শেষ আপডেট: 5 March 2024 18:36
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। মঙ্গলবার দুপুরে এ ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠক থেকে সদ্য পদত্যাগী বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী ৭ মার্চ বিজেপিতে যোগ দেবেন তিনি। বিচারপতি এও জানান, রাজনীতিতে নামার বিষয়ে কয়েকদিন আগে বিজেপি নেতৃত্বর সঙ্গে তাঁর আলোচনাও হয়েছে।
বিকেলে তৃণমূল ভবনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে এ ব্যাপারেই বড় প্রশ্ন তুললেন কুণাল ঘোষ, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
কুণাল বলেন, "বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা থেকে স্পষ্ট, চেয়ারে থাকাকালীন ছুটি নিয়ে নিজে থেকে বিজেপির সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। এটা কীভাবে হতে পারে? চেয়ারে থাকাকালীন কীভাবে বিজেপির সঙ্গে দেখা করতে গেলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?"
কুণালের কথায়, "ছুটিটা বড় কথা নয়। বিচারপতির চেয়ারে বসে সরকারি বিরোধী রায়, পর্যবেক্ষণগুলোর পলিটিক্যাল মার্কেটিং করে কেরিয়ার গড়ার জন্য উনি যে বিজেপির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, তা তো ওঁনার কথা থেকেই স্পষ্ট।"
কুণাল বোঝাতে চেয়েছেন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় চেয়ারে থাকাকালীন পক্ষপাতদুষ্ট রায় দিতেন। সেকারণেই তাঁরা বারে বারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন।
আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "ওঁর ৮০ শতাংশ মামলা ডিভিশন বেঞ্চ বা শীর্ষ আদালত খারিজ করে দিয়েছে, নয় তো ওর ঘর থেকে মামলা সরিয়ে নিয়েছে। বিচারপতি হিসেবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচার ব্যবস্থার কলঙ্ক! উনি যেভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে রায় দিয়েছেন, তা কলকাতা হাইকোর্টের ডিগনিটিকে নষ্ট করেছে।"
এখানেই না থেমে কল্যাণের অভিযোগ, "বিচারের চেয়ারে বসে পাড়ার মস্তান, রকবাজদের মতো কথা বলেছেন। ওনার যে শিক্ষা সংস্কৃতি নেই, তা স্পষ্ট। সিপিএমের দয়াদাক্ষিণ্যে তৈরি। তরমুজ বিচারপতি। বিচারপতি থাকাকালীন ও নিজের পদের অপব্যবহার করে চাকরি পাইয়ে দিয়েছিল কয়েকজনকে। এখন নিজের কেরিয়ার তৈরির জন্য শুভেন্দুর পা ধরে বিজেপিতে গেছে।"
কল্যাণের আরও কটাক্ষ, "এক মাসে আগেও বাড়িতে কাল মার্ক্সের ছবি টাঙানো ছিল, এখন গিয়ে দেখুন হয়তো মোদীর ছবি টাঙানো আছে!"
চাকরিপ্রার্থীদের একাধিক মামলা আদালতে আটকে থাকার নেপথ্যে এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে দায়ী করে কুণাল বলেন, " কোথাও কেউ কোনও দুর্নীতি করে থাকলে অবশ্যই বিচারব্যবস্থায় সাজা হবে। কিন্তু উনি রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলকে পর্যুদস্ত করার জন্য চাকরিপ্রার্থীদের মামলাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঝুলিয়ে রেখেছেন।"
এই প্রসঙ্গে কুণাল টেনে এনেছেন নারদ মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারীর প্রসঙ্গও। সাংবাদিক বৈঠকে কুণাল বলেন, " উনি তো সিবিআইয়ের পরম ভক্ত। কথায় কথায় সিবিআই তদন্তের কথা বলেন। নারদ মামলায় শুভেন্দুকে কাগজে মুড়ে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। এক্ষেত্রে উনি সিবিআই তদন্তের কথা না বলে কীভাবে শুভেন্দুকে ক্লিনচিট দিলেন? আসলে রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করছেন।"
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে পদত্যাগী বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, "কীভাবে বিচার করতে হয় আমি দেখিয়ে দিয়ে এসেছি।"
ওই প্রসঙ্গ টেনে কুণালের অভিযোগ, "নিজের ইমেজ তৈরির জন্য বিচার ব্যবস্থাকে অপমানিত করেছেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।" তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় যে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল, তা তাঁর এদিনের সাংবাদিক বৈঠকের বক্তব্য থেকেও পরিষ্কার বলে দাবি করেছেন কুণাল।
আর কল্যাণের চ্যালেঞ্জ, "ও যেখান থেকে দাঁড়াক, ওকে হারাবই। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।"