শেষ আপডেট: 20th September 2024 17:24
সুমন বটব্যাল
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল চুরি থেকে আরজি করে নির্যাতিতা ডাক্তারি ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের মামলা। রাজ্যের কতগুলি মামলা রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে? তদন্তের ক্ষেত্রে সিবিআইয়ের ট্র্যাক রেকর্ডই বা কেমন?
পরিসংখ্যান বলছে, সিংহভাগ মামলায় ঝুলে রয়েছে। যেগুলির নিষ্পত্তি হয়েছে, তারও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল সাক্ষীরা শেষ পর্যন্ত বিরূপ হয়ে যাওয়ায় অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস হয়ে গিয়েছে।
যে প্রসঙ্গ টেনে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, "২০ বছর হয়ে গেল, এখনও ওরা রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরির কিনারা করতে পারল না।"
রাজ্যের ঠিক কতগুলি মামলা রয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার অধীনে?
এ ব্যাপারে দুটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল, গত ২০ বছরে রাজ্যের ৯১১টি তদন্তের দায়িত্বে এখনও পর্যন্ত রয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। তারমধ্যে ১১২টি মামলা ঝুলে রয়েছে নানা কারণে।
অন্যদিকে সম্প্রতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে সিবিআই উদ্দেশে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আপনারা এখানে স্থায়ী বাড়ি কেন নিচ্ছেন না? নেওয়া উচিত। আপনাদের হাতে তো হাজারের উপর মামলা রয়েছে, নাকি?’ জবাবে সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেছিলেন, ‘৫০০-র বেশি মামলা রয়েছে।’
রবি ঠাকুরের নোবেল চুরি, গড়বেতায় ছোট আঙারিয়া গণহত্যা, নন্দীগ্রাম, তাপসী মালিক হত্যাকাণ্ড, লালগড়ের নেতাইয়ে গুলি কাণ্ড, সারদা-নারদা থেকে নিয়োগ দুর্নীতি, বগটুই গণহত্যা, সর্বশেষ আরজি কর, রাজ্যের একাধিক মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে।
২০২২ সালের ২১ মার্চ বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে বোমা মেরে খুন করা হয়েছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখকে। পাল্টা হিসেবে ভাদুর অনুগামীরা ওই রাতেই পাশের বগটুই গ্রামে পরপর বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। দগ্ধ হয়ে মারা যান ১০জন। সম্প্রতি ওই মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আনারুল-সহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনও হয়েছে।
তবে মূল সাক্ষীদের বিরূপ হতে দেখে গত অগস্টে আদালত চত্বরে নিজেদের অসহায়তা চেপে রাখেননি সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী। বলেছিলেন, "অনেকে সিবিআই তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু মামলার মূল সাক্ষীরা যদি প্রতিকূলে চলে যান, তাহলে আমাদের কী করার আছে!"
পার্থবাবুর কথার সঙ্গে মিল রয়েছে সিবিআইয়ের ট্র্যাক রেকর্ডের। সিংহভাগ মামলার তদন্তেই সিবিআইয়ের ফলাফল আশানুরূপ নয়। যে কারণে অতীতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে 'খাঁচায় থাকা তোতাপাখি'র সঙ্গে তুলনা করতেন রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই।
তবে একথাও ঠিক, বাংলা তো বটে সারা দেশের যেকোনও প্রান্তে বড় কোনও ঘটনা ঘটলে সেখানকার মানুষ এখনও সবার প্রথম সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ থাকেই। যে কারণে ট্র্যাক রেকর্ডের দিক থেকে আহামরি কোনও ফলাফল না থাকা সত্ত্বেও এখনও মুখে মুখে ঘোরে সিবিআই তদন্তের দাবি। হয়তো অনেকেই এখনও মনে করেন, সিবিআই চাইলে অসাধ্য সাধন করতে পারে!
আরজি কর মামলার ক্ষেত্রে সিবিআই কি পারবে নিজেদের পুরনো ট্র্যাক রেকর্ডকে ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়তে? সময়েই মিলবে সদুত্তর।