শেষ আপডেট: 11th September 2020 18:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিদেশি অ্যাপাচে ও চিনুক কপ্টারের থেকেও বেশি দক্ষ। উঁচু পাহাড়ে নজরদারি চালাতে পারে। দিনে-রাতে যে কোনও সময় এবং আবহাওয়ার যে কোনও পরিস্থিতিতেই কাজ করতে পারে এই ‘লাইট ইউটিলিটি হেলিকপ্টার’ (LUH) । দেশের সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেডের (হ্যাল) তৈরি এই কপ্টার এবার লাদাখ সীমান্তে পাঠানোর তোড়জোড় করছে ভারতীয় বায়ুসেনা।
উঁচু পাহাড়ি এলাকায় বিশেষত হিমালয় পার্বত্য এলাকায় এই কপ্টার কীভাবে কাজ করতে পারে তার প্রদর্শন করেছে হ্যাল। লেহ এয়ারবেস থেকে পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৩৩০০ মিটার উচ্চতায় চক্কর কেটে দেখিয়েছে হ্যালের এই লাইট ইউটিলিটি হেলিকপ্টার। প্রচণ্ড ঠান্ডা দিনে ও রাতেও এই কপ্টারের টেস্ট ফ্লাইট করেছে বায়ুসেনা।
হ্যালের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ৫০০০ মিটার উচ্চতায় দৌলত বেগ ওল্ডির অ্যাডভান্সড ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডে সহজেই অবতরণ করতে পারবে এই হেলিকপ্টার। সিয়াচেনের দুটি হেলিপ্যাডেও ওঠানামা করার ক্ষমতা আছে এই কপ্টারের। যে কোনও দুর্গম পাহাড়ি খাঁজের কাছাকাছি নেমে এসে নজরদারি চালাতে পারবে এই কপ্টার। ওজনে হাল্কা হওয়ায় এর গতিও বেশি এবং খুব দ্রুত এই কপ্টার উড়িয়ে শত্রুঘাঁটির খবর নিয়ে আসতে পারবেন বায়ুসেনার পাইলটরা।
লাইট ইউটিলিটি হেলিকপ্টার ডিজাইন করেছে হ্যালের রোটারি উইং রিসার্চ অ্যান্ড ডিজাইন সেন্টার। হ্যালের চেতক ও চিতা হেলিকপ্টারের আপগ্রেডেড ভার্সন হল লাইট ইউটিলিটি হেলিকপ্টার। ১৩৭টি এমন কপ্টার বানিয়েছে হ্যাল যার মধ্যে ৬০টি কিনেছে বায়ুসেনা। হ্যাল জানিয়েছে, লাদাখ সীমান্ত সংঘাতের আবহে আকাশসীমাকে আরও সুরক্ষিত রাখতে এই লাইট কপ্টারকেই আরও উন্নত করে তোলা হয়েছে। এর নতুন ভ্যারিয়ান্টই পাঠানো হবে বায়ুসেনার কাছে।
তিন টন ওজনের এই কপ্টারে রয়েছে টার্বোমেকা শক্তি টার্বোশ্যাফ্ট ইঞ্জিন। ৫০০ কিলোমিটার অবধি কপ্টারকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে এই ইঞ্জিন। ৫০০ কেজির বেশি ওজন বইতে পারে এই লাইট ইউটিলিটি কপ্টার। ২০১০ সালে হ্যাল ঘোষণা করেছিল দেশীয় প্রযুক্তিতেই এমন হাল্কা ওজনের দ্রুত গতির কপ্টার বানাচ্ছে তারা। কোনও বিদেশি সংস্থার সাহায্য ছাড়াই নিজেদের প্রযুক্তিতেই এই কপ্টার বানিয়েছে হ্যাল। এই কপ্টারের গতি ঘণ্টায় ২৩৫ কিলোমিটার থেকে সর্বোচ্চ ২৬০ কিলোমিটার। দুই চালকের আসন আছে কপ্টারে, তাছাড়া আরও ৬ জনের বসার মতো জায়গা আছে। এর গ্লাস ককপিটে রয়েছে স্মার্ট ককপিট ডিসপ্লে সিস্টেম (SCDS), যে কোনও গোপন অভিযানের সময় কাজে লাগতে পারে। নজরদারি চালানো, মেডিক্যাল সার্ভিস ও যে কোনও উদ্ধারকাজেও এই কপ্টার ব্যবহার করতে পারে ভারতীয় বাহিনী।
প্যাঙ্গং লেকের উত্তর ও দক্ষিণে ক্রমেই তৎপর হয়ে উঠছে চিনের সেনা। অন্যদিকে, আকসাই চিন, ডোকলামের সীমান্তে নতুন করে সামরিক পরিকাঠামো, হেলিপ্যাড তৈরি হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, ট্যাঙ্ক, প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র-সহ মোটর রাইফেল ডিভিশন মোতায়েন করার কাজ চলছে ওই এলাকাগুলিতে। আকসাই চিন থেকে কারাকোরাম পাস হয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে পড়তে পারে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। তাই দৌলত বেগ ওল্ডিতে মোতায়েন করা হয়েছে টি-৯০ ভীষ্ম, টি-৭২ ট্যাঙ্ক। রাতের বেলা দৌলত বেগের পাহাড়ি এলাকার প্রায় ১৬ হাজার ফুট উপর দিয়ে চক্কর কাটছে চিনুক অ্যাটাক কপ্টার। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্রতি মুহূর্তে চিনা বাহিনীর উপর সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কমব্যাট এয়ার পেট্রলিং-এর জন্য নামানো হয়েছে চিনুক কার্গো হেলিকপ্টার, আ্যাপাচে অ্যাটাক হেলিকপ্টার, মিরাজ-২০০০ ফাইটার এয়ারক্রাফ্ট, মিগ-২৯ ফাইটার জেটের নয়া ভার্সন এবং নৌসেনার নজরদারি বিমান পি-৮১ এয়ারক্রাফ্ট। বায়ুসেনা সূত্রে খবর, রাতের বেলা পাহাড়ি এলাকায় নজরদারি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্য অ্যাপাচে ও চিনুক কপ্টারকে কাজে লাগানো হয়েছে। চুসুল এলাকায় নজরদারি চালাচ্ছে অ্যাপাচে, অন্যদিকে দৌলত বেগ ওল্ডিতে রাতের বেলা চক্কর কাটছে চিনুক। চিনুক কপ্টারের সিএইচ-৪৭এফ ভ্যারিয়ান্ট ভারতে পাঠিয়েছে আমেরিকা। এই ভ্যারিয়ান্টে রয়েছে মাল্টি-ফাংশন ডিসপ্লে, মুভিং ম্যাপ ডিসপ্লে, ডিজিটাল মোডেম, ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম। দিনে ও রাতের যে কোনও সময় কাজ করতে পারে চিনুক। চিনুকের সঙ্গে চিনা সেনার গতিবিধির উপর নজর রাখছে অ্যাপাচে কপ্টার। এএইচ অ্যাপাচে-৬৪ কপ্টারকে বলা হয় বোয়িং অ্যাপাচে অ্যাটাক কপ্টার।