দ্য ওয়াল ব্যুরো: করোনা মহামারীর দাপটে আমেরিকার অবস্থা ক্রমেই শোচনীয়। চারদিকে মৃত্যুমিছিল। স্বাভাবিক ভাবেই খারাপ অবস্থা সেখানকার সংশোধনাগারগুলিরও। খবর মিলেছে, মারা গেছেন বেশ কিছু বিচারাধীন বন্দিও। এই অবস্থায় মানসিক চাপ বাড়ছে তাঁদের। অনেকেই নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন।
এরকমই নিউ ইয়র্কের সিংসিং বন্দিশালায় রয়েছেন এক বিচারাধীন বন্দি ফ্রান্সিসকো হার্নান্দেজ। কয়েক দিন আগেই করোনার কারণে হারিয়েছেন জেলের সঙ্গীকে। তার পরেই খবর পেয়েছেন একই অসুখে আক্রান্ত তাঁর মাও। অবস্থা ভাল নয়। আশঙ্কা, হয়তো হয়ে উঠবে না শেষ দেখা। অথচ উপায় নেই। জেলের ভিতরেই আর পাঁচ জন কয়েদীর সঙ্গে মাস্ক সেলাই করে নিজেকে ভুলিয়ে রাখছেন তিনি।
আমেরিকায় যে মাস্ক ব্যবহৃত হচ্ছে তার একটা অংশ এই বন্দিদেরই উৎপাদন। জেলে সাধারণত নানারকম সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখা হয় বন্দিদের। বাগান করা, ঝাড়পোঁছ করা, ছবি আঁকা, পড়াশোনা করা-- সবই চলে। এখন সময়ের প্রয়োজনে সকলকে দিয়েই মাস্ক তৈরি করাচ্ছেন জেল কর্তৃপক্ষগুলি।
বছর ২০ আগে একটি হত্যার চেষ্টার মামলায় ফ্রান্সিসকোর শাস্তি হয়েছিল। জেলে যাওয়ার আগে মাকে কথা দিয়েছিলেন, ফিরবেন সম্পূর্ণ অন্য একজন মানুষ হয়ে। মাথা উঁচু করে বাঁচবেন এই পৃথিবীর বুকে। তাই জেলে অনেক পড়াশোনাও করেছেন ফ্রান্সিসকো। আর তিন বছর পরেই তাঁর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।
মুক্তি হয়তো মিলবে, কিন্তু মাকে আর হয়তো দেখা হবে না শেষবারের জন্য। কোভিড ১৯ কেড়ে নিতে পারে তাঁর মায়ের প্রাণ। দিনরাত মাস্ক সেলাই করতে করতে এই চিন্তাই অস্থির করেছে তাঁকে।
জানা গেছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে ফ্রান্সিসকোর মা অ্যান্টোনিয়া ম্যাকার্থি নিউ ইয়র্কের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন করোনা সংক্রমণ নিয়ে। এমনিতেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা আগে থেকেই ছিল তাঁর। তার ওপরে এই ভাইরাসের আক্রমণ সামলানো বেশ কঠিন হয়ে উঠছে।
জেল সূত্রের খবর, ফ্রান্সিসকো জানিয়েছেন, তিনি বারবার অনুররোধ করেছিলেন মায়ের সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেওয়ার জন্য। আইনজীবীরও সাহায্য নিয়েছিলেন, অন্তত একটিবারের জন্য ভিডিও কলের অনুমতিও যদি জোটে! কিন্তু কিছুতেই কাজ হয় নি। অনুমতি মেলেনি। আর কখনও দেখা হবে কি মায়ের সঙ্গে, জানেন না ফ্রান্সিসকো।
ফ্রান্সিসকো একা নন। আরও অনেক বন্দি জানিয়েছেন, এই মহামারীর সময়ে তাঁরা খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। সবচেয়ে ভয়ের ব্যাপার হল, সংশোধনাগারগুলিতেও এই মহামারীর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই সময় জেলে নিজের ঘরে বসে রুমাল, টি শার্ট-এর কাপড় দিয়ে মাস্ক বানাচ্ছেন তাঁরা। যদিও জেলে নিজেদের জন্য মাস্ক, স্যানিটাইজার, গ্লাভস কিছুই পাননি বেশিরভাগ বন্দি।