শেষ আপডেট: 18th June 2024 14:11
দ্য ওয়াল ব্যুরো, পূর্ব বর্ধমান: সোমবার ছিল কুরবানির ইদ। উৎসবের দিনে পরিবারের সঙ্গে কাটাবেন বলে সেই অভিশপ্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় উঠেছিলেন গুসকরার বিউটি বেগম। ফোন করে স্বামীকে বলেছিলেন, ট্রেনে উঠে পড়েছেন। নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে যাবেন। কিন্তু গভীর রাতে বাড়িতে পৌঁছল বিউটির নিথর দেহ। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় পরিবারের সদস্যকে হারিয়ে আত্মীয়দের প্রশ্ন, ক্ষতিপূরণ দিয়ে আর কতদিন দায় এড়াবে রেল?
ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটে, পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইটাচাঁদার বাড়িতে এল বিউটি বেগমের নিথর দেহ। স্বজন হারানো কান্নায় ভেঙে পড়েন সকলে। উৎসবের দিনে বিউটি বেগমের পরিবারে ছিল শুধুই বিষাদ।
মৃতের স্বামী হাসমত শেখ জানিয়েছেন, কর্মসূত্রে তিনি জলপাইগুড়িতে থাকেন। বিউটি গুসকরার বাড়িতেই থাকতেন। গত মাসে তাঁর কাছে গিয়েছিলেন বিউটি। কুরবানির ইদের জন্য গুসকরার বাড়িতে উৎসবের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতেই আসছিলেন বিউটি। হলদিবাড়ি এক্সপ্রেসে ট্রেনের টিকিট কাটা ছিল কিন্তু সেই ট্রেন বাতিল হয়ে যায়। তাই হাসমত বিউটিকে মঙ্গলবার বাড়িতে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু বিউটি তাতে রাজি হননি। তিনি উৎসবের দিনেই বাড়ি পৌঁছতে চেয়েছিলেন। তাই জলপাইগুড়ি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরায় উঠে পড়েছিলেন। মাঝরাস্তায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
হাসমত জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই তিনি এক সহকর্মী শেখ তারিক আনোয়ারকে নিয়ে জলপাইগুড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। সেখানে গিয়ে চারিদিকে বিউটির খোঁজ করতে থাকেন। পুলিশের তাদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিতে বলে। এমার্জেন্সি ওয়ার্ডের তন্নতন্ন করে স্ত্রীকে খুঁজছিলেন হাসমত। পরে হেল্প ডেস্কে বিউটির ছবি দেখানোর পরে তাঁরা জানতে পারেন তাঁর দেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা রয়েছে। সেখানে গিয়ে মৃত স্ত্রীকে শনাক্ত করেন হাসমত।
জলপাইগুড়ি থেকে স্ত্রীর দেহ বাড়িতে আনার অভিজ্ঞতা নিয়ে রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন হাসমত। শোকার্ত হাসমত বলেন, "জলপাইগুড়ি থেকে দেহ নিয়ে আসতে হয়েছে নিজেদের দায়িত্বে। রেল থেকে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত দেওয়া হয়নি।"
সরকার ও রেলের গাফিলতি নিয়ে মুখ খুলেছে বিউটি বেগমের ভাই শেখ আনোয়ারও। তিনি বলেন "সারাদিন ধরে দিদিকে খুঁজে বেড়িয়েছি, কিন্তু পাইনি। হাসপাতালে গিয়ে খোঁজার পর অবশেষে হাসপাতালের মর্গে দিদির দেহ দেখতে পাই। রাজ্য পুলিশ যদিও বা অল্প কিছু সাহায্য করেছে, রেলের তরফে থেকে কোনও সাহায্যই পাইনি, । এমনকী কোনও সদর্থক ব্যবহার করেনি তারা।"
পাড়া-প্রতিবেশীরা বলছেন, "একটা জীবনের দাম মাত্র কয়েক লাখ টাকা! এভাবে আর কতদিন যাত্রী নিরাপত্তা কথা শিকেয় তুলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে হিসাব মেলাবে ভারতীয় রেল।" মঙ্গলবার সারাদিন এই প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে স্বজনহারাদের মনে।