লাগোয়া রাস্তার দুদিকে উত্তরবঙ্গের আদলে ‘এনার্জাইজড ফেন্সিং’ তথা বেড়ার ব্যবস্থা করছে বন দফতর।
এই 'এনার্জাইজড ফেন্সিং' কী? দেখতে অনেকটা বিদ্যুতের তারের মতো। তবে এতে সরাসরি বিদ্যুতের সংযোগ থাকে না বলে দাবি বন কর্তাদের। এই তারের সংস্পর্শে এলেই বাঘ হোক বা হাতি লাফিয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে।
পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ দ্য ওয়ালকে বললেন, "এটা বিদ্যুতের শক নয়, এটার সংস্পর্শে এলে বন্যপ্রাণের শরীরে একটা কম্পন হবে, এতে বন্যপ্রাণের কোনও ক্ষতি হয় না। মূলত, হামলা, প্রাণহানি ঠেকাতেই গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তার দু'দিকে এই 'এনারজাইজড ফেন্সিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"
জিনাত রবাহুতোর মতো এসেছিল। তারপরও নতুন বছরের শুরুতে ঝাড়খণ্ড-পুরুলিয়া-বেলপাহাড়ি সীমান্তে জঙ্গলমহলের একাংশ নতুন করে বাঘের আতঙ্ক বেড়েছে। জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহেও দেখা মিলেছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের পায়ের ছাপ। যার জেরে দিনের বেলাতেও ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি, বাঁকুড়ার বারিকুল এবং পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের একাংশের ঘন জঙ্গলে একা একা পা রাখার সাহস দেখাচ্ছেন না ওই তল্লাটের বাসিন্দারা। বাড়়তি উদ্বেগ তৈরি করেছে হাতির উপস্থিতি ।
ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি, পুরুলিয়ার বান্দোয়ান, বাঘমুন্ডি, ঝালদা, কোটশিলা, অযোধ্যা এবং বাঁকুড়ার বারিকুল-সহ জঙ্গল মহলের একাংশে হাতির আনাগোনা রয়েছে। সম্প্রতি ওই এলাকার একাংশে জিনাতের সঙ্গীদের আগমনও ঘটেছে। যে কারণে পরীক্ষার সময়ে ওই এলাকায় নিয়মিত পেট্রোলিংয়ের পাশাপাশি প্রয়োজনে পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ গাড়ির ব্যবস্থাও করছে জেলা প্রশাসন।
কংসাবতী দক্ষিণ বনবিভাগের ডিএফও পূরবী মাহাতো বলেন, যে সব এলাকায় বন্যপ্রাণী রয়েছে সেখানে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরীক্ষার্থীরা যাতে সুষ্টভাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারে সেজন্য বন দফতরের তরফে নিয়মিত পেট্রোলিংও করা হবে পরীক্ষার সময়।
পুরুলিয়ার ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, "জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের সঙ্গে বন দফতরের বৈঠক হয়েছে। যেখানে যেখানে বন্যপ্রাণীর মুভমেন্টের খবর থাকবে সেখানে সেখানে আমরা টিম রাখব, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও পরীক্ষার্থীদের কাউকে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া বা নিয়ে আসার প্রয়োজন পড়লে সেই ব্যবস্থাও করা হবে।"
চুম্বকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসবে বন দফতরও!