শেষ আপডেট: 31st December 2021 06:09
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতে নতুন দুটি ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পেয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কর্বেভ্যাক্স ও কোভোভ্যাক্স ভ্যাকসিনে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ড্রাগ কন্ট্রোল। এই দুই নতুন ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি আলাদা, এর ফর্মুলাতেও আছে এমন অভিনবত্ব যে কোভিডের মতো মারাত্মক ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করার ক্ষমতা রাখে। ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের আশা, নতুন দুই ভ্যাকসিন ডেল্টা ও ওমিক্রন ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকরী হবে।
এখন দেখে নেওয়া যাক নতুন দুই ভ্যাকসিন কেমন, কীভাবে তৈরি হয়েছে।
পুরনো ফর্মুলা, উপকারি ছত্রাক দিয়ে তৈরি ভ্যাকসিন কর্বেভ্যাক্স
সার্স-কভ-২ ভাইরাসের রিসেপটর ডোমেনকে খুঁজে বের করতে পারে এই ভ্যাকসিন। তারপর ভাইরাসের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর জন্য এই ভ্যাকসিনও তৈরি হচ্ছে বিশেষ ফর্মুলায়। কর্বেভ্যাক্স বানিয়েছে বায়োলজিক্যাল ই। দেশের নামী ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলির মধ্যে প্রথম সারিতেই আছে বায়োলজিক্যাল ই। ১৯৫৩ সালে হায়দরাবাদে তৈরি হয়েছিল এই বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি। দেশের সবচেয়ে পুরনো বেসরকারি বায়োলজি ফার্মগুলির একটি।
১৯৮০ সালে হেপাটাইটিস বি ভাইরাস প্রতিরোধী যে ভ্যাকসিন বানিয়েছিল এই সংস্থা সেই ফর্মুলাই নেওয়া হয়েছে কোভিড ভ্যাকসিন বানাতে। তবে ভাইরাস চিহ্নিত করতে এতে পিচিয়া প্যাস্তোরিস নামে ছত্রাক ব্যবহার করা হয়েছে। এই ছত্রাক মানুষের শরীরের কোনও ক্ষতি করে না। তবে ভাইরাল প্রোটিন চিহ্নিত করতে পারে।
ফাইজার ও মোডার্না আরএনএ টেকনোলজিতে টিকা বানিয়েছে। যেখানে ভাইরাল প্রোটিনের জিনগত তথ্য আরএনএ (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড)-এর মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হচ্ছে। মানুষের দেহকোষে ঢুকে যা ভাইরাল প্রোটিনের নকল করবে এবং ইমিউন কোষগুলিকে (বি-কোষ ও টি-লিম্ফোসাইট কোষ) সক্রিয় করে রোগ প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তুলবে।
কর্বেভ্যাক্স ভ্যাকসিনও তৈরি হয়েছে করোনার স্পাইক দিয়ে, তবে স্পাইক প্রোটিনের কিছু অংশ সরাসরি ব্যবহার করে টিকা বানানো হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, ভাইরাল স্পাইক নেওয়া হয়েছে মানে ভয়ের কারণ নেই। মানুষের শরীরে ঢুকে এই প্রোটিন প্রতিলিপি তৈরি করে সংক্রমণ ছড়াবে না। উল্টে শরীরে ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করে তুলবে। অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি হবে যাতে শরীরও এই ধরনের ভাইরাল প্রোটিনকে চিনে রাখতে পারবে ও তার প্রতিরোধে নিজের সুরক্ষা কবচ তৈরি করবে।
ভাইরাস দিয়েই ভাইরাসকে মারে কোভোভ্যাক্স
প্রোটিন ভ্যাকসিন কোভোভ্যাক্স। এই টিকার ফর্মুলা মার্কিন কোম্পানি নোভোভ্যাক্সের তৈরি। ভারতে এই টিকা তৈরি ও ট্রায়াল করেছে পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট।
করোনাভাইরাসের জিনের এমন একটা অংশকে বেছে নিয়ে এই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে যা ভাইরাল প্রোটিনকে চিনে রাখতে পারে। সেই জিনের অংশ ব্যাকুলোভাইরাস নামে এক ধরনের ভাইরাসে ঢোকানো হয়েছে। এই ব্যাকুলোভাইরাস কীটপতঙ্গের শরীরে সংক্রমণ ছড়ায়। এটিকে গবেষণাগারে বিশুদ্ধ করে তবেই ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। মথের কোষে ভ্যাকসিন ইনজেক্ট করে দেখা গেছে সেটি এমন প্রোটিন তৈরি করে যা সার্স-কভ-২ ভাইরাসেরই মতো। শরীর এই প্রোটিন চিনে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। অ্যাডাপটিভ ইমিউন রেসপন্স তৈরি হয় শরীরে।
ভ্য়াকসিনের কার্যক্ষমতা বাড়াতে ম্যাট্রিক্স এম নামক অ্যাডজুভেন্ট যোগ করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিন করোনার স্পাইক প্রোটিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করতে পারে। দেহকোষের ACE-2 রিসেপটরের সঙ্গে খুব তাড়াতাড়ি যুক্ত হতে পারে। শরীরে ইনজেক্ট করলে খুব তাড়াতাড়ি দেহকোষের রিসেপটরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। ফলে করোনার স্পাইক প্রোটিন আর দেহকোষের রিসেপটরকে খুঁজেই পাবে না। কোষে ঢুকতে না পারলে সংক্রমণ ছড়াতেও পারবে না ভাইরাস।