শেষ আপডেট: 11th January 2025 11:18
দ্য ওয়াল ব্যুরো: শীতের মরসুমে ঠোঁট ফাটা থেকে শুরু করে পা ফাটা, এসব সমস্যার জন্য বাঙালি ঘরে ঘরে জনপ্রিয় একটি নাম, "বোরোলিন"। দীর্ঘদিন ধরে এই টিনের সবুজ টিউবটি শুধু শুষ্ক ত্বকের সমস্যাই সমাধান করেনি, ত্বকের যে কোনও সমস্যার জন্যই ছিল এক অলৌকিক সমাধান। ঋতুপর্ণ ঘোষের বিখ্যাত ট্যাগলাইন, 'বঙ্গ জীবনের অঙ্গ' শব্দে বোরোলিনের প্রতি বাঙালির ভালবাসা যেন এক নিখুঁত সংজ্ঞা পেয়েছিল।
বোরোলিনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২৯ সালে, যখন গৌরমোহন দত্ত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস। ভারতের স্বাধিকার আন্দোলনের সময়ে ব্রিটিশ শাসকদের শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে বোরোলিন ছিল এক শক্তিশালী অস্ত্র। প্রথমদিকে বিদেশী পণ্যের বিরুদ্ধে দেশীয় পণ্য হিসেবে বোরোলিনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষত, এটি ছিল সস্তা, সহজলভ্য এবং বিশ্বস্ত।
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভের পর, বোরোলিন তার জাতীয়তাবাদী ভাবনা প্রকাশ করে প্রায় এক লাখ ক্রিমের টিউব বিনামূল্যে বিতরণ করেছিল। সময়ের সঙ্গে, বোরোলিন তার প্যাকেজিং আধুনিক করেছে, নতুন বিজ্ঞাপন তৈরি করেছে, কিন্তু কখনওই পণ্যের গুণমানের সঙ্গে আপোস করেনি। ফলে, আজও এই সবুজ টিউবটি বাঙালি সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
এত বছর পরেও, বোরোলিনের জনপ্রিয়তা কমেনি। যদিও অন্যান্য নামী ক্রিম বাজারে এসেছে, তবুও বোরোলিনের গৌরব অক্ষুণ্ণ রয়েছে। জিডি ফার্মাসিউটিক্যালস আজও তাদের পণ্যের গুণমান বজায় রাখাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়, যা তাদের ব্র্যান্ডকে একটি লেগাসি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
২০১৯ সালে তাদের বার্ষিক আয় ছিল ১৫৯ কোটি। যা এই লিজেন্ডারি ব্র্যান্ডের জন্য যথেষ্ট নয় বলে মনে হতে পারে, তবে তাদের কাছে মূল লক্ষ্য ব্যবসার বৃদ্ধি নয়, বরং পণ্যের সুরক্ষা এবং মান বজায় রাখা। বর্তমানে, এটি বাঙালির কাছে শুধু একটি প্রসাধনী নয়, বরং এক প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, যা নানা সমস্যার সমাধানে এখনও জাদুর মতো কাজ করে।