শেষ আপডেট: 1st December 2021 07:32
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়্যান্টের খোঁজ পেয়ে রীতিমতো আঁতকে উঠেছিলেন তিনি। প্রথমে তাঁর মনে হয়েছিল, কাজে কি কিছু ভুল হয়ে গেল! ওমিক্রম আবিষ্কার করার পরে এমনটাই জানিয়েছেন বিজ্ঞানী রাকেল ভিয়ানা। সম্প্রতি সামনে এসেছে তাঁর বক্তব্য। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম প্রধান টেস্টিং ল্যাবরেটরি ল্যানসেটের প্রধান তিনি। তিনিই আটটি করোনভাইরাস নমুনার জিন নিয়ে সিকোয়েন্সের কাজ করতে গিয়ে খোঁজ পেয়েছেন এই নতুন, ভয়ংকর স্ট্রেনের। তিনি জানিয়েছেন, ল্যানসেট ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা নমুনাগুলির মিউটেশন অবাক করার মতো। তিনি বিশেষ করে স্পাইক প্রোটিনগুলির কথা উল্লেখ করেছেন, যার সাহায্যে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তিনি বলেন, “এটা ভয়ংকর! আমি যা দেখছিলাম তাতে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম! আমি সহকর্মীদের প্রশ্ন করছিলাম, প্রক্রিয়াটিতে কিছু ভুল হয়েছে নাকি! আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছিল! আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম, এই ভাইরাস মানবসভ্যতায় আবারও বড় ধাক্কা দিতে চলেছে।" নতুন স্ট্রেনটি আবিষ্কার করার পরেই রাকেল ভিয়ানা দ্রুত ফোন করেন জোহানেসবার্গের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি)-এ। সেখানে তাঁর সহকর্মী, ড্যানিয়েল আমোয়াকো-কে সবার আগে এই নতুন জিন সিকোয়েন্সের কথা জানান তিনি। ড্যানিয়েলকে তিনি বলেন, "আমার তো মনে হচ্ছে এটা করোনার একেবারে নতুন কোনও বংশ। এই জিনের সিকোয়েন্স আমি কীভাবে ভাঙব!" ভিয়ানা জানিয়েছেন, তাঁর পাঠানো আরও আটটি নমুনা নিয়ে ড্যানিয়েল এবং এনআইসিডি-র বিশেষ বিজ্ঞানী দল চালান। সব কটিতেই একই বদল ধরা পড়েছে জিনের। রাকেল জানিয়েছেন, এই বদল এতই উদ্ভট ছিল যে ড্যানিয়েল ও তাঁর অন্য সহকর্মীরাও ভেবেছিলেন, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। তার পরে তাঁরা আরও খতিয়ে দেখে, প্রতিটি স্টেপ পুঙ্খাণুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করে বোঝেন, নতুন এই মিউট্যান্টই এখন সবচেয়ে বড় ত্রাস, এতে কোনও ভুল নেই। এর পরেই এনআইসিডি-র তরফে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্য বিভাগে এবং অন্যান্য ল্যাবরেটরিগুলিকে এই সিকোয়েন্সিং-এর কথা জানায়। পরীক্ষানিরীক্ষা শুরু হয় সমস্ত জায়গাতেই। এর পরে একই রকম ফলাফল আসতে শুরু করে সব জায়গা থেকে। সমস্ত তথ্য জানানো হয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তথা হু-কেও। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে। পর্যটনের খাতায় কালো দাগ পড়েছে এই দেশের নামের পাশে। বিধিনিষেধ তুঙ্গে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও আতঙ্ক যে একটুও কম নয়, তা বলাই বাহুল্য। তবে এই ওমিক্রনকে বিশ্লেষণ করে একটা অন্য দিক খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, এই ভাইরাসের সংক্রমণের হার অনেক বেশি। তবে এর প্রভাবে অসুস্থতার মাত্রা খানিকটা কম বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই ওমিক্রন যদি কম বিপজ্জনক হয় অথচ বেশি ছোঁয়াচে হয়ে ওঠে, তাহলে ওমিক্রন ডেল্টা স্ট্রেনকে সরিয়ে প্রধান সংক্রামক স্ট্রেন হয়ে উঠবে। এটি ইতিবাচক বলেই মনে করছেন সকলে। তবে এর পাশাপাশি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠেছে। যেমন, বয়স বেশি হলে অন্যান্য অসুস্থতা থাকলে এই ভাইরাস কেমন প্রভাব ফেলবে, ভ্যাকসিন কতটা রুখতে পারবে এই নতুন স্ট্রেন-- ইত্যাদি। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই প্রশ্নগুলির উত্তর স্পষ্টতর হয়ে যাবে তাঁদের কাছে।