শেষ আপডেট: 28th October 2023 18:39
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: ৭৭ বছর ধরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমায় আনগুনা গ্রামে প্রকাশিত হয়ে আসছে হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।
স্মার্ট ফোনের যুগে যাবতীয় লেখালেখিতেও লেগেছে ডিজিটালইজেশনের ছোঁয়া। তবুও সেই পথে না গিয়ে প্রতি কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমায় হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করে আসছেন একদল সাহিত্যপ্রেমী। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় এবারও প্রকাশ পেল ‘প্রভাত সাহিত্য পত্রিকা’। এই পত্রিকার জন্যই রায়না থানার অখ্যাত গ্রাম আনগুনার খ্যাতি ছড়িয়েছে গোটা রাজ্যে। নামী দামি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিবছর ঝাঁ চকচকে শারদ সংখ্যা প্রকাশ করে পাঠকদের নজর কাড়ে। কিন্তু আনগুনা গ্রামের সাহিত্যপ্রেমীদের হাতে লেখা এই সাহিত্য পত্রিকার কদর আজও নিজ গুণেই অটুট। বছর যত গড়াচ্ছে, ততই বাংলা সাহিত্য দুনিয়ায় বেড়ে চলেছে “প্রভাত সাহিত্য পত্রিকার” পরিচিতি ও খ্যাতি।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, আট ইঞ্চি বাই বারো ইঞ্চি মাপের প্রভাত সাহিত্য পত্রিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা থাকে দু’শোরও বেশি। তাতে থাকে রং বেরং এর আঁকিবুকি। নামজাদা কবি ও সাহিত্যিক থেকে শুরু করে একেবারে নবাগতদের হাতে লেখা কবিতা ও গল্পগুচ্ছ স্থান পায় এই সাহিত্য পত্রিকায়। পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত আনগুনা গ্রামের বাসিন্দারা জানালেন, ১৯৪৭ সালে আনগুনা গ্রামের কয়েকজন সাহিত্যপ্রেমী মানুষ প্রথম এই সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছিলেন । তারপর থেকে একই ধারায় এই সাহিত্য পত্রিকার প্রকাশিত হয়ে আসছে।
প্রতি বছর কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন সন্ধ্যায় গ্রামের মন্দিরে লক্ষ্মীদেবীকে সাক্ষী রেখে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশিত হয় ’শারদীয়া প্রভাত সাহিত্য পত্রিকা’। এবছরও শনিবার লক্ষীপুজোর দিন সন্ধ্যায় হাতে লেখা ’প্রভাত’ সাহিত্য পত্রিকার ৭৭ তম সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে। রাজ্যের শষ্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমানের রায়নার প্রত্যন্ত গ্রাম আনগুনা। কৃষি সম্বৃদ্ধ এই গ্রামের বাসিন্দাদের আরাধ্য দেবী হলেন লক্ষ্মী। কোজাগরী পূর্ণিমায় এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে পূজিতা হন লক্ষ্মীদেবী। গ্রামের মূল মন্দিরেও লক্ষ্মীদেবীর পুজোর আয়োজন করা হয়। কর্মসূত্রে বছরের অন্য দিনগুলিতে গ্রামের অনেককেই বাইরে কাটাতে হয়। তবে সারা বছর যে যেখানেই কাটান না কেন লক্ষ্মীপুজোর আগে সবাই ফিরে আসেন গ্রামে। তারা সবাই মাতোয়ারা হন ধনদেবীর আরাধনায়। তারপর লক্ষ্মীদেবীকে সাক্ষী রেখে প্রকাশিত হয় ’প্রভাত সাহিত্য পত্রিকা’।
পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত আনগুনা গ্রামের বাসিন্দা অমিত রায় বলেন, “কাজি নজরুল ইসলাম, কালীদাস রায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন, সত্যজিৎ রায় প্রমুখ খ্যাতনামা লেখক ও সাহিত্যিকদের লেখনিতে সম্বৃদ্ধ হয়েছে প্রভাত সাহিত্য পত্রিকা। আগে এই লেখকদের নিজের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিও প্রকাশিত হয়েছে এই সাহিত্য পত্রিকায়।”
লক্ষ্মী পুজোর অনেক আগে থেকেই শুরু হয় প্রভাত সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনার কাজ। উদ্যোক্তারা জানালেন, লেখক ও সাহিত্যিকরা যে লেখা পাঠান তা কোন ছাপাখানায় পাঠানো হয় না। কম্পিউটারে টাইপ করেও লেখা হয় না। পত্রিকা প্রকাশনার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা নির্দিষ্ট মাপে কাটা আর্ট পেপারের উপর তা লেখেন। শুধু লেখাই নয়, তাকে দৃষ্টি নন্দন করে তোলা হয় রং ও তুলির আঁকিবুকিতে। দীর্ঘকাল ধরে এইভাবেই প্রকাশিত হয়ে আসা সাহিত্য পত্রিকাগুলি সযত্নে সাজানো রয়েছে ক্লাবের আলমারিতে। যা অক্ষত রাখতে সারাটা বছরই তৎপর থাকেন ক্লাবের সদস্যরা।
এবারও অক্লান্ত পরিশ্রম করে পত্রিকা প্রকাশনার কাজ সম্পূর্ণ করেছেন আনগুনা গ্রামের একঝাঁক তরুণ তরুণী। ঋতম বন্ধু, সায়ন বারিক, সংগীতা বন্ধু, শিল্পা কারফা, দীপঙ্কর রায়রা দাবি করলেন, ডিজিটাল প্রিন্টিংয়ের হাত ধরে মুদ্রণ শিল্পে যত উন্নতিই ঘটুক না কেন তাঁদের হাতে লেখা সাহিত্য পত্রিকার আভিজাত্যটাই আলাদা। বাংলা সাহিত্যপ্রেমীদের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছে এই পত্রিকা।